সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসনে লড়তে চান মেধা
সাতক্ষীরা-৪ (শ্যামনগর - কালিগঞ্জ উপজেলার আংশিক) আসনে জনগণের সেবায় নিজেকে নিয়োজিত রাখতে চান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি শেখ মাসুদা খানম মেধা। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতিকের জন্য এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন তিনি।
বর্তমানে শেখ মাসুদা খানম মেধা সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামী লীগের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন। নিজেকে তিনি বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক এবং শেখ হাসিনার সততার নীতিতে বিশ্বাসী একজন আওয়ামী লীগের কর্মী বলে দাবি করেন।
পারিবারিকভাবে আওয়ামী পরিবারের সন্তান শেখ মাসুদা খানম মেধা ১৯৭৬ সালে গোপালগঞ্জ জেলার মানিকহার গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা মরহুম শেখ আবুল হোসেনসহ পরিবারের সদস্যদের অনুপ্রেরণাতে ৯০ এর দশকে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন শেখ মাসুদা খানম মেধা। পরে ২০০১ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রোকেয়া হল ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। পর্যায়ক্রমে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের মহিলা বিষয়ক উপ-কমিটিতে সদস্য পদ লাভ করেন। বর্তমানে তিনি সাতক্ষীরা জেলা আওয়ামীলীগের উপদেষ্টার দায়িত্বে রয়েছেন।
এ ছাড়াও রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময়ে আন্দোলন-সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়ার সুবাদে বহুবার হয়রানি ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন তিনি।
এর আগে ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিতব্য একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে সাতক্ষীরা-৪ আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন চান মাসুদা খানম মেধা। সেই বারের নির্বাচনে মনোনয়ন পাননি তিনি। তবে, গেল দুই মেয়াদে ওই আসনের বর্তমান সংসদ সদস্যর বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে সমালোচনার মুখে পড়ে খোদ আওয়ামী লীগ সরকার। যেটা নিয়ে নিয়ে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় পর্যায়ের নেতারা বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে। যার প্রভাব পড়ে ওই আসনের তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের মাঝে। তা ছাড়াও বিভিন্ন কারণে বর্তমান সংসদের সাথে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের হেভিওয়েট কয়েকজন নেতার বিরোধে বিভক্ত তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা। তবে এবার যদি এই আসন থেকে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন লাভ করে তাহলে বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে থাকবেন তিনি। আর এমনটাই ধারণা ওই আসনের তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের।
সাতক্ষীরা-৪ আসন মূলত অসংখ্য নদ-নদী দিয়ে বেষ্টিত। এই আসনে উপকূলীয় অঞ্চলজুড়ে বসবাসরত সিংহভাগ মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে। সুপেয় পানির সংকট, নদী ভাঙনসহ নানাবিধ সমস্যায় জর্জরিত হওয়ায় দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে তাদের জীবনযাপন। সরকার, বিভিন্ন এনজিও সংস্থা, সেচ্ছাসেবী সংগঠন উপকূলের মানুষের জীবনমান উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে। এ ছাড়াও ব্যক্তি পর্যায়ে অনেকে উপকূলের মানুষের পাশে থেকে কাজ করে। ব্যক্তি পর্যায়ে যারা উপকূলের মানুষের ভাগ্য উন্নয়নে কাজ করে তাদের মধ্য অন্যতম একজন শেখ মাসুদা খানম মেধা বলে জানান ওই আসনে বসবাসরত মানুষেরা।
