খনন কাজে প্রাণ ফিরতে শুরু করেছে মৃতপ্রায় হিসনা নদীর
কুষ্টিয়ার দৌলতপুরের মৃতপ্রায় হিসনা নদীতে খননের কাজ শুরু হয়েছে। খনন কাজ শুরু হওয়ায় হারানো যৌবন ফিরে পেতে যাচ্ছে ৪৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের গুরুত্বপূর্ণ এ নদীটি। বাঁধ দিয়ে পানি প্রবাহ বন্ধ, অবৈধ দখল, কচুরিপানা ও বর্জ্যে মরা নদীতে পরিণত হয় হিসনা নদী।
গত ৯ মার্চ হিসনা নদীর খনন কাজের উদ্বোধন করা হয়। প্রথম পর্যায়ে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ৮ কিলোমিটার নদীর পাড় সংরক্ষণ ও খনন কাজ করা হবে। ইতিমধ্যে খনন কাজ শুরু হওয়ায় পূর্বের পানির প্রবাহমান রূপে ফিরতে শুরু করেছে নদীটি। এতে সন্তোষ প্রকাশ করছেন স্থানীয় বাসিন্দা ও প্রকৃতিপ্রেমিরা।
হিসনা নদীর তীরবর্তী এলাকায় বসবাসকারী আসাদুর মন্ডল নামের এক ব্যক্তি বলেন, আমরা ছোট সময় এই নদীতে মাছ ধরতাম, ডিঙি নৌকায় ঘুরে বেড়াতাম এ নদীতেই গোসল করতাম।
তিনি আরও বলেন, আগে বর্ষা মৌসুমে এ নদীতে যখন বন্যার পানি আসত তখন অনেক প্রজাতির দেশি মাছের পাশাপাশি নদীর মাছ পাওয়া যেত। এখন আর হিসনায় মাছ পাওয়া যায় না।
আব্দুল মজিদ নামেরে আরেক বাসিন্দা জানান, এই নদীতে যখন খুব স্রোত ছিল, তখন এই নদী দিয়ে নৌকায় করে বিভিন্ন গ্রামের হাটে যেতাম মালপত্র কিনতে।
এদিকে হিসনা পাড়ের কৃষকরা মনে করছেন, নদীতে আবার পানির প্রবাহ ফিরে এলে এ অঞ্চলের কৃষকদের কৃষি কাজের বেশ ইতিবাচক প্রভাব পড়বে এতে এই এলাকার কৃষকদের কৃষি উৎপাদন সহজতর হবে এবং তাদের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি ঘটবে।
কৃষক মেছের আলী জানান, নদীটি আগের রূপ ফিরে পেলে তাদের ফসলের জমিতে পানি দেওয়ার খরচ কমে যাবে। এখন পানির ডিপ-টিউবয়েল থেকে জমিতে পানি দিতে হয়। এতে তাদের উৎপাদন খরচ বেড়ে যায়। নদীর পানি সব সময় পেলে তাদের সেচ খরচ কমে যাবে।
এসব কারণে হিসনা নদী পাড়ের মানুষের জোড় দাবি, নদীর খনন কাজ আংশিক নয়, পুরো হিসনা নদীরই খনন কাজ তারা চান।
টিপু খন্দকার নামে স্থানীয় এক এনজিওকর্মী জানান, শুধুমাত্র ৮ কিলোমিটার নদী খনন নয়, তার দাবি পুরো ৪৮ কিলোমিটার নদী খনন করা হলে আবারও আপন রূপে ফিরবে চিরচেনা খরস্রোতা হিসনা নদী।
এ ব্যাপারে দৌলতপুর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আব্দুল জব্বার বলেন, উপজেলার হিসনা নদী উদ্ধার করা সম্ভব হলে বেশ ইতিবাচক প্রভাব আসবে জনজীবনে। কোনো ধরনের বিড়ম্বনা ছাড়া বরাদ্দ অনুসারে হিসনা নদীর প্রাণ ফেরাতে আন্তরিক সহযোগিতা প্রয়োজন নদী পাড়ের মানুষের।
এ ব্যাপারে কুষ্টিয়া-১ আসনের সংসদ সদস্য অ্যাডভোকেট আ কা ম সরওয়ার জাহান বাদশাহ্ বলেন, ‘হিসনা নদী পাড়ের মানুষের বসতির কোনোভাবে অসুবিধা না করে নদী খননের মাধ্যমে নদীকে প্রবাহমান করার কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়েছে। এখন ৮ কিলোমিটার নদী খনন কাজ হবে। সম্ভব হলে নদীর ৪৮ কিলোমিটার খননের মাধ্যমে হিসনার প্রবাহ ফেরানো হবে। জনগণের স্বার্থে দৌলতপুর উপজেলার সব ধরনের উন্নয়ন সুষ্ঠুভাবে বাস্তবায়ন করা হবে।
এসআইএইচ