রাজশাহীতে আম-মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত চাষিরা
মার্চের প্রথম সপ্তাহের মধ্যেই রাজশাহীর আম গাছগুলোতে প্রায় ৯২ থেকে ৯৫ শতাংশ মুকুল চলে এসেছে। গাছে গাছে ফুটে ওঠেছে স্বর্ণালী মুকুল। কোনো কোনো গাছে দেখা মিলছে গুটির। ফাগুনের আবহে মৌ মৌ গন্ধ ছড়াচ্ছে বাগানজুড়ে।
সম্প্রতি ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে রাজশাহী অঞ্চলের দুই প্রজাতির আম। যা আম চাষে নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত করেছে। আর এই সম্ভাবনাকে মাথায় রেখে আমের গুণগত মান ঠিক রাখতে মুকুলের পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছে চাষিরা।
মুকুল আসার আগে থেকেই এবার ভিন্ন আমেজে আম গাছের যত্নে সরব থাকতে দেখা গেছে চাষিদের। গাছে গাছে ভিটামিন, ছত্রাকনাশক ও ব্যাকটেরিয়ানাশক মেডিসিনসহ পোকা দমনে চলছে স্প্রে। আম গাছগুলোও যেন তাদের উঠতি যৌবন লুকিয়ে রাখতে পারছে না। কাণ্ডের শীর্ষ ছাড়াও ডাল ফেটে বের হয়েছে মুকুল।
মুকুলের পর সবুজ গুটিই আম চাষির অন্যতম ভরসার জায়গা দখল করে। গুটি যত বড় হয় ততই বাড়ে চাষির মনের আনন্দ। কেননা, এ সময় অনেক চাষি মৌসুমী ব্যবসায়ীদের কাছে বাগান বিক্রি করেন। গুটির ওপর ভিত্তি করেই দাম হাঁকবে চাষিরা।
চলতি মৌসুমে এখন পর্যন্ত আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় বাম্পার ফলনের আশা করছেন চাষি ও ব্যবসায়ীরা। তবে এবার আম উৎপাদনে খরচ বাড়ছে বলে জানাচ্ছেন তারা।
চাষিরা বলছেন, আম চাষে এবার শুরু থেকেই আবহাওয়া ভালো। তবে জানুয়ারি মাসের দিকে ছত্রাকের আক্রমণ নিয়ে শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। এ কারণে বেশ কয়েকটি ধাপে স্প্রে করতে হয়েছে। শুরুতে ভিটামিন জাতীয় মেডিসিন স্প্রে করতে হয়েছে। যেগুলো দাম গত বছরের থেকে বাড়তি। আবার পরিচর্যা কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের মজুরিও বেশি দিতে হচ্ছে। সব মিলিয়ে খরচ এবার বাড়তি। তবে আশা করছি, বড় কোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ না হলে আমের বাম্পার ফলন হবে।
রাজশাহীর পবা উপজেলার আমচাষি সাবিয়ার আলী বলেন, ‘আমি প্রতিবছরই আম চাষ করি। এবারও আশা করি, ভালো ফলন হবে। আমরা চাষিরা মুকুল আসার আগে থেকেই গাছের পরিচর্যা করছি। কিন্তু ১ হাজার ৫০০ টাকার টিএসপি সার এবার ২ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার ৮০০ টাকা বস্তা কিনতে হয়েছে। অন্য মেডিসিনের দামও বেশি। এ জন্য এবার আম বাগানের পরিচর্যা খরচ বেশি।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, ২০২০-২০২১ অর্থবছরে রাজশাহী জেলায় আম চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১৭ হাজার ৯৪৩ হেক্টর। প্রাকৃতিক দুর্যোগের মধ্যেও লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে উৎপাদন বেশি হয়েছিল।
জেলায় চলতি মৌসুমে ১৮ হাজার হেক্টর জমিতে আমের বাগান রয়েছে। প্রতি হেক্টরে ১২ মেট্রিক টন ফলনের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে। এবারও লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করছেন সংশ্লিষ্টরা।
এদিকে, এরই মধ্যে আম বাগান কিনতে শুরু করেছেন মৌসুমি ব্যবসায়ীরা। এমনিই একজন ব্যবসায়ী নাঈম ইসলাম।
তিনি জানান, আম গাছে গুটি আসলে পুরোদমে বাগান কেনাবেচা শুরু হয়। তবে মুকুলের সময়ও বাগান বেচাকেনা চলে। এ ক্ষেত্রে মৌসুমি ব্যবসায়ীদের ঝুঁকিটা বেশি থাকে। আর যেহেতু তিনি বাগান কিনবেন তাই বাগানে বাগানে ঘুরছেন। একটি বাগানের চুক্তিও করেছেন।
রাজশাহী জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা উম্মে ছালমা জানান, এবার আবহাওয়া ভালো আছে। জানুয়ারির দিকে হালকা বৃষ্টি হয়েছে। যেটা আম মুকুলের জন্য উপকারী ছিল। তবে ছত্রাক সংক্রমণের শঙ্কা তৈরি হয়েছিল। কৃষি কর্মকর্তাদের পরামর্শে স্প্রে করে চাষিরা ভালো ফল পেয়েছেন। তারা নিয়মিত চাষিদের পরামর্শ দিয়ে যাচ্ছেন। আর রাজশাহীর কৃষকরা এমনিতেই আম চাষে অভ্যস্থ। তারা পোকা বা ছত্রাকজনিত বিভিন্ন সমস্যায় বালাইনাশক প্রয়োগ করে এবং করছে।
রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের তথ্যানুযায়ী এ অঞ্চলে প্রতিবছর প্রায় আড়াইশ জাতের আম উৎপন্ন হয়। এর মধ্যে ফজলি ও খিরসাপাত জাতের আম ভৌগোলিক নির্দেশক পণ্য হিসেবে বিশ্ববাজারে স্বীকৃতি পেয়েছে। এতে এই দুই জাতের আম চাষে কৃষকদের আগ্রহ বেড়েছে।
তবে এই দুটি জাত ছাড়াও এ অঞ্চলে জনপ্রিয় জাত হিসেবে ল্যাংড়া, গোপালভোগ, বোম্বাই, হিমসাগর, আম্রপালি, আশ্বিনা, বৃন্দাবনী, লক্ষণভোগ, কালীভোগ, তোতাপরী, দুধসর, লখনা ও মোহনভোগের চাষ তুলনামূলক বেশি হয়।
এমএসপি