পটুয়াখালীতে মধ্যবিত্তের মাঝে স্বস্তি ফেরাচ্ছে ‘লসের বাজার’
আসন্ন রমজান মাসে নিম্ন ও মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রির কার্যক্রম পরিচালনা করছে ‘পটুয়াখালীবাসী’ নামে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। শুক্রবার সকাল থেকে শহরের শহীদ আলাউদ্দিন শিশু পার্ক মাঠে এই কার্যক্রম শুরু করা হয়েছে।
পটুয়াখালীবাসী সেচ্ছাসেবী সংগঠনের সদস্যরা ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, সারাদেশে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতিতে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো যখন হিমশিম খাচ্ছে তখন সংগঠনটি নিজস্ব অর্থায়নে ক্ষতিপূরণ দিয়ে পণ্য বিক্রির এই কার্যক্রম শুরু করেছে। এই ভিন্নধর্মী আয়োজন এর আগেও করোনাকালীন সময়ে তারা ‘লস প্রজেক্ট’ নামে চালু করে যেখানে বিভিন্ন পণ্য বিক্রয় করা হয়।
করোনাকালীন পাইকারি বাজার থেকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য কিনে ভ্যানে করে মানুষের বাড়িতে বাড়িতে গিয়ে সেই পণ্য কম টাকায় বিক্রি করেন এই সংগঠনের সদস্যরা। এ ছাড়া গত বছর রাস্তায় সাজিয়ে রাখা ইফতার কার্যক্রমে তারা সারা দেশে আলোড়ন সৃষ্টি করেন।
এদিকে বাজারের পাইকারি মূল্যের থেকেও কম দামে পণ্য কিনতে পেরে খুশি নিম্ন আয়ের মানুষ।
দিনমজুর ইব্রাহিম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, এই সংগঠনের সদস্যরা ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করছে। বাজারের চেয়ে অনেক কম মূল্যে এখানে রমজানের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র পেলাম, আমি অনেক খুশি।
সাফিয়া বেগম ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমার স্বামী নেই, দুই সন্তান নিয়ে কোনো রকমে দিন চলে। এখান থেকে বাজার করে নিলাম। অনেক কম টাকায় বাজার করতে পেরেছি। পুরো রমজান মাসে যদি এমন কম টাকায় পণ্য কেনা যেত তাহলে ভালো হত।
পটুয়াখালীবাসী সংগঠনের সদস্য সাবরিনা মেহজাবিন স্বর্ণা ঢাকাপ্রকাশ-কে বলেন, আমাদের সংগঠন ছাত্র-ছাত্রীদের নিয়ে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন। বিভিন্ন সময়ে দেশের ক্রান্তিলগ্নে আমরা মানুষের পাশে দাঁড়াই। ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রয় এর আগেও আমরা করেছি। এবারে আমরা উদ্যোগ গ্রহণ করেছি রমজানের প্রথম থেকেই এই ভর্তুকি দিয়ে পণ্য বিক্রি করবো যাতে করে মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো কিছুটা হলেও লাভবান হতে পারে।
সদস্য মেহেদী হাসান ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, রমজান উপলক্ষে আমরা লস দিয়ে মধ্যবিত্ত মানুষের জন্য রমজানে প্রয়োজনীয় সামগ্রী বিক্রি করছি। রোদের মধ্যে অনেক কষ্ট হলেও কম দামে পণ্য পাওয়ার পরে তাদের হাসি দেখে আমরা আরো উৎসাহিত হই।
সংগঠনের সভাপতি মাহমুদ হাসান রায়হান ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের মূল্য এত পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে যা মানুষের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে গেছে। সরকার বিভিন্ন উদ্যোগের মাধ্যমে নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের পাশে রয়েছে। এই দায়িত্ব শুধু সরকারের নয়, আমাদের সবার। আমাদের স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের উদ্যোগে আমরা ক্ষতিপূরণ দিয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্র বিক্রি করছি। আমরা টার্গেট নিয়েছি যে সকল মানুষ ট্রাকের পেছনে গিয়ে দাঁড়াতে পারে না লজ্জার ভয়ে, সেই শ্রেণির মানুষদের জন্য আমরা পাইকারি দোকান থেকে পণ্য ক্রয় করে কেনা দামে থেকেও ১৫ থেকে ২০ টাকা কম মূল্যে পণ্য বিক্রি করবো।
তিনি আরো জানান, ছোলা বুট বাজারে ৮৫ টাকা এখানে পাবেন ৬০ টাকায়। চিড়ার বাজার মূল্য ৬০ টাকা, এখানে পাওয়া যায় ৪৫ টাকায়। চিনির বাজার মূল্য ৯০ টাকা এখানে পাবেন ৬৫ টাকায়। মসুর ডালের বাজার মূল্য ১১০ টাকা এখানে পাবেন ৮০ টাকায়। মোটা মুড়ি বাজার মূল্য ১২০ টাকায় এখানে পাবেন ৮০ টাকায়। সয়াবিন তেলের বাজার মূল্য ২ লিটার ৩৩৬ টাকা, এখানে পাবেন ৩০০ টাকায়। এই ক্ষতিপূরণের অর্থ সংগ্রহ হয়েছে ভলান্টিয়ারদের মাসিক চাঁদা ও বিত্তবানদের সহযোগিতায়।
শুক্রবারে তাদের ৬ হাজার টাকা লস হয়েছে। প্রাথমিকভাবে প্রতি পাঁচ দিন পর পর এই বাজার বসানোর পরিকল্পনা আছে। তবে সহযোগী পেলে পুরো রমজান মাসজুড়ে এই কার্যক্রম পরিচালনা করবে সংগঠনটি।
এমএসপি