ফুলবাড়ীতে গরুর ল্যাম্পি রোগে গোয়াল শূন্য
দিনাজপুরের ফুলবাড়ী উপজেলার শিবনগর ইউনিয়নের দাদুপুর, বাসুদেবপুর ও নূরপুর এই তিন গ্রামে গরুর লাম্পি স্কিন রোগের (এলএসডি) প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। এতে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন গরুর মালিকরা। সুস্থ গরুও কম দামে বিক্রি করতে বাধ্য হচ্ছেন তারা।
সরেজমিনে দেখা গেছে, উপজেলার দাদপুর গ্রামের স্বদেশ মহন্তের বাড়িতে ল্যাম্পি স্কিন রোগের আক্রান্ত হয়ে ৮ আগস্ট ব্রাহামা জাতের ১২০ কেজি ওজনের একটি এঁড়ে গরুর মৃত্যু হয়েছে। গরুটির সুস্থতার জন্য ফুলবাড়ী উপজেলা প্রাণিসম্পদ বিভাগের ভেটেনারি সার্জন ডা. নিয়মত আলীর তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা করিয়েও কোনো ফল পাওয়া যায়নি। পাঁচ দিনের মাথায় গরুটির মৃত্যু হয়েছে। পরে গোয়ালের অন্য তিনটি ফ্রিজিয়ান জাতের গরু বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করে দিয়েছেন। এতে করে আর্থিকভাবে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।
বাসুদেবপুর গ্রামের গবাদিপশুর মালিক সামসুল হক বলেন, তার ১২টি গরুর মধ্যে লাম্পি স্কিন রোগে (এলএসডি) পাঁচটি গরু আক্রান্ত হয়েছে। আক্রান্ত গরুর মধ্যে তিনটি গরুকে আলাদাভাবে মশারির নিচে রেখে চিকিৎসা করা হচ্ছে। বর্তমানে তার আক্রান্ত গরুগুলো কিছুটা সুস্থ হয়ে ওঠছে।
উপজেলা পশু সম্পদ দপ্তরে (পশু হাসপাতালে) এ ব্যাপারে যোগাযোগ করা হলে ডাক্তাররা তেমন গুরুত্ব না দেওয়ায় বাধ্য হয়ে স্থানীয় পশু চিকিৎসার সঙ্গে সম্পৃক্ত ব্যক্তিদের পরামর্শে স্থানীয় বাজার থেকে ইঞ্জেকশনসহ অ্যান্টিবায়োটিক ও প্যারাসিটামল ট্যাবলেট কিনে এনে আক্রান্ত গরুগুলোকে খাওয়াচ্ছেন। একই সঙ্গে কাঁচা হলুদের রস, খাবার সোডা ও করপুর মিশিয়ে গরুর শরীরে মালিশ করছেন।
একই গ্রামের আজিজুল ইসলামের ১২টি গরুর মধ্যে দুইটি গরু লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত। এ ছাড়াও নূরপুর গ্রামের আছির উদ্দিনের তিনটি ও গৌতম কুমার মহন্তের একটি গরু এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে।
গবাদিপশু মালিক আজিজুল ইসলামের ও গৌতম মহন্ত বলেন, লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু প্রথম দিকে কিছুই খেতে চায় না। শরীরে জ্বর আসে। দাঁড়িয়ে থাকতে পারে না। জ্বরের সঙ্গে সঙ্গে নাক-মুখ দিয়ে লালা বের হয়। পা ফুলে যায়। এরপর সারা শরীরে দেখা দেয় প্রচুর গুটি বা চাকা। এতে লোম উঠে যায় এবং ক্ষতের সৃষ্টি হয়। আর এই ক্ষত শরীরের চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ছে।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় দুই হাজার ৩২৫টি গরুর খামার রয়েছে। এরমধ্যে নিবন্ধন করা খামার ২৩টি। কৃষক পর্যায়ে গরু রয়েছে ১ লাখ ৫ হাজার ৬২৩ দেশি এবং শংকর জাতের গরু ৩৭ হাজার ৫৪০টি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রবিউল ইসলাম বলেন, এটি ভাইরাসজনিত সিজনাল চর্ম রোগ। এই রোগ মশা-মাছির মাধ্যমে ছড়ায়। কোনো গবাদি পশু এ রোগে আক্রান্ত হলে তাকে আলাদাভাবে মশারির নিচে রাখতে হবে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। যারা প্রাণিসম্পদ দপ্তরে যোগাযোগ করছেন তাদের গবাদিপশুকে চিকিসা প্রদানসহ পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।
এসএন