পটুয়াখালীতে সিসা তৈরির অবৈধ কারখানা, হুমকিতে পরিবেশ
পটুয়াখালীর বাউফলে অবৈধভাবে গড়ে তোলা হয়েছে ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানা। এ কারখানা থেকে নির্গত ক্ষতিকর ও বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ পরিবেশ ও জনস্বাস্থ্যের উপর বিরূপ প্রভাব ফেলছে।
উপজেলার সদর ইউনিয়নের গোসিংগা গ্রামে ওই অবৈধ কারখানা গড়ে তুলেছেন স্থানীয় একটি প্রভাবশালী মহল। ওই অবৈধ কারখানা বন্ধে জোর দাবি তুলেছেন স্থানীয় সচেতন মহল।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সদর ইউনিয়নের গোসিংগা গ্রামে ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় গড়ে তোলা হয়েছে ওই কারখানা। রফিকুল ইসলাম নামের এক ব্যক্তির কাছ থেকে এক বছরের জন্য ৪০ হাজার টাকায় ৫০ শতক জমি ভাড়া নেন মো. সাদ্দামসহ একটি প্রভাবশালী মহল।
কারখানার চারপাশে টিনের বেড়া ও পলিথিন দিয়ে প্রচীর তৈরি করা হয়েছে। ঢাকা, সাতক্ষীরা ও বগুড়া থেকে আনা হয়েছে সিসা তৈরির কাজে অভিজ্ঞ শ্রমিক। গর্ত করে কাঠ-কয়লা দিয়ে পুড়ানো হয় ব্যাটারি। রাতদিন চলে সিসা তৈরির কাজ। ওই কারখানার পাশেই রয়েছে ফসলী জমি, গরুর খামার ও কয়েকটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান।
সিসা তৈরির সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা ঢাকাপ্রকাশকে জানান, ‘পরিত্যক্ত ব্যাটারির কোষগুলো সিমেন্টের মতো জমাট বেঁধে যায়। গর্তের মধ্যে কাঠ ও কয়লা দিয়ে অ্যাসিডমিশ্রিত জমাট বাঁধা বজ্য সাজানো হয়। এরপর আগুন ধরিয়ে দিয়ে একটি পাম্পের মাধ্যমে বৈদ্যুতিক পাখা দিয়ে প্রচণ্ড বেগে বাতাস দেওয়া হয়। কাঠ ও কয়লা পুড়িয়ে একটি আগুনের কুণ্ডলী সৃষ্টি হয়। সিসা পুড়ে তরল হয় এবং এ থেকে বিষাক্ত ধোঁয়া উড়ে যায়।
তারা আরও জানান, একটি বড় ব্যাটারি থেকে প্রায় ২২ কেজি, ছোট ব্যাটারি থেকে ১০ কেজি সিসা পাওয়া যায়। এ সিসা ও প্লাস্টিক ঢাকায় বিভিন্ন ব্যাটারি তৈরির কোম্পানির কাছে বিক্রি হয়।
স্থানীয়রা ঢাকাপ্রকাশকে জানান, দিনে ব্যাটারির অ্যাসিড মিশ্রিত সিসা ও প্লাস্টিক আলাদা করা হয়। রাত ৯টার পরে ওই বিষাক্ত অ্যাসিড পুড়ানো হয়। এসময় অস্বাভাবিকভাবে নির্গত হয় বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ। দৈনিক ওই কারখানায় প্রায় দুই টন ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরি করা হয়। ওই কারখানা বন্ধের দাবিও তোলেন স্থানীয়রা।
চিকিৎসকেরা বলেন, এ ধরনের পদার্থ মানুষের শ্বাসকষ্ট, হৃদরোগ ও ক্যানসারের মতো রোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে দেয়। ওই কারখানার আশপাশের ঘাস খেলে গবাদিপশু অসুস্থ কিংবা মারাও যেতে পারেন।
এদিকে কারখানা দেওয়ার দুই মাসের মাথায় স্থানীয় বাসিন্দা পলাশ ও মজিবরের দুটি গরু মারা যায়। অসুস্থ হয়ে পড়েছে বেশ কয়েকটি গরু।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে অবৈধ কারখানার মালিক মো. সাদ্দাম বলেন, ‘এটা অবৈধ না। আর এতে কোনো ক্ষতিও হয় না। এনিয়ে পত্রিকায় লেখার কিছু নেই।'
সরকারের কোনো অনুমোদন আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এর জন্য আবার কিসের অনুমোদন। কোনো অনুমোদন দরকার হয় না।'
ওই জমির মালিক রফিক বলেন, ‘সিসা তৈরি করা হবে তা আমি জানতাম না। তারা বলছিল ব্যাটারি রাখবে।
এ বিষয়ে বাউফল উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. আল-আমিন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘ওই অবৈধ কারখানা বন্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
টিটি/