মানিকগঞ্জ শহরের খালটি এখন ময়লার ভাগাড়
মানিকগঞ্জ শহরের একমাত্র খালটি রক্ষায় নানা সময়ে উদ্যোগ নিয়েও পৌরবাসীকে এর সুফল দেখাতে পারেনি পৌর কতৃপক্ষ। দীর্ঘদিন সংস্কার না করায় শহরের গুরুত্বপূর্ণ খালটি এখন শহরবাসীর দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যেখানে সারা বছর পানি প্রবাহমান থাকার কথা সেখানে ময়লাআবর্জনা ও পয়োনিষ্কাশন নালা যুক্ত করে ময়লার ভাগাড়ে পরিণত করা হয়েছে শহরের প্রাণকেন্দ্রের খালটিকে।
ভরা মৌসুমে পৌরসভা কয়েকবার ময়লা অপসরণ করলেও অল্প কিছুদিনের ব্যবধানেই তা আবার দুর্গন্ধ ভাগাড়ের স্তুপে পরিণত হচ্ছে। দখল, দূষণ ও পৌর কর্তৃপক্ষের অবহেলাতেই এ খাল আজ নির্জীব।
সময়ের ব্যবধানে নগর পিতার পরিবর্তন হয়েছে কিন্তু খালটিকে কেউই সচল করতে পারেনি। শহরের প্রাণকেন্দ্র দিয়ে প্রবাহমান ছয় কিলোমিটার দীর্ঘ খালটি মানিকগঞ্জ সদরের পশ্চিম বান্দুটিয়া থেকে শুরু হয়ে সোনাকান্দর এলাকায় গিয়ে শেষ হয়েছে। এর দুই প্রান্ত মিলেছে কালীগঙ্গা নদীতে।
প্রায় ৩০মিটার প্রস্থের খালটির দুপারেই সরকারি গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা ও আবাসিক এলাকা। রয়েছে স্কুল, কলেজ, অফিস-আদালত, থানা, মসজিদ, মাদরাসা। খালটির দুপাশে দখল করে নির্মাণ হয়েছিল শত-শত দোকান-পাট। গেল বছরের মাঝামাঝিতে খালের ওয়াকওয়ে দখল করে অবৈধ স্থাপনা অপসরণ করে পৌর কর্তৃপক্ষ। অবৈধ স্থাপনা অপসরণ হলেও এখনো ওয়াকওয়ের সীমানা নিশ্চিত করা যায়নি।
অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদের সময় পৌর কর্তৃপক্ষ নিশ্চিত করেছিল খালটির ওয়াকওয়ে দখলমুক্ত করে দুই লেনের সড়ক নির্মাণ করা হবে। এটি হলে মূল সড়কের যানজট অনেকটাই কমে আসবে। তখন থেকেই আশা দেখতে শুরু করে নগরবাসী। এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন হলে রক্ষা পেত খালটি, শহরের যানজন কমে আসত অনেকাংশে। কিন্তু সেই উদ্যোগ কবে নাগাদ আশার আলো দেখবে তা নিশ্চিত করে বলতে পারছে না কেউই।
সরেজমিনে দেখা গেছে, ঠেসে থাকা ময়লায় পানি প্রবাহের পথ বন্ধ। উৎকট দুর্গন্ধে চরম দুর্ভোগ পথচারীদের। জমে থাকা দুর্গন্ধযুক্ত পানিতে সৃষ্টি হয়েছে মশা-মাছির নিরাপদ আশ্রয়স্থল। হোটেল, রেস্তোরাঁগুলোর উচ্ছিষ্ট ময়লা ফেলা হচ্ছে খালটিতে।
মানিকগঞ্জ পৌরসভা কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০০৭ সালে প্রায় ৬ কোটি টাকা ব্যয়ে খালটির সংস্কার ও সৌন্দর্যবর্ধনের কাজ সম্পন্ন হয়। এডিবি, জিওবি ও ওপেকের আর্থিক সহায়তায় খালটির দুই পাড় সিসি ব্লক ও জিও টেক্স দিয়ে বাঁধানো হয়। খালের দুই পাড়ে চার ফুট চওড়া ওয়াকওয়ে, সারফেস ড্রেন ও পথচারীদের বসার জন্য নির্মাণ করা হয় বেঞ্চ। তবে নিম্নমানের কাজ করায় নির্মাণের কয়েক মাস পরেই একাধিক যায়গায় ধসে পড়ে সিসি ব্লক।
পথচারী কামাল উদ্দিন বলেন, এক সময় এ খাল ছিল স্রোতস্বিনী। সারা বছর পানি থাকত। খালের আশপাশের প্রতিটি বাড়ির সুয়ারেজ লাইন এখন এ খালে গিয়ে জুড়েছে। বাসা বাড়ির ময়লা-আবর্জনা ফেলার একমাত্র স্থানে পরিণত হয়েছে এটি। ফলে যা হওয়ার তাই হয়েছে।
পৌর বাসিন্দা বুলবুল আহমেদ জানান, পৌরবাসীর অবহেলার কারণে খালটি অনেক আগেই ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। খালটির একপাশে বেশ কয়েকটি রেস্টুরেন্ট গড়ে উঠেছে। যারা প্রতিনিয়ন বর্জ্য ফেলে দূষণ বাড়াচ্ছে। তাদের বিরুদ্ধে পৌরসভা কখনো ব্যবস্থা নেয় না।
তিনি আরো জানান, ওয়াকওয়ে যেটুকুও আছে তা ব্যবহার যোগ্য না। বাচ্চা-কাচ্চা নিয়ে হেঁটে যাওয়া যায় না। ওয়াকওয়েতে কেবল মানুষ আসে বিড়ি-সিগারেট খাওয়ার জন্য। আর আসে স্কুল-কলেজের বখাটে ছেলেপেলে আড্ডা দেওয়ার জন্য।
পৌর মেয়র রমজান আলী বলেন, ‘খালটিকে রক্ষায় দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। দুপারের অবৈধ স্থাপনা অপসরণ করা হয়েছে। যানযট কমাতে ওয়াকওয়ে ধরে রাস্তা করা হবে। অল্প দিনের মধ্যেই নগরবাসী এর সুফল পাবে।’
এসএন