যমুনার বুকে স্বপ্নের বঙ্গবন্ধু রেলসেতু
খুলছে অর্থনৈতির সম্ভাবনার দুয়ার
যমুনার বুকে বঙ্গবন্ধু সেতুর সঙ্গে রেলওয়ে সেতু নির্মাণে উত্তরবঙ্গের যোগাযোগ ক্ষেত্রে নব দিগন্তের সুচনা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দেশের কোটি কোটি মানুষের স্বপ্ন বাস্তবায়ন হতে যাচ্ছে। অপর দিকে খুলছে দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনার দুয়ার। উত্তরাঞ্চলবাসীর জন্য যোগাযোগ ব্যবস্থা ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে আশীর্বাদ স্বরূপ হবে এ রেলসেতু।
দেশের মেগা প্রকল্পগুলোর মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতু। যেটির বাস্তবায়ন এখন দৃশ্যমান। বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতুর ৩শ’ মিটার উজানে সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইলে সেতুর দু’প্রান্তেই দিনরাত চলছে সেতুর নির্মাণ কাজ। ৪ দশমিক ৮০ কিলোমিটার দীর্ঘ ডুয়েল গেজে ডাবল ট্র্যাকসহ এ রেল সেতুর মোট ৫০টি পিলারের মধ্যে ইতিমধ্যেই ১০টি পিলারের কাজ শেষ হয়েছে এবং ৭ পিলারের কাজ সমাপ্তের পথে। বাকি কাজগুলো দ্রুত গতিতে এগিয়ে চলছে। জাপানের অর্থায়ন তাদের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ রেলসেতু নির্মাণের কাজ করছে।
স্বপ্নের রেলসেতু নির্মাণের ফলে দেশের সামগ্রিক অর্থনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে বলে মনে করেন সচেতন মহল। রেল বিভাগের তথ্য মতে, ডুয়েল গেজ ডাবল-ট্র্যাকের এ সেতুটি হবে দেশের সবেেচয় বড় রেলসেতু। এটি রাজধানীর সঙ্গে দেশের উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চলরে রেল যোগাযোগব্যবস্থা আরও সহজতর ও উন্নত করবে। এ ছাড়া ট্রেন শিডিউল বিপর্যয় কমাতেও এ সেতু সহায়তা করবে।
রেল সেতুটি বাস্তবায়িত হলে বিদেশ থেকে দেশে আসা মালবাহী ট্রেন রাজধানী ঢাকার সঙ্গে সরাসরি চলাচল করতে পারবে। এতে আমদানি-রফতানি খরচ কমে যাওয়াসহ বঙ্গবন্ধু সেতু ও মহাসড়কের উপর চাপ কমে আসবে।
বঙ্গবন্ধু সেতু ও রেল সেতুর পশ্চিমেই গড়ে উঠছে সিরাজগঞ্জ ইকোনমিক জোন ও বিসিক শিল্প পার্ক। এখানে উত্তরজনপদের ৭ লাখ মানুষের র্কমসংস্থান হবে। ইতিমধ্যেই এসব অঞ্চলে শিল্প কারখানা স্থাপনে আগ্রহ দেখিয়েছেন দেশি-বিদেশি শিল্প উদ্যোত্তারা। বঙ্গবন্ধু রেলসেতু নির্মাণ হলে এই শিল্পাঞ্চল থেকে রেলপথ, সড়কপথ, স্থলপথ ব্যবহার করে বিশ্বের যে কোন দেশে পণ্য পরিবহণ সহজ হবে। একই সাথে উত্তরবঙ্গে উৎপাদিত কৃষিপণ্যসহ বিভিন্ন পণ্যসামগ্রী পরিবহণও সহজ হবে।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব রেলওয়ে সেতুর প্রকল্প পরিচালক আল ফাত্তাহ মো. মাসুদুর রহমান বলেন, বর্তমানে বঙ্গবন্ধু সেতু দিয়ে ৩৮টি ট্রেন চলাচল করে। নতুন রেলসেতু নির্মিত হলে ডাবল লাইনে ১২০ কিলোমিটার গতিতে মালবাহীসহ ৬৮টি ট্রেনে চলাচল করার পাশাপাশি বিভিন্ন দেশের সঙ্গে ট্রেনে চলাচলের আন্তঃসংযোগও সৃষ্টি হবে। তিনি আরও জানান, ইতিমধ্যেই এ রেল সেতুর ৩৪ শতাংশ কাজ বাস্তবায়িত হয়েছে। করোনার কারণে কাজ কিছুটা বিলম্ব হয়েছে এখন দ্রুত গতিতে কাজ চালিয়ে যাচ্ছি। ২০২০ সালের ২৯ নভেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৬ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে এ সেতুটির নির্মাণ কাজের ভিত্তিপ্রস্থর স্থাপন করেছেন। ২০২৪ সালের আগষ্ট মাসের মধ্যে এ সেতুর নির্মাণ কাজ শেষ হবে বলে ধারনা করা হচ্ছে।
এলএ/