টাঙ্গুয়ার হাওড়ে বাঁধে ভাঙন, দায় নিচ্ছে না পাউবো
সুনামগঞ্জের তাহিরপুর উপজেলার টাঙ্গুয়ার হাওড়ের নজরখালি বাঁধ ভেঙে পানি প্রবেশ করেছে। শনিবার (২ এপ্রিল) সকাল সাড়ে ১১টার দিকে বাঁধটি ভেঙে পানি প্রবেশ করতে দেখা যায়।
ভারতের মেঘালয়ে কয়েক দিন ধরে বৃষ্টিপাতের ফলে সুনামগঞ্জের নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আজ পানির চাপে নজরখালি এ বাঁধটি ভেঙে গেছে।
পাউবোর পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে- এই বাঁধটি ফসল রক্ষার বাঁধ নয়। এটি বিশেষ বরাদ্দের বাঁধ, কারণ এটি গ্রামবাসীর অনুরোধে দেওয়া হয়েছে। এটা প্রকল্পের বাইরের। যেমন ধরেন- কিছু জায়গা থাকে নিচু বা ভাঙা সেই জায়গাগুলো যেভাবে মেরামত করতে বিশেষ বরাদ্দ দেওয়া হয়, এটাও আলোচনা করে দেওয়া হয়েছে। আর এটাতো টাঙ্গুয়ার হাওড়ে। টাঙ্গুয়ার হাওড় রামসার সাইট এখানে ফসল লাগানোর কথা না। এটা তেমন কিছু না। পানি উপচে বাঁধের ওপর দিয়ে গেছে তাই বাঁধ কিছুটা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, বেশি কিছু না।
জানা গেছে, এই বাঁধ নির্মাণে পাউবো ৯ লাখ টাকা বরাদ্দ দিয়েছে। তাই জনমনে প্রশ্ন, ফসল রক্ষা বাঁধ হোক বা পানি আটকানোর জন্যই হোক, এতো টাকা ব্যয় করার পর কেন বাঁধ ভেঙে যায়? ফসল রক্ষার বাঁধ না হলেও এটি তো নিশ্চয়ই উপকারের জন্য দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আজ বাঁধটি ভেঙে যাওয়ার ফলে অন্য হাওড়ের কৃষকদের মধ্যে দেখা দিয়েছে অজানা আতঙ্ক!
এই হাওড়ে প্রায় ১২০ হেক্টর জমিতে ধান চাষ করা হয়েছে। তাহিরপুর অংশে ২৫ হেক্টর জমি পড়েছে।
এই বাঁধটি মেরামতের জন্য বর্ধিত করে করে ২৪নং পিআইসির অধীনে দেওয়া হয়েছিল। পিআইসির সভাপতি সেন্টু এটির বাস্তবায়ন করেন।
বর্তমানে এই বাঁধটি আর মেরামতের কোনও সুযোগ নেই। ফলে নদীর পানি যত বৃদ্ধি পাবে হাওড়ের ধান রক্ষা করা ততটাই কঠিন হয়ে পড়বে।
এই বাঁধ দিয়ে পানি প্রবেশ করে উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের গইনা কড়ি হাওড়, এরাইল্লার হাওড়, সন্ন্যাসী হাওড়, প্লইল্লার বিল হাওড়ের ফসলরক্ষা বাঁধ ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সম্ভাবনা রয়েছে।
১নং উত্তর শ্রীপুর ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য ও কৃষক সাজিনুর মিয়া বলেন, বাঁধের কাজে অনেক গাফলতি রয়েছে। এ নিয়ে আমি অনেক বার কথা বলেছি। যাতে বাঁধটি শক্তিশালী করে নির্মাণ করা হয়। এই বাঁধ ভাঙার পর কৃষকদের মাথায় দুশ্চিন্তার ভাজ পড়ে গেছে। এমনিতেই জিনিসপত্রের দাম বেশি। এবার যদি গোলায় ধান না ওঠে অনেক কৃষক মারা যাওয়ার অবস্থা হবে। অনেক ঋণ করে জমি আবাদ করেন।
এ বছর বাঁধের কাজ ভাল হয়নি বলে অনেক দিন ধরে আন্দোলন করে যাচ্ছে হাওড় বাঁচাও আন্দোলন নামের সংগঠন। বিগত ২০১৭ সালে হাওড়ে একের এক বাঁধ ভেঙে ফসল তলিয়ে যাওয়ার সময় সংগঠনটি গড়ে ওঠে।
আইনজীবী হুমাইনু কবির তার ফেইসবুকে লিখেছেন 'টাঙ্গুয়ার হাওড়ে নজরখালি ক্লোজার দিয়ে পানি ঢুকতেছে। ৮২ গ্রামের কৃষক পরিবারের স্বপ্নের সলিল সমাধি।'
হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় যুগ্ম-সাধারণ সম্পাদক সালেহীন শুভ বলেন, বাঁধ তদারকির কাজ উপজেলা প্রশাসন পানি উন্নয়ন বোর্ডের। কিন্তু তারা এ কাজে ব্যর্থ হয়ে নজরখালি বাঁধ ভাঙার ব্যাপারটি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন। বাঁধের কাজ খুবই নিম্ন মানের হয়েছে তাই এটি ভেঙেছে। আমরা এ খুব শিঘ্রই আন্দোলনে যাবও।
হাওড় বাঁচাও আন্দোলনের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক বিজন সেন রায় বলেন, হাওড়ের বাঁধ ভেঙে যাওয়ার দায়ভার প্রশাসনকে নিতে হবে। আমরা আগে থেকেই সর্তক করে দিয়েছিলাম কিন্তু আমাদের কথা কেউ শুনেনি। আমরা এখন তীব্র আন্দোলন শুরু করবো।
তাহিরপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) রায়হান কবির জানান, এটি মূলত ফসল রক্ষার বাঁধ নয়। আমি এ গ্রামে এসেছি। এ দিকে পানি প্রবেশ করায় নদীর পানির চাপ কমবে। অন্য হাওড়ের দিকে আর যাবে না। টাঙ্গুয়ার হাওড়ে কৃষকরা সাহস করে নিজ উদ্যোগে ধান রোপন করেছেন। তাহিরপুর অংশে মাত্র ২৫ হেক্টর জমি হবে। তাই আতঙ্কের কিছু নেই। আমরা সব সময় নজর রাখছি। আর এই বাঁধটি মূলত গ্রামবাসীর অনুরোধে করা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দে মাধ্যমে। এটি ফসল রক্ষা বাঁধ নয়।
পানির উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো.শামসুদ্দোহা জানান, এই বাঁধটি প্রকল্পের বাইরে। ওই জায়গায় কিছু ভাঙা অংশ ছিল, সেটি মেরামত করা হয়েছে বিশেষ বরাদ্দের মাধ্যমে। এই বাঁধ পানি উপচে পড়ছে। এটি কোনও ফসল রক্ষা বাঁধ নয়। আপনি নিশ্চয়ই জানেন, টাঙ্গুয়ার হাওড় রামসার সাইট ঘোষণা করা হয়েছে। এখানে ফসল লাগানোর কথা না। এমনিতেই নিষেধ রয়েছে।
এমএসপি