কুষ্টিয়ায় মোটরসাইকেল চুরির দায়ে পুলিশ সদস্য কারাগারে
গ্রেপ্তার পুলিশ সদস্য মোস্তফা কামাল (বামে) ও রাসেল। ছবি: সংগৃহীত
কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে কর্মরত এক পুলিশ সদস্যের মোটরসাইকেল চুরির অভিযোগে দুই পুলিশ সদস্যসহ ছয়জনের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়। এ মামলার আসামি রাসেল ও পুলিশ সদস্য মোস্তফা কামাল আদালতে হাজিরা দিতে গেলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
রবিবার (২৮ জুলাই) কুষ্টিয়া আদালতের চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. কেরামত আলী তাদের জামিন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠান।
এর আগে গত ২৪ মার্চ রাতে কুমিল্লা থেকে এ ঘটনায় দুই আসামি খলিল ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করা হয়। একইসঙ্গে চুরি হওয়া মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করে কুষ্টিয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। ১৬৪ ধারায় জবানবন্দিতে মোটরসাইকেল চুরির সঙ্গে সম্পৃক্ততার কথা স্বীকার করে জবানবন্দি দেন খলিল ও সোহাগ।
মামলার আসামিরা হলেন- কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ধামতি গ্রামের আবু ইউসুফের ছেলে ইব্রাহিম খলিল (২৬), একই গ্রামের নুরুল ইসলামের ছেলে রবিউল আলম সোহাগ (৩০), রমিজ উদ্দিনের ছেলে রাসেল হোসেন (২৮) এবং একই গ্রামের বাসিন্দা তিতাস হোসেন (২৭)।
এ মামলার তিন নম্বর আসামি জিল্লাল হোসেন ও চার নম্বর আসামি মোস্তফা কামাল পুলিশ সদস্য। জিল্লাল হোসেন (বিপি-৯৬১৬১৯০৬৯৯) নড়াইলের নড়াগাতী উপজেলার বাঐসোনা গ্রামের খলিলুর রহমান মোল্লার ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে সাময়িক বরখাস্ত আছেন। মোস্তফা কামাল (২৮) বিপি-৯৬১৬১৯১৬৯২ কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ধামতি গ্রামের মোখলেছুর রহমানের ছেলে। তিনি সর্বশেষ ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানায় কর্মরত ছিলেন।
এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও জেলা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) এসআই সুলতান মাহমুদ গণমাধ্যমকে বলেন, এ ঘটনায় দুই আসামি খলিল ও সোহাগকে গ্রেপ্তার করেছিলাম। তারা জামিনে আছেন। এ মামলার আসামি রাসেল ও মোস্তফা কামাল আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। এ মামলার এক আসামি পলাতক রয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনতে কাজ করছে পুলিশ। দুইজন পুলিশ সদস্যসহ মোট ৬ জন এ মামলায় আসামি।
এ ঘটনায় ভুক্তভোগী পুলিশ সদস্য আশানুর রহমান কুষ্টিয়া মডেল থানায় এজাহার দায়ের করলে গত ২৫ মার্চ পেনাল কোডের ৩৮০ ও ৪১১ ধারায় মামলা রজু করা হয়। আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস সভাকক্ষের পাশের মোটরসাইকেল গ্যারেজ থেকে মোটরসাইকেলটি চুরি করেন। মামলার বাদী পুলিশ সদস্য আশানুর রহমান যশোর সদর উপজেলার নারাঙ্গালী গ্রামের আতিয়ার রহমানের ছেলে। তিনি কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে কর্মরত রয়েছেন।
মামলার বিবরণে বাদী আশানুর রহমান উল্লেখ করেন, তিনি একজন পুলিশ সদস্য। বর্তমানে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনসে কর্মরত আছেন। তিনি পুলিশ লাইনস ব্যারাকে থাকেন। গত ৮ মার্চ দুপুর আনুমানিক ১২টার দিকে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস সভাকক্ষের পাশের মোটরসাইকেল গ্যারেজে তার লাল-কালো রঙের পালসার মোটরসাইকেল তালাবন্ধ করে রেখে পুলিশ ব্যারাকে বিশ্রাম করার জন্য যান। পরের দিন ৯ মার্চ বেলা ১১টা ৪৫ মিনিটের দিকে গ্যারেজে গিয়ে দেখেন তার মোটরসাইকেল নেই। এরপর বিভিন্ন জায়গায় খোঁজাখুজি করেও পাওয়া যায়নি।
এর পর ২৩ মার্চ কুষ্টিয়া মডেল থানায় জিডি করেন। জিডির তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই অলোক রায় গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পান। তদন্তকালে কুষ্টিয়া জেলাসহ আশপাশের জেলা এবং ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানার এক্সপ্রেসওয়ে, পদ্মা সেতু ও ধলেশ্বরী সেতু টোল প্লাজার ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তি ব্যবহার করে চুরি যাওয়া মোটরসাইকেল ও গ্রেপ্তার আসামিরাসহ অন্যান্য আসামিদের শনাক্ত করা হয়। পরে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে কুষ্টিয়া জেলা গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে ২৪ মার্চ রাতে কুমিল্লার দেবীদ্বার উপজেলার ধামতি গ্রাম থেকে আসামি ইব্রাহিম খলিল ও রবিউল আলম সোহাগকে গ্রেপ্তার করেন। তাদের স্বীকারোক্তি এবং তাদের দেখানো জায়গা ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নাসিরনগর থানার সিএনজি স্ট্যান্ডের যাত্রী ছাউনির ভেতর থেকে মোটরসাইকেলটি উদ্ধার করা হয়। গ্রেপ্তার ও পলাতক আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনস সভাকক্ষের পাশের মোটরসাইকেল গ্যারেজ হতে মোটরসাইকেলটি চুরি করে নিয়ে যায়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে কুষ্টিয়া জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পুলিশ পরিদর্শক জহিরুল ইসলাম গণমাধ্যমকে জানান, এ মামলার আসামি রাসেল ও মোস্তফা কামাল আদালতে হাজিরা দিতে গেলে জামিন নামঞ্জুর করে তাদের কারাগারে পাঠানোর নির্দেশ দেন আদালত।
এ বিষয়ে আইন গবেষক ও পিএইচডি অধ্যয়নরত অপরাধবিজ্ঞানী তাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, চুরি ফৌজদারি অপরাধ। পুলিশ লাইনসের মধ্য থেকে এক পুলিশের মোটরসাইকেল আরেকজন পুলিশ সদস্যের সহযোগিতায় চুরি হওয়া এবং তা পরবর্তীতে আরেক পুলিশ সদস্যের নিকট থেকে উদ্ধার হওয়ায় পুরো পুলিশ লাইনসের সুনাম ক্ষুণ্ন হয়েছে। প্রাথমিকভাবে চুরির বিষয়টির সত্যতা পাওয়ায় চুরির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের পুলিশ লাইনসের শৃঙ্খলা ও অসদাচরণের দায়ে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া জরুরি। পৃথকভাবে ফৌজদারি অপরাধের দায়ে পুলিশ সদস্যদের আদালতের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা রাষ্ট্র নিশ্চিত করে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আইনের রক্ষক হয়ে ভক্ষকের ভূমিকায় অবতীর্ণ হওয়ায় এ ধরনের অপরাধকে শক্ত হাতে দমন করতে হবে। চুরির অপরাধ প্রমাণিত হলে ৭ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও ১০ হাজার টাকা জরিমানা বা উভয় দণ্ড হতে পারে।