নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগেই ১৯ লাখ টাকার সেতুতে ফাটল
রংপুরের মিঠাপুকুরে ১৯ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণাধীন একটি সেতুতে ফাটল দেখা দিয়েছে। এলাকাবাসীর অভিযোগ, নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রীর ব্যবহার এবং সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের তদারকির অভাবে এ ঘটনাটি ঘটেছে। এ ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ও স্থানীয় প্রকৌশল দপ্তর বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। গত বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন মিঠাপুকুর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী(এলজিইডি) ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা। সেতুটির গর্ত পূরণে এক্সক্যাভেটর দিয়ে মাটি দেওয়ার সময় ফাটল দেখা দিতে পারে বলে মনে করছেন উপজেলা প্রকৌশলী।
রংপুরের মিঠাপুকুর প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার খোড়াগাছ ইউনিয়নের মিলবাজার এলাকায় ১৯ লাখ ৯৩ হাজার টাকায় ৬ দশমিক ৯ মিটার দৈর্ঘ্য ও ৪ দশমিক ৮৮ মিটার প্রস্থ বিশিষ্ট ব্রিজটির নির্মাণ কাজ চলমান। এই বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারী সেতু নির্মাণের কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও তা শেষ হয়নি। লালমনিরহাটের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্স এই ব্রিজটির নির্মাণ কাজ করছে।
মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়নের পদাগঞ্জ ও পাইকারের হাট হয়ে মিলবাজার পর্যন্ত প্রায় ৩ কিলোমিটার হচ্ছে কাঁচা রাস্তা। প্রায় ২০ গ্রামের মানুষ রংপুর সদর উপজেলায় যাতায়াত করতে এ রাস্তাটি ব্যবহার করেন। রাস্তাটির তিনমাথা পাইকড়েরতল এলাকায় এ সেতুটি নির্মাণ করা হচ্ছে। নির্মাণ কাজ শেষ হতে না হতেই বিভিন্ন স্থানে দেখা দিয়েছে ফাটল।
স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগ, সেতুর ফাটল বন্ধ করতে রাতের আধারে সিমেন্টের প্রলেপ দিয়েছেন ঠিকাদারের লোকজন। তারপরও কয়েকটি স্থানে ফাটল এখনও দৃশ্যমান রয়েছে।
মিঠাপুকুরের বায়ান্নবাজারের মোজাহার আলী বলেন, সেতুটি নির্মাণ করতে ঠিকাদার নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করেছেন। দিনের বেলা কাজ না করে রাতের আধারে নির্মাণ কাজ করছেন। এখন তারা সেতুর ফাটল ঢাকতে চেষ্টা করছে। নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে। ভবিষ্যতে সেতুটি ব্যবহার করা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়াবে বলে মন্তব্য করছেন তিনি।
একই এলাকার কৃষক ইদ্রিস আলী বলেন, আমরা অনেকদিন ধরেই বিষয়টি খেয়াল করছি। কিন্তু ঠিকাদার স্থানীয় লোকজনকে ম্যানেজ করে তড়িঘড়ি করে সেতুটির কাজটি শেষ করার চেষ্টা করেছিলেন। এরই মধ্যে তো ফাটল দেখা দিয়েছে।
এ বিষয়ে মিঠাপুকুরের খোড়াগাছ ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আসাদুজ্জামান আসাদ বলেছেন, ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। এলাকাবাসীর অভিযোগের সঙ্গে আমিও একমত। নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহারের কারণে ফাটল দেখা দিয়েছে কি না বিষয়টি তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত। উপজেলা প্রকৌশলীসহ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ঘটনাটি গুরুত্ব সহকারে দেখার জন্য অনুরোধ করেছি।
ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ফাতেমা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মিজানুর রহমান মিজান বলেন, নির্মাণবিধি মেনেই কাজ হচ্ছে। এ বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারী নির্মাণ কাজ শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিছু কারণে শেষ হয়নি। আর ফাটল দেখা দেওয়ার বিষয়টি সাময়িক সমস্যা। উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে দেখা করে কথা বলেছি।
এ ব্যাপারে মিঠাপুকুর উপজেলা প্রকৌশলী আখতারুজ্জামান বলেন, আমরা বিষয়টি তদারকি করছি। তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এটা তেমন গুরুতর বা ঝুঁকিপূর্ণ ফাঁটল নয়। আমরা সবকিছু দেখেই ব্যবস্থা নেব।
এসআইএইচ