মাসুদা খানম মেধা প্রসঙ্গে কুশুলিয়া ইউনিয়নের যুবলীগ সুলতান আহম্মেদ বলেন, সাতক্ষীরা ৪ আসনে বেশ জনপ্রিয় একজন শেখ মাসুদা খানম মেধা। রাজনৈতিক নেত্রী হিসেবে তিনি যেমন দক্ষ ও কর্মীবান্ধব ঠিক তেমনি ভাবে মানবিক ব্যক্তি। তাকে কোনো কিছু বলা লাগে না। কারও সমস্যার কথা যখন তিনি অবগত হন তখন তাকে সর্বাত্মকভাবে সহযোগিতা করেন। বর্তমানে যারা দায়িত্বে আছেন জনগণের প্রতিনিধি হিসেবে তারাও মাসুদার চেয়ে অনেকাংশে পিছিয়ে রয়েছেন বলে দাবি করেন তিনি।
সুলতান আহম্মেদের মতো রতনপুর ইউনিয়ন যুবলীগের নেতা রাজু বলেন, যদি যোগ্যতা দ্বারা পরিমাপ করা হয় তাহলে শেখ মাসুদা খানম মেধা কোনো অংশে কম নয়। একটি ব্যাংকে চাকরি করলেও তিনি কখনও জনসেবা থেকে পিছপা হননি।
তিনি দাবি করেন, আপনারা গণমাধ্যম কর্মী খোজঁ নেন তাহলে আপনারাও আমাদের সাথে একমত হবেন যে একজন নেত্রী ও ব্যক্তি হিসেবে মাসুদা কতটুকু জনপ্রিয়।
এ সময় যুবলীগের এই নেতা বলেন, এই আসনে তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা বিভক্ত। এখানে যেমন জামায়াতের প্রভাব আছে তেমন জাতীয় পার্টির। এ কারণে যদি দল বিতর্কিত ও জনগণ থেকে বিচ্ছিন্ন কাউকে মনোনয়ন দেয় তাহলে তৃণমূলের বিভক্ত নেতা-কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ করা অনেক কঠিন হয়ে যাবে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে শ্যামনগর উপজেলা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতারা জানান, বর্তমানে সাতক্ষীরা ৪ আসনের রাজনীতি ঘৃর্ণীত পর্যায়ে পৌঁছেছে। এতোটাই ঘৃর্ণীত পর্যায়ে পৌঁছেছে যে কোনো মনোনয়ন প্রত্যাশী যদি সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড প্রচারণা বা তৃণমূল পর্যায়ের নেতা-কর্মীদের সাথে মতবিনিময় করার উদ্যোগ নেন সেখানে দলীয় নেতা-কর্মীদের না যেতে অপরপক্ষ হুমকি-ধামকি দেয়।
ঘৃর্ণীত এই রাজনীতির অবসান চেয়ে তারা বলেন, বিভিন্ন কারণে দলীয় নেতা-কর্মীরা আজ বিভক্ত। সবাই ক্ষমতা ধরে রাখতে মরিয়া। তবে এখন নতুনদের সুযোগ দেওয়া দরকার। তা না হলে ভর্বিষতে আরও কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে পারে আওয়ামী লীগ।
শেখ মাসুদা খানম মেধা প্রসঙ্গে তারা বলেন, নিঃসন্দেহে মাসুদা একজন জনপ্রিয় কর্মীবান্ধব নেত্রী। দল যদি তাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে আমাদের কোনো আপত্তি থাকবে না। তবে বিতর্কিত কেউ মনোনয়ন পেলে আমরা হয়তো দলের স্বার্থে তাকে সমর্থন করব। তবে সাধারণ জনগণ কী করবে সেটা বলা মুশকিল। এ কারণে, আমরা বিশ্বাস করি আমাদের প্রিয় নেত্রী শেখ হাসিনা আপা সবকিছু বিবেচনা করে যোগ্য ব্যক্তিকে এই আসনে দলীয় মনোনয়ন দিবেন।
মনোনয়ন পাবার ব্যাপারে আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ মাসুদা খানম মেধা বলেন, দলকে ভালোবেসে অনেক ত্যাগ স্বীকার করে ছাত্রজীবন থেকেই আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকা রেখে আসছি। আশা করি দল সেটি মূল্যায়ন করবে। আর দল যদি আমাকে মনোনয়ন দেয় তাহলে এ আসনটি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে উপহার দিতে পারবেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এসআইএইচ