খুলনায় বন্ধ পাটকল চালু ও বকেয়া পরিশোধের দাবিতে সংবাদ সম্মেলন
খুলনায় বন্ধকৃত সকল রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে চালু ও ঈদের আগে সব বকেয়া পরিশোধের দাবি জানিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ সময় বৃহত্তর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দেওয়া হয়।
রবিবার (৩ এপ্রিল) দুপুরে খুলনা প্রেস ক্লাবের শহীদ সাংবাদিক হুমায়ুন কবীর বালু মিলনায়তনে পাটকল রক্ষায় সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সম্মিলিত নাগরিক পরিষদ। এতে সভাপতিত্ব করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট কুদরত-ই-খুদা এবং সঞ্চালনা করেন সদস্য সচিব এস এ রশীদ।
এ সময় অ্যাভোকেট কুদরত-ই-খুদা বলেন, গত ২০২০ সালের ২ জুলাই ২৫টি রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল একযোগে বন্ধ ঘোষণা করা হয়। বিজেএমসি, অর্থ ও পাট মন্ত্রণালয়ের দুর্নীতি, অবহেলা, অব্যবস্থাপনা, সমন্বয়হীনতা ও ভ্রান্ত নীতির কারণে পাটকলগুলো লোকসান হয়েছে। স্বাধীনতার পর গত ৫০ বছরে প্রত্যেক সরকারই এই লোকসান প্রক্রিয়াকে অব্যাহত রেখে এসব প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করেছে। অথচ এখনও এসব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকলকে রাষ্ট্রীয় মালিকানাতে সুষ্ঠু পরিকল্পনার ভিত্তিতে পরিচালনা করে লাভজনক করার সুযোগ আছে। শ্রমিক কর্মচারী ঐক্য পরিষদ (স্কপ) এর প্রস্তাবনা অনুযায়ী মাত্র ১২০০ কোটি টাকা ব্যয়ে এসব প্রতিষ্ঠানকে লাভজনক করা সম্ভব।
তিনি আরও বলেন, পাটকল শ্রমঘন শিল্প। এই শিল্পের বিকাশের মধ্য দিয়ে আমাদের বেকার সমস্যা অনেকটা লাঘব করা যাবে। একই সঙ্গে বর্তমান বিশ্ববাজার বিবেচনায় প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করা সম্ভব। কিন্তু সরকার লিজ প্রক্রিয়ায় ব্যক্তি মালিকদের বরাদ্দ দিয়ে এসব পাটকল পরিচালনা করার প্রক্রিয়া নিয়ে এগোচ্ছে। দীর্ঘ মেয়াদী স্থিতিশীল অর্থনৈতিক বিকাশের কথা বিবেচনা করলে সরকারের এই সিদ্ধান্ত দেশের স্বার্থের জন্য মহাবিপদ ডেকে আনবে।
কুদরত-ই-খুদা বলেন, আমরা সরকারের কাছে ৫ দফা দাবি বাস্তবায়ন করার আহ্বান জানাই। ৫ দফা দাবি হলো- বন্ধকৃত সব রাষ্ট্রায়ত্ত পাটকল অবিলম্বে রাষ্ট্রীয় মালিকানায় চালু করতে হবে, আগামী ঈদুল ফিতরের আগেই সব বদলি শ্রমিক, ৫ মিলের শ্রমিক, নামের ভুলের কারণে বঞ্চিত সব শ্রমিক এবং ২০১৩ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীদের এরিয়ারসহ সব বকেয়া ক্ষতিপূরণসহ এককালীন পরিশোধ, ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের বকেয়া মজুরি ও ২০২০ সালের ঈদুল আজহার বোনাসসহ পূর্ববর্তী ৫ বছরের উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স এবং জুলাই ২০২০ এর ইনক্রিমেন্টসহ দুই দিনের মজুরি পরিশোধ করতে হবে, পাট ও অর্থ মন্ত্রণালয় এবং বিজেএমসির কর্মকর্তাদের দুর্নীতি-ভ্রান্ত নীতি-লুটপাটের বিচার ও মাথা ভারি প্রশাসন পোষা বন্ধ করতে হবে, স্কপের প্রস্তাবনা বিবেচনায় নিয়ে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ সাপেক্ষে পাটকলগুলোকে আধুনিকায়ন করতে হবে, শ্রমিক ও শ্রমিক নেতৃবৃন্দের নামে দায়ের করা সব মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার করতে হবে।
সংবাদ সম্মেলনে শ্রমিক নেতারা বলেন, পাটকলগুলো বন্ধ করে দেওয়ার ফলে স্থায়ী, বদলি ও দৈনিক ভিত্তিকসহ প্রায় ৬০ হাজার শ্রমিক চাকরিচ্যুত হয়েছেন। গত ২১ মাস তারা অমানবিক জীবনযাপন করছেন। শুধু পাটকল শ্রমিকরাই নয়, পাট শিল্প সংশ্লিষ্ট প্রায় তিন কোটি মানুষের জীবন ও জীবিকার ওপর কালো ছায়া নেমে এসেছে। সরকার তিন মাসের মধ্যে শ্রমিকদের বকেয়া পাওনা পরিশোধের ঘোষণা দিলেও এখনও তা পুরোপুরি বাস্তবায়ন হয়নি। বদলি শ্রমিকদের প্রায় অর্ধেক এবং ৫টি মিলের (খালিশপুর জুট মিলস, দৌলতপুর জুট মিলস, জাতীয় জুট মিলস, আর আর জুট মিলস ও কেএফডি জুট মিলস) শ্রমিকরা কেউই এখনও তাদের বকেয়া পাওনা পায়নি।
তাদের প্রাপ্যর বাইরেও ২০১৯ সালের ৬ সপ্তাহের মজুরি, ২০২০ সালের ঈদুল আজহার বোনাসসহ ২০১৫ থেকে পাঁচ বছরের উৎসব বোনাসের ডিফারেন্স, ২০২০ সালের জুলাই মাসের প্রথম দুই দিনে ইনক্রিমেন্টসহ মজুরি এখনও বকেয়া। ২০১৩ সাল থেকে অবসরপ্রাপ্ত শ্রমিক-কর্মচারীরাও এখন পর্যন্ত তাদের প্রাপ্য টাকা পায়নি।
উপরোক্ত দাবি আদায়ের লক্ষ্যে পাটকল রক্ষায় সম্মিলিত নাগরিক পরিষদের উদ্যোগে সব শ্রমিককে যুক্ত করে ঈদের আগে নানা কর্মসূচি পালন করা হবে বলেও জানানো হয়।
এসআইএইচ