কুয়াকাটা সৈকত রক্ষায় হচ্ছে বালু’র বাঁধ
পটুয়াখালীর কুয়াকাটা সমুদ্রসৈকতকে সাগরের অব্যাহত ভাঙন থেকে রক্ষা করার জন্য আবারও বালুভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলে বাঁধ নির্মাণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এবারের বাঁধটি যাতে আগেরটির চেয়ে বেশি টেকসই হয় সে ব্যাপারে জোর দেওয়া হচ্ছে। ‘সৈকত রক্ষায় পরীক্ষামূলক প্রতিরক্ষাকাজের’ আওতায় পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) কলাপাড়ার এ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে।
পাউবোর কলাপাড়া কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট থেকে পশ্চিম দিকে দেড় কিলোমিটার এবং পূর্ব দিকে আধা কিলোমিটার এলাকায় জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হবে। এ জন্য ১৪ হাজার ৩৮৪টি জিও ব্যাগ ও ১২৯টি জিও টিউব তৈরি করা হচ্ছে। ঢাকার বিজে টেক্সটাইল থেকে উন্নত মানের জিও টিউব ও ব্যাগ কেনা হয়েছে। এতে প্রাক্কলন ব্যয় ধরা হয়েছে ২ কোটি ৫৯ লাখ টাকা। অনুন্নয়ন রাজস্ব খাতের অর্থ ব্যয় করে এ বাঁধ নির্মাণ করা হবে। গত ১২ ফেব্রুয়ারি থেকে বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। কার্যাদেশ অনুযায়ী, আগামী ৩০ জুন কাজ শেষ হওয়ার কথা। বাঁধ নির্মাণের কাজটি করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কে কে এন্টারপ্রাইজ।
সরেজমিনে দেখা যায়, কুয়াকাটা সৈকতে জিও টিউব ও জিও ব্যাগ প্রস্তুত করার কাজ করছেন শ্রমিকেরা। সৈকতের তীরভূমি থেকে ১০০ মিটার দূরত্বে ইতিমধ্যে তৈরি করা জিও টিউব ও জিও ব্যাগগুলো ফেলা হয়েছে। এসব যাতে কেউ নষ্ট করে না ফেলে সে জন্য শ্রমিকসহ পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তাদের নজরদারি রয়েছে।
এর আগে ২০১৯ সালে কুয়াকাটা সৈকতের জিরো পয়েন্ট-সংলগ্ন দুই দিকে ১ হাজার ৫৬০ মিটার তীরভূমির ভাঙন রোধ করার জন্য একইভাবে বালুভর্তি জিও টিউব ও জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছিল। তখন পূর্ব দিকে ৫৬০ মিটার ও পশ্চিম দিকে ১ হাজার মিটার এলাকা সুরক্ষা করা হয়। ওই সময় ৬৪টি জিও টিউব ও ৮ হাজার জিও ব্যাগ ফেলা হয়। এ কাজে তখন ব্যয় হয় ১ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। তবে সে সময়ের বাঁধ টেকসই হয়নি। সাগরের প্রবল জোয়ার আর ঢেউয়ের তাণ্ডবে অল্প দিনেই বাঁধ বিলীন হয়ে যায়।
এই কাজের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও পাউবোর শাখা কর্মকর্তা সৈয়দ তারিকুর রহমান ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, ‘কাজ যাতে যথাযথভাবে হয় এবং এর গুণগত মান বজায় থাকে, তা নিশ্চিত করতে আমরা কঠোরভাবে তদারকি করছি। আমিসহ আরও একজন কর্মকর্তা সার্বক্ষণিক কাজটি দেখছি।’
কাজটি কীভাবে হচ্ছে, জানতে চাইলে এই কর্মকর্তা জানান, ভাটার সময় যেখানে পানির লেভেল থাকে, সেখানে জিও টিউব ও ব্যাগগুলো ফেলা হচ্ছে। প্রথমে জিও টিউব ফেলা হবে। এরপর এর দুই পাশে জিও ব্যাগগুলো ফেলা হবে। বাঁধের উচ্চতা মোট ৫ ফুট। এর মধ্যে ভাটার সময় জিও টিউব ও ব্যাগ ২ ফুট নিমজ্জিত থাকবে; ওপরের দিকে জেগে থাকবে ৩ ফুট।
জিও টিউব ও ব্যাগ ফেলে আগের বাঁধটি মোটেই টেকসই ছিল না বলে দাবি বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের (বাপা)। কলাপাড়া আঞ্চলিক কমিটির সদস্যসচিব মেজবাহ উদ্দিন মাননুর ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, এর আগে সৈকতের তীরভূমির কাছাকাছি জিও টিউব ও ব্যাগ ফেলে সৈকতের ভাঙন রোধ করার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছিল। ওই পরিকল্পনাটি তখন ভুল ছিল। দেখা গেছে, জিও ব্যাগ-জিও টিউবের ওপর দিয়ে যখন-তখন ভাড়ায় চালিত মোটরসাইকেল চলাচল করেছে। এতে সহজেই জিও টিউব ও ব্যাগ ফেটে বালু বের হয়ে গেছে।
পাউবো কলাপাড়ার নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফ হোসেন ঢাকাপ্রকাশ-কে জানান, গত দুই বছর আগে একই পদ্ধতিতে কাজটি করা হয়েছিল, এটা ঠিক। তবে ওই সময়ের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবারের বাঁধটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা চলছে। ওই সময় কাজটি করা হয়েছিল বর্ষার সময়। যার কারণে কাজটি টেকসই হয়নি। এ ছাড়া আগেরবার স্থানীয়ভাবে বালু সংগ্রহ করা হয়েছিল। এবার কাজের জন্য চাঁদপুর থেকে কার্গোতে করে বালু এনে ব্যবহার করা হচ্ছে। আরও একটি কৌশলগত ব্যাপার হলো, এবার কাজটি বর্ষা মৌসুমের বেশ আগেই শুরু করা হয়েছে।
এমএসপি