বাগেরহাটে সহায়তার তালিকায় নেই ৬৪১ পরিবার, দুশ্চিন্তায় জেলেরা
জাটকা আহরণে বিরত থাকা জেলেদের জীবনযাত্রা নির্বাহে মানবিক সহায়তা কর্মসূচি থেকে বাদ পড়েছে বাগেরহাটের কচুয়া ও ফকিরহাট উপজেলার ৬৪১ জেলে পরিবার।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, প্রতি বছর ইলিশের বংশ বৃদ্ধির জন্য ১ নভেম্বর থেকে ৩০ জুন পর্যন্ত জাটকা আহরণ বন্ধ থাকে। এ সময় জেলেদের জীবন-জীবীকা নির্বাহের জন্য মানবিক সহায়তা কর্মসূচির উদ্যোগ নেয় সরকার। এ কর্মসূচির আওতায় কর্মহীন জেলেদের নিবন্ধন অনুযায়ী জনপ্রতি জেলেদের ২০ কেজি করে চার মাসে ৮০ কেজি চাউল দেওয়া হয়। এ বছর জেলার ৯ হাজার তিনশ পরিবারের অনুকূলে প্রায় ৭৪৮ মেট্রিকটন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ২০২১-২২ অর্থবছরে তালিকা থেকে বাদ পড়েছে কচুয়া উপজেলার ৪৩৬টি ও ফকিরহাটের ২০৫টি জেলে পরিবার।
কচুয়া উপজেলার বগা গ্রামের জেলে পরিবারের আবুল হোসেন বলেন, ‘বাপ-দাদার পেশা মাছ আহরণ করে জীবীকা নির্বাহ করি। মাছ না ধরলে আমাদের ভাত জোটে না। তারপরও সরকারের নিয়ম মেনে জাটকা আহরণ নিষিদ্ধ মৌসুমে আমরা সাগরে যাই না। আট মাস জাটকা ধরা নিষেধ থাকলেও প্রতি বছর চার মাসে ২০ কেজি করে চাল পেতাম। কিন্তু এবার তাও বন্ধ করে দিয়েছে। আমাদের খেয়ে না খেয়ে দিন কাটানো ছাড়া উপায় নেই। ‘
একই এলাকার জেলে লোকমান হোসেন বলেন, বগা এলাকার বেশিরভাগ মানুষই সাগরে মাছ ধরে। আমরা প্রকৃত জেলে। আমাদের বাদ দিলে, পুরো দেশের জেলেদের বাদ দেওয়া উচিত। ২০ কেজি চালে সংসার না চললেও অনেক সহায়ক হতো। এটা বন্ধ হওয়ায় খুব বিপদে পড়ে গেলাম।
লোকমান আরও বলেন, আমাদের অন্য কোনো আয়ের ব্যবস্থা নেই। আমাদের সংসাদের নারীরাও আমাদের জন্য জাল বোনে। কী আর করব সরকার যা ভালো বোঝে!
কচুয়া উপজেলা জাতীয় মৎস্য সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইব্রাহীম আমানী বলেন, কচুয়া উপজেলায় ২ হাজার ৪০০ নিবন্ধিত জেলে রয়েছে। যার মধ্যে ৪৩৬ জেলে প্রতি বছর মানবিক সহায়তা পান। এ বছর এ এলাকার জেলেরা বঙ্গপসাগরে মাছ আহরণ করতে গিয়ে দুর্ঘটনার কবলে নিহত, আহত ও নিখোঁজ রয়েছেন। অথচ জাটকা আহরণ নিষিদ্ধের এ সময় বেকার জেলেদের মানবিক সহায়তার তালিকা থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে। এতে আমরা হতবাক হয়েছি। জেলেদের জীবীকা নির্বাহের জন্য অতিদ্রুত তালিকাভুক্ত করে তাদের মানবিক সহায়তা প্রদানের দাবি জানান তিনি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা এএস এম রাসেল বলেন, কচুয়া ও ফকিরহাটের বাদ পড়া জেলেদার মানবিক সহায়তার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। আশা করি দ্বিতীয় ধাপে এসব জেলে তালিকাভুক্ত হয়ে মানবিক সহায়তা পাবেন।
বাগেরহাটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আজিজুর রহমান বলেন, মন্ত্রণালয় থেকে কচুয়া ও ফকিরহাটকে বাদ দিয়েছে। এ দুই উপজেলার জেলেরা যাতে মানবিক সহায়তা পান সেজন্য উন্নয়ন সমন্বয় সভায় আলোচনা করা হয়েছে। এ দুই উপজেলার কর্মহীন জেলেরা যাতে বঞ্চিত না হন, পুনরায় মানবিক সহায়তা পান সেজন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
এসএন