ইলিশের অভয়াশ্রমে থামছে না জাটকা-চাপিলা নিধন
ইলিশ অভায়শ্রমে নির্বিচারে চাপিলা ও জাটকা নিধন চলছে। প্রশাসনের সামনেই মেঘনার ইলিশ অভয়াশ্রম থেকে প্রতিদিন নিধন হচ্ছে এ জাতীয় সম্পদ।
মঙ্গলবার (৫ এপ্রিল) সকালে নগরীর পোর্ট রোড বাজারে সরেজমিনে দেখা যায় চাপিলা আর জাটকায় সয়লাব। মৎস্য বিভাগ এবং প্রশাসনের চোখের সামনেই চলে বেচা-কেনা।
এ সম্পদ রক্ষায় কাগজে-কলমে নানা বিধিনিষেধ থাকলেও বাস্তবে প্রয়োগ সামান্যই বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলেছেন, জেলে, আড়তদার ও মৎস্য বিভাগসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যোগসাজশেই লুণ্ঠন হচ্ছে এ জাতীয় সম্পদ। তবে ডাঙ্গায় কিছু তৎপরতা থাকলেও জাটকা নিধন বন্ধে নদীতে আরো নজরদারি বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, বরিশাল বিভাগে সরকারের তালিকাভুক্ত সাড়ে ৩ লাখ জেলে রয়েছে। তবে প্রকৃত সংখ্যা এর দ্বিগুণ। সুবিধাবঞ্চিত এসব জেলের পূনর্বাসনের আওতায় আনা গেলেই জাতীয় সম্পদ ইলিশের উৎপাদন কয়েকগুণ বাড়বে বলে মনে করেন তারা।
প্রজননের পর রেণু থেকে শুরু করে চাপিল এবং জাটকা সাইজের পরই পূর্ণাঙ্গ সাইজে পরিণত হয় ইলিশ। ইলিশের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য ১ মার্চ থেকে ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত দুই মাস অভয়াশ্রমে সব ধরনের মাছ ধরা নিষিদ্ধ করেছে সরকার।
এ ছাড়া ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত ৮ মাস ২৫ সেন্টিমিটারের কম আকারের (জাটকা) ইলিশ ধরায় রয়েছে নিষেধাজ্ঞা।
যদিও বরিশালের ৩টি অভয়াশ্রমে প্রতিদিন নির্বিচারে মাছ শিকার করছে হাজার হাজার জেলে। এসব জাটকা নদী এবং সড়কপথে ছড়িয়ে পড়ছে স্থানীয় সব বাজারে, পাচার হচ্ছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে।
জানা যায়, মেঘনার অভয়াশ্রম থেকেই চাপিলা ও জাটকা আহরিত হয়। ট্রলারে বরিশালের তালতলী এবং বাবুগঞ্জের আগরপুরে আসে এগুলো। সেখান থেকে সড়ক পথে বিভিন্ন বাজারে এবং দূর-দূরান্তে সরবরাহ করা হয়। এ সম্পদ রক্ষা করতে পারলে আগামীতে ইলিশে দেশ ভরপুর হবে বলে তিনি মনে করেন বরিশাল জেলা মৎস্য আড়তদার অ্যাসোসিয়েশনের কোষাধ্যক্ষ ইয়ার হোসেন সিকদার।
জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান জানান, জাটকা নিধন ঠেকাতে তারা তৎপর রয়েছেন। তবে জাটকা রক্ষার দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়। সবার সম্মিলিত উদ্যোগ ছাড়া এই জাতীয় সম্পদ রক্ষা করা যাবে না বলে মনে করেন তিনি।
বরিশাল সচেতন নাগরিক কমিটির (সনাক) সভাপতি অধ্যাপক শাহ সাজেদা বলেন, ‘ডাঙ্গায় জাটকা আটকের চেয়ে জাটকা নিধন বন্ধে নদীতে নজরদারি বাড়াতে হবে।’ তবে প্রকৃত জেলেদের যথা সময়ে সরকারি প্রণোদনা নিশ্চিত করার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গত বছর উৎপাদিত হয়েছে ৪ লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন ইলিশ। এর মধ্যে বরিশাল বিভাগের নদী-সাগর থেকে আহরিত হয়েছে ৩ লাখ ২৫ হাজার টন। দেশের অর্থনীতির সূচকে সার্বিক অগ্রগতির (জিডিপি) ১ ভাগ আসে এই ইলিশ থেকে।
এমএসপি