দুই চিনিকলে বন্ধ হয়ে আছে মদ উৎপাদন প্রকল্প
নর্থ বেঙ্গল ও ঠাকুরগাঁও চিনিকল দুটিতে নতুন করে অ্যালকোহলসহ নানা পণ্য উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা জটিলতায় তা বন্ধ রয়েছে। তবে নতুন করে মদ উৎপাদনের প্রকল্প হাতে নেওয়া হচ্ছে বলে জানান প্রতিষ্ঠান সংশ্লিষ্টরা।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প করপোরেশনের লক্ষ্যমাত্রা বছরে ৯০ লাখ লিটার অ্যালকোহল উৎপাদনের। এসব অ্যালকোহল বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে মোটা অংকের টাকা আয় হবে বলে আশাবাদ প্রতিষ্ঠান দুটির।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্যশিল্প করপোরেশনের চেয়ারম্যান (গ্রেড-১) মো. আরিফুর রহমান অপু বলেন, ‘নর্থ বেঙ্গল ও ঠাকুরগাঁও চিনিকলের আগের প্রকল্প বন্ধ রয়েছে। নতুন করে প্রকল্প নেওয়া হবে। এজন্য করা হবে ফিজিবিলি স্টাডি। কারণ প্রকল্প দুটি অনেক আগে অনুমোদন হলেও এ বাজেটে টেন্ডার আহ্বান করে পাওয়া যায়নি।
তিনি আরও বলেন, ‘দুটি চিনিকলে অ্যালকোহল উৎপাদনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। বিদেশে এসব অ্যালকোহলের প্রচুর চাহিদা। এজন্য নতুন করে ফিজিবিলিটি স্ট্যাডি করা হবে। বর্তমানে কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেডে অ্যালকোহল তৈরি হচ্ছে। এরই ধারাবাহিকতায় ঠাকুরগাঁও ও নর্থ বেঙ্গলে অ্যালকোহল উৎপাদন করা হবে। এসব প্রোডাক্ট বিদেশে পাঠিয়ে বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। এ ছাড়া ওষুধ তৈরির জন্যও কিছু অ্যালকোহল প্রয়োজন হয়। এসব পণ্যও উৎপাদন করব। শুধু চিনি বিক্রি করে লাভের মুখ দেখা সম্ভব নয়।
একমাত্র রাষ্ট্রীয় মদ উৎপাদন ও বাজারজাতকরণ প্রতিষ্ঠান কেরু অ্যান্ড কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড। স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতি অবলম্বনের মাধ্যমে উৎপাদন দ্বিগুণ করবে কোম্পানিটি। কারণ মদ উৎপাদন করে লাভের মুখ দেখছে প্রতিষ্ঠানটি। এরই ধারাবাহিকতায় নতুন নতুন পণ্যের ভিন্নতা আনা হবে নর্থ বেঙ্গল ও ঠাকুরগাঁও চিনিকলে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, ২০১৪ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ৩২৪ কোটি ১৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘নর্থ বেঙ্গল চিনিকলে কো-জেনারেশন পদ্ধতিতে বিদ্যুৎ উৎপাদন ও সুগার রিফাইনারি স্থাপন প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। গত বছরের জুনে প্রকল্পের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলে ৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা ব্যয়ের পর থমকে আছে প্রকল্পের কাজ। সর্বশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয় বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচিতে। এরপর একটি টাকাও বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ বন্ধ। যে উদ্দেশ্যে প্রকল্পটি নেওয়া হয় তা বাস্তবায়ন হয়নি, অথচ গচ্চা গেছে সরকারের ৮ কোটি ৯১ লাখ টাকা।
নর্থ বেঙ্গল চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আনিসুল আজম বলেন, বর্তমানে প্রকল্পের কাজ বন্ধ। নতুনভাবে শুরু করতে হবে। প্রকল্পটি যে বাজেটে অনুমোদন হয় সেই বাজেটে দরপত্র মিলছে না। প্রকল্প নতুনভাবে নিতে হবে। ৪৮৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা ব্যয়ে ‘ঠাকুরগাঁও চিনিকলের পুরোনো যন্ত্রপাতি প্রতিস্থাপন ও সুগার বিট থেকে চিনি উৎপাদনের প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সংযোজন প্রকল্পটি ২০১৩ সালে একনেক সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়। এক দশক আগের রেট শিডিউল ও বর্তমান রেট শিডিউল এক নয়। ফলে প্রকল্পের আওতায় প্রয়োজনীয় মালামাল দরদামে মিলছে না। সবশেষ ২০২১-২২ অর্থবছরে ২৫ লাখ টাকা প্রকল্পের আওতায় ছাড় করা হয়। এরপর এডিপিতে প্রকল্পের আওতায় আর বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। ফলে বর্তমানে বন্ধ রয়েছে এ প্রকল্পের কাজ।
ঠাকুরগাঁও চিনিকলের মহাব্যবস্থাপক (প্রশাসন) মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, প্রকল্পের দৃশ্যমান কোনো অগ্রগতি নেই। কিছু গাড়ি কেনা হয়েছিল। এ ছাড়া কোনো অগ্রগতি নেই। বর্তমানে প্রকল্পের কাজ বন্ধ। কবে শুরু হবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বলতে পারবে।
ঠাঁকুরগাঁও চিনিকলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. শাহজাহান কবির বলেন, ‘আমি নতুনভাবে এখানে নিয়োগ পেয়েছি। কয়েকদিনের মধ্যে ঠাকুরগাঁও চিনিকলে জয়েন করব। তবে যতটুকু জানি প্রকল্পের কাজ এখন বন্ধ।
এসএন