১০০০ টাকার জন্য এসএসসি পরীক্ষা দিতে পারল না শামীম
চলছে এসএসসি পরীক্ষা। সকল পরীক্ষার্থী অংশগ্রহণ করতে পারলেও মাত্র এক হাজার টাকার জন্য পরীক্ষা দিতে পারল না এক পরীক্ষার্থী। এ ঘটনাটি ঘটেছে শেরপুরের ঝিনাইগাতী উপজেলার মালিঝিকান্দা ইউনিয়নের জুলগাঁও গ্রামের মৃত আব্বাস আলীর ছেলে এসএসসি পরীক্ষার্থী শামীম মিয়ার (১৫) সঙ্গে। তিনি উপজেলার ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ছিল বলে জানা গেছে।
শামীম ও তার স্বজনের অভিযোগ, ঘাগড়া দক্ষিণপাড়া ফজলুর রহমান উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক শামীমের কাছে ফরম ফিলাপের বকেয়া এক হাজার টাকা দাবি করে প্রবেশপত্র দেয়নি। এতে চলতি বছরের এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের স্বপ্নভঙ্গ হয়ে যায় তার। স্কুলের সকল এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ফরম ফিলাপের জন্য তিন হাজার টাকা করে নেন ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হক। আর সবাই ফরম ফিলাপের টাকা দিয়ে প্রবেশপত্র নেয়। তবে শামীম দুই হাজার টাকা দেয় এবং বলেন পরীক্ষা চলাকালীন সময়ে বাকী এক হাজার টাকা দিব। কিন্তু নানা তালবাহানা করে ওই প্রধান শিক্ষক বলে বকেয়া টাকা নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে থাকতে। এরপর পরীক্ষার দিন শামীম প্রস্তুতি নিয়ে পরীক্ষার কেন্দ্রে উপস্থিত হলেও প্রধান শিক্ষককে পাননি। এক পযার্য়ে সবাই পরীক্ষা দিতে শুরু করলে শামীম তখন প্রধান শিক্ষককে পেতে কয়েকটি কেন্দ্রে দৌড়ঝাঁপ শুরু করে অবশেষে শিক্ষকের দেখা পান। তার কাছে প্রবেশপত্র চাইলে প্রধান শিক্ষক বলে সন্ধ্যায় প্রবেশপত্র নিতে। এদিকে প্রবেশপত্র হাতে না থাকায় পরীক্ষায় বসতেই পারেননি তিনি।
পরীক্ষার্থী শামীম মিয়া জানান, ফরম ফিলাপের জন্য স্যাররা তিন হাজার টাকা চাইছিল। কিন্তু আমার বাবা না থাকায় এক হাজার টাকা সেই সময় কম দিছিলাম। কিন্তু স্যার কম নিতে রাজি হয়নি। তাই টাকা পরে দিতে চাই।
এই পরীক্ষার্থী বলেন, ‘আমাকে স্যার পরে বলল তুই পরীক্ষা দিবার যাইস তখন দিমুনি। পরীক্ষা দিতে যাইয়া দেখি স্যার আসে নাই। পরে সওদাগর ভাইরে নিয়ে কয়েকটা কেন্দ্র ঘুরে স্যারকে পেলাম। তখন স্যার বলল রাতে নিস। আমি বললাম রাতে নিয়া কি করমু। পরে স্যার কিছু না বলে চলে গেল।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমার পরীক্ষা দিবার খুব ইচ্ছে ছিল। স্যারের জন্য আমার ইচ্ছা পূরণ হয়নি। আমি এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেলাম।
শামীমের মা শিরিনা বেগম বলেন, ‘আমার স্বামী মারা গেছে। আমি অনেক কষ্ট করে ভাইয়ের বাড়িতে থেকে পোলাডারে পড়াইতে ছিলাম। কিন্তু স্যার আমার পোলাডার সর্বনাশ করে দিছে। আমার পোলাডা এক বছরের জন্য পিছিয়ে গেল।’
এসব বিষয়ে জানতে মুঠোফোনে বারবার ওই স্কুলের প্রধান শিক্ষক নুরুল হকের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও তাকে পাওয়া যায়নি এবং তার বাড়িতে গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি।
এ প্রসঙ্গে মালিঝিকান্দা ইউপি চেয়ারম্যান মোজাম্মেল হক জানান, শামীম নামের ছেলেটার ফরম ফিলাপ বা এডমিট না পাওয়ার বিষয়টা আমাকে কেউ জানায় নেই। আমি বিষয়টা জানলে আমার পরিষদ বা ব্যক্তিগতভাবে সহযোগিতা করতাম।
এ ব্যাপারে ঝিনাইগাতী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ফারুক আল মাসুদ বলেন, আমাকে এ বিষয়টি মৌখিকভাবে জানানোর পরে তাদেরকে উপজেলায় আসতে বলা হয়েছে। কিন্তু এখনো তারা কোনো অভিযোগ দেয়নি। অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসআইএইচ