শনিবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৫ | ৬ বৈশাখ ১৪৩২
Dhaka Prokash

পরিবর্তন আনা হলো সাতক্ষীরার আম সংগ্রহের ক্যালেন্ডারে

সংবাদ প্রকাশের পর টনক নড়েছে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিভাগের। পরিবর্তন আনা হয়েছে আম ক্যালেন্ডারে। বুধবার (৩ মে) দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসকের আইডি থেকে একটি ছবিযুক্ত পোস্টের মাধ্যমে বিষয়টি জানানো হয়। শুধুমাত্র গোবিন্দভোগ প্রজাতির আম ভাঙার তারিখে পরিবর্তন করা হলেও অন্যান্য আম ভাঙার ক্ষেত্রে আগের আম ক্যালেন্ডার বিদ্যমান রয়েছে।

এর আগে বুধবার (৩ মে) সকালে 'ঢাকাপ্রকাশ' অনলাইন নিউজ পোর্টালে ‘‘আম ক্যালেন্ডারে আর্থিক ক্ষতির দাবি সাতক্ষীরার চাষি-ব্যবসায়ীদের’’ শীর্ষক শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশ করা হয়। সংবাদটি প্রকাশের সাথে সাথে আলোচনা ও সমালোচনার মুখে পড়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিভাগ। এর কয়েক ঘণ্টার ভিতরে শুধুমাত্র গোবিন্দভোগ প্রজাতির আম ভাঙার তারিখ পরিবর্তন করে পুনরায় সংশোধিত আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করে জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ। তবে এই সংশোধিত আম ক্যালেন্ডার যুক্তিসঙ্গত ক্যালেন্ডার নয়। বরং এতে চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত ও হয়রানির শিকার হবে বলে ধারণা নাগরিক সমাজের।

তবে পরিবর্তন নয় বরং আম ক্যালেন্ডার পুরোপুরিভাবে বাতিল চান প্রান্তিক পর্যায়ের চাষীরা। তারা জানান, এই আম ক্যালেন্ডারটা অযৌক্তিক। কেউ যদি কেমিক্যাল দ্রব্য দিয়ে আম বাজারজাত করে তাহলে প্রশাসন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিক। একজনের অপরাধের জন্য হাজার হাজার চাষির রিযিক নিয়ে নয়-ছয় সিদ্ধান্ত নেওয়া মোটেও যুক্তিসংগত না। আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জে যদি সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ আম ক্যালেন্ডার না করে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। তাহলে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ কেন নিয়ন্ত্রণ করতে পারবে না? বলে প্রশ্ন রাখেন তারা।

জেলা কৃষি বিভাগ সূত্রে জানা যায়, চলতি বছর জেলার ৪ হাজার ১১৫ হেক্টর জমিতে আম চাষ করেছেন ১৩ হাজার ১০০ চাষি। যার উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫ হাজার ৫০০ মেট্রিক টন। আর চাষ করা ওই আমের ভিতরে শুধুমাত্র ল্যাংড়া আম ব্যতিত গত দুই বছরের ব্যবধানে বিভিন্ন প্রজাতির আম ভাঙতে পেছানো হয়েছে ১০ থেকে ১১ দিন।

জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের কারণে প্রতি বছর আর্থিকভাবে ক্ষতির মুখে পড়ছে সাতক্ষীরার আম চাষিরা। কেননা, ভৌগলিক কারণে দেশে প্রথম আম পাকে সাতক্ষীরায়। সেখানে জেলা প্রশাসন ও জেলা কৃষি বিভাগ প্রতি বছর আম ভাঙার তারিখ পিছিয়েছে। কারণ হিসেবে তারা বলছে, 'অপরিপক্ব কেমিক্যাল মেশানো আম বাজারজাত রোধে তাদের এই সিদ্ধান্ত।' এখন জেলা প্রশাসনের সিদ্ধান্ত যদি যৌক্তিক হয় তাহলে সংশোধিত আম ক্যালেন্ডার কেন প্রকাশ করল? সেটা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে জনমনে! সংশ্লিষ্টরা বলছেন, জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের সমন্বয়ে প্রকাশিত সংশোধিত আম ক্যালেন্ডার প্রমাণ করে তাদের নেওয়া সিদ্ধান্তগুলো ভুল ছিল।

খোজঁ নিয়ে জানা যায়, দেশের অধিকাংশ জায়গায় আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ না করা হলেও সেক্ষেত্রে ভিন্ন সাতক্ষীরা। গেল দুই বছরের ব্যবধানে এবার বিভিন্ন প্রজাতির আম (ল্যাংড়া আম ব্যতিত) ভাঙার তারিখ পেছানো হয়েছে ১০ থেকে ১১ দিন। আর জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের এমন সিদ্ধান্তের কারণে সাতক্ষীরার আম থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে বিভিন্ন এজেন্ট। প্রকাশিত আম ক্যালেন্ডারের ওই সময়ে দেশের অন্যান্য জায়গার আম পাকে। আর সাতক্ষীরার চেয়ে বাজার দর কম ও পরিবহন খরচ কম হওয়াতে ওই সমস্ত এলাকায় ঝুঁকছেন এজেন্টরা। এতে করে ইউরোপসহ বিশ্ববাজারে এবার সাতক্ষীরার আম রপ্তান্তিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।

এদিকে, ঢাকাপ্রকাশে ওই সংবাদ প্রকাশের পর স্বস্তি ফিরেছে আম ব্যবসায়ী ও চাষিদের মাঝে। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে নাম প্রকাশ করতে আগ্রহী নন কেউ।

এ প্রসঙ্গে জেলার একাধিক আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলেন, জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের হুটহাট সিদ্ধান্তের কারণে এবার সবচেয়ে আর্থিক ক্ষতির সম্মুখীন তারা। তারা যে সময়টা বেঁধে দিয়েছে সে সময়ের আগে সিংহভাগ বাগানে আম পাকবে। এখন মুখে যত বলুক আম অগ্রিম পাকলে ভাঙা যাবে। তবে বাস্তবতা অনেকটা ভিন্ন। এতে আম চাষি ও ব্যবসায়ীদের প্রচুর হয়রানির শিকার হতে হয় বলে দাবি করেন তারা।

তারা আরও বলেন, আমটা কখন পাকবে সেটা আবহাওয়া ও ভৌগলিক অবস্থার উপর নির্ভর করে। অথচ জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে। কারণ হিসেবে তারা (জেলা প্রশাসন ও কৃষিবিভাগ) বলছে, নিরাপদ আম বাজারজাত করতে তাদের এমন সিদ্ধান্ত। এখন কিছু সময়ের জন্য হলেও আমরা মেনে নিলাম প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ নিরাপদ আম বাজারজাত করতে কঠোর ভূমিকা রাখছে। তবে আপনারা (সাংবাদিকরা) নিশ্চয় অবগত আছেন, গত সোমবার দেবহাটাতে ৮ টন আম নষ্ট করে উপজেলা প্রশাসন। আর কয়েক টন কাঁচা আম জব্দ করে স্থানীয় বাজারে আচারের জন্য বিক্রি করে। যে আম গুলো নষ্ট করা হয়েছে সেগুলো কেমিক্যাল মিশ্রিত ও স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বলে জানানো হয়। অথচ নামমাত্র ওই আম নষ্ট করার পর প্রশাসন ও গণমাধ্যম কর্মীদের উপস্থিতিতে ওই আম নিতে স্থানীয়দের ভিতরে লঙ্কাকাণ্ড শুরু হয়। অথচ সেই সময় নিশ্চুপ ছিলেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।

ক্ষোভ প্রকাশ করে আম চাষি ও ব্যবসায়ীরা বলেন, এমনটা না যে অপরিপক্ব আম খাওয়া যায় না বা সেটা থেকে কিছু তৈরি করা যায় না। অপরিপক্ব আম দিয়ে আচার, চাটনী তৈরি হয়। এ কারণে অনেক ব্যবসায়ী অপরিপক্ব আম বাজারজাত করেন। অথচ দেবহাটার ওই ঘটনায় দেখুন। যেখানে একটি মিনি পিকাপে অপরিপক্ব কাঁচা আম জব্দ করে প্রশাসন। ওই আমে কোনো কেমিক্যাল পাওয়া না গেলেও প্রশাসন সেটা স্থানীয় বাজারে বিক্রির সিদ্ধান্ত নেয়। এখন কোনটা ঠিক কোনটা বেঠিক সেটা আমাদের চেয়ে আপনারা ভালো অনুমান করতে পারবেন বলে সাংবাদিকদের জানান তারা।

এ বিষয়ে দেশের একমাত্র আম গবেষণা কেন্দ্রের (চাপাইনবাবগঞ্জ) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. মো. কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আবহাওয়া ও ভৌগলিক অবস্থান ভেদে দেশের বিভিন্ন জায়গাতে একেক সময় আম পাকে। একটা সময় চাঁপাইনবাবগঞ্জে আম ক্যালেন্ডার হতো। তবে এই তিন বছর এই জেলাতে কোনো আম ক্যালেন্ডার করা হয় না।’

আম ক্যালেন্ডার না করার কারণ হিসেবে তিনি বলেন, ‘দীর্ঘ গবেষণার প্রেক্ষিতে যখন আমরা বুঝতে পারলাম আম ক্যালেন্ডারের কারণে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি তখন ওই আম ক্যালেন্ডারের সিদ্ধান্ত থেকে সরে এসেছি। বর্তমানে এখনকার চাষিরা তাদের সুবিধা মতো আম বাজারজাত করেন। আর আমরাসহ সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ বাজার মনিটরিং করি। যাতে কেমিক্যাল মিশ্রিত আম কেউ বাজারজাত করতে না পারে।’

এক্ষেত্রে ওই এলাকার সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কৃষি বিভাগের প্রতি ওই কর্মকর্তার পরামর্শ জানতে চাইলে কামরুল ইসলাম বলেন, ‘আম ক্যালেন্ডারের কারণে চাষি-ব্যবসায়ী উভয়ে কম-বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে। এখন আম ক্যালেন্ডার না করে যদি বাজার মনিটরিং ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাশি গুরুত্ব দেওয়া হয় তাহলে কেমিক্যাল মিশ্রিত আম বাজারজাত না হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এতে করে একদিকে যেমন অসাদু ব্যবসায়ীরা কোণঠাসা হয়ে পড়বে অপরদিকে প্রান্তিক পর্যায়ের চাষিরা তাদের সুবিধা মতো আম বাজারজাত করতে পারবে।’

এ প্রসঙ্গে সাতক্ষীরা জেলা নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক অ্যাড. শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, ‘সব কিছুর একটি সিষ্টেম রয়েছে। এমন কিছু করা ঠিক না যেখানে লাভের চেয়ে ক্ষতির পরিমাণটা বেশি হয়। জেলা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ যে আম ক্যালেন্ডার প্রকাশ করেছে সেটা সম্পূর্ণ অযৌক্তিক একটি সিদ্ধান্ত।

তিনি বলেন, ‘কাঁচা আম দিয়ে তো অনেক কিছু তৈরি করা যায়। তাহলে আম চাষিরা কেন অপরিপক্ব অবস্থায় আম ভাঙতে পারবে না? প্রশাসনের উচিত বাজার মনিটরিং করা। যাতে কেমিক্যাল মিশ্রিত আম বাজারজাত না হয়।'

আমের রাজধানী চাঁপাইনবাবগঞ্জের প্রসঙ্গ তুলে ধরে শেখ আজাদ হোসেন বেলাল বলেন, ‘দেশের ভিতরে আমের জন্য বিখ্যাত চাঁপাইনবাবগঞ্জ। যেখানে সাতক্ষীরার চেয়ে ৯ গুণ বেশি আমের চাষ হয়। অথচ সেখানে এই তিন বছর আম ক্যালেন্ডার হয় না। বরং সেখানকার চাষিরা তাদের সুবিধা মতো আম বাজারজাত করেন। আর সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ কঠোরভাবে সেটা মনিটরিং করেন। যাতে কেমিক্যাল মিশ্রিত আম কেউ বাজারজাত করতে না পারে। আর এটাতে তারা সফলও হয়েছে।’

চাপাইনবাবগঞ্জে সংশ্লিষ্ট প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ আম ক্যালেন্ডার ব্যতিত ভেজালমুক্ত আম বাজারজাত করতে সফল তবে সাতক্ষীরা প্রশাসন ও কৃষি বিভাগ কেন পারে না? এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘এটা মূলত দায়িত্ব গাফিলতি হিসেবে ভাবতে পারেন। সরকার প্রতিটি সেকশনে একাধিক কর্মকর্তা নিয়োগ করেছে জনগণের সুবিদার্থে। তাদের উচিত সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করা। এখন সেটা না করে যদি অযৌক্তিকভাবে কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় আর সেই সিদ্ধান্তের প্রেক্ষিতে যদি ভুক্তভোগীরা নিরব থাকে তাহলে এমন ঘটনা অনবরত ঘটতে থাকবে।’

এ সময় ক্ষোভ প্রকাশ করে এই নাগরিক নেতা বলেন, ‘নাগরিক নেতা হওয়ার সুবাদে আমরা বিভিন্ন বিষয়ে অবগত। এই আম ক্যালেন্ডারের কারণে অনেক সরকারি কর্মকর্তা অর্থ নিয়ে অগ্রিম আম ভাঙার অনুমতি দিচ্ছে। অথচ খেটে খাওয়া চাষিরা বা বসত আঙিনায় যারা আম চাষ করেন তারা চাইলে তাদের অগ্রিম পাকা আম বিক্রি করতে পারছেন না। এতে নানা ধরনের হয়রানির শিকার হতে হচ্ছে তাদের।’

এ জন্য আম ক্যালেন্ডার বাতিল করে বাজার মনিটরিং ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কে চেকপোষ্ট বসিয়ে তল্লাসি চালাতে প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।

এর আগে এ ব্যাপারে সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ (খামারবাড়ি) অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক কৃষিবিদ মো.সাইফুল ইসলাম বলেছিলেন, 'আম ক্যালেন্ডারের কারণে কোনো চাষি ও ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে না।'

এসআইএইচ

Header Ad
Header Ad

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার ৫০ শয্যাবিশিষ্ট উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসা নিতে আসেন ভূঞাপুর ছাড়াও আশপাশের গোপালপুর, ঘাটাইল ও কালিহাতী উপজেলার অসংখ্য মানুষ। তবে জনগুরুত্বপূর্ণ এই হাসপাতালটি বর্তমানে নিজেই এক অসুস্থ প্রতিষ্ঠান হয়ে উঠেছে।

বছরের পর বছর ধরে চলে আসা নানা অব্যবস্থাপনা, জনবল ও যন্ত্রপাতির ঘাটতি এবং অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ—সব মিলিয়ে এই সরকারি হাসপাতালটি এখন রোগীদের ভোগান্তির আরেক নাম।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের ভিতর ও বাইরের পরিবেশ একেবারেই নোংরা ও দুর্গন্ধযুক্ত। নিয়মিত পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভাবে জমে থাকা ময়লা-আবর্জনা থেকে ছড়াচ্ছে তীব্র দুর্গন্ধ, যা রোগী ও তাদের স্বজনদের দীর্ঘ সময় ধরে সইতে হচ্ছে। বিশেষ করে টয়লেটের অবস্থা ভয়াবহ; অধিকাংশ টয়লেট ব্যবহারের অযোগ্য এবং পরিচ্ছন্নতার কোনো ব্যবস্থাই নেই। পুরুষ ও নারী ওয়ার্ড উভয়ের রোগীরা এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন।

 

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ

বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় হাসপাতাল কার্যত অন্ধকারে ডুবে যায়। হাসপাতালে একটি জেনারেটর থাকলেও তা চালু করা হয় না এবং সেটিও বহু পুরনো। হাতে গোনা কয়েকটি চার্জিং বাল্ব থাকলেও সেগুলোর অনেকগুলোর আলো টিকেই না, কিছু সময় পর বন্ধ হয়ে যায়। শিশু ওয়ার্ডের (ডায়রিয়া) মতো গুরুত্বপূর্ণ স্থানে চার্জিং বাল্ব পর্যন্ত নেই। ফলে রাতের বেলায় এক ভয়ংকর ভূতুড়ে পরিবেশ সৃষ্টি হয়। আলো না থাকায় নার্সদের মোবাইল ফোনের ফ্ল্যাশলাইট ব্যবহার করে সেবা দিতে দেখা গেছে।

চরম গরমে সবচেয়ে বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন শিশু ও বৃদ্ধ রোগীরা। শিশু ওয়ার্ডে থাকা আটটি ফ্যানের মধ্যে তিনটি সম্পূর্ণ নষ্ট, আর যেগুলো সচল রয়েছে, বিদ্যুৎ না থাকায় সেগুলোও চলে না। ফলে শিশু রোগীরা ভ্যাপসা গরমে হাঁসফাঁস করছে, তাদের স্বজনরা হাতপাখা বা চার্জার ফ্যান নিয়ে চেষ্টা করছেন কিছুটা স্বস্তি দিতে।

হাসপাতালের বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রবেশ করে দেখা যায়, মেঝেতে ময়লার দাগ, দেয়ালে থুতু, কফ ও পানের পিকের ছিটা। শয্যা ও ওষুধ রাখার ট্রেগুলোতেও দেখা গেছে মরিচা ও জমে থাকা ময়লা। এসব স্থানে মাছি ঘুরে বেড়াচ্ছে অবলীলায়, যা পুরো হাসপাতালের অস্বাস্থ্যকর পরিবেশকে আরও প্রকট করে তুলেছে।

এমন পরিবেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন বীর মুক্তিযোদ্ধা আকবর আলী, যিনি হাসপাতালের বারান্দায় ফ্যানহীন পরিবেশে ভর্তি রয়েছেন। অভিযোগ করে তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় দেওয়ার পরও কোনো বিশেষ সুবিধা দেওয়া হয়নি। টয়লেট ব্যবহারের অনুপযোগিতা নিয়েও তিনি তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

তিন মাসের শিশুকে নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোজিনা বেগম বলেন, টয়লেটের অবস্থার কারণে তিনি পানি ও খাবার খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন, যেন টয়লেট ব্যবহার না করতে হয়। টয়লেটে ঢোকা তো দূরের কথা, পাশে দাঁড়ানোও কষ্টকর হয়ে পড়েছে দুর্গন্ধ ও অপরিচ্ছন্নতার কারণে।

গোপালপুর উপজেলার বড়শিলা গ্রামের রোগীর স্বজন সাজেদা বেগম বলেন, এখানে চিকিৎসা নিতে এসে রোগীর স্বজনরাও অসুস্থ হয়ে পড়ছে। কোনো অভিযোগ করার সুযোগ নেই, আর কেউ কিছু বললেও কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না।

স্থানীয়দের দাবি, ২০২২ সালে ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচও) হিসেবে যোগদানের পর থেকেই হাসপাতালের এই বেহাল অবস্থা তৈরি হয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক কর্মকর্তা, কর্মচারী ও নার্স জানান, ডা. সোবহান কর্তৃত্ববাদী মনোভাব পোষণ করেন। তার বিরুদ্ধে স্বেচ্ছাচারিতা, দুর্নীতি ও অব্যবস্থাপনার অভিযোগ থাকলেও প্রশাসনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। উল্টো অভিযোগকারীরা বদলি বা হয়রানির শিকার হওয়ার আশঙ্কা করছেন।

তবে আরএমও ডা. খাদেমুল ইসলাম বলেন, “সমস্যা যে নেই, সেটা বলছি না। তবুও আমরা সীমিত জনবল ও সামর্থ্যে কাজ করে যাচ্ছি। শতভাগ কাজ সম্ভব হয় না।”

এ বিষয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আব্দুস সোবহান বলেন, “জেনারেটর থাকলেও সেটি চালাতে সরকারি বরাদ্দ নেই। মাঝেমধ্যে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় চালানো হয়। ক্লিনার মাত্র একজন, মাঝে মাঝে বাইরে থেকে লোক ডেকে এনে পরিষ্কার করাতে হয়। আর ফ্যান বা লাইট যেকোনো সময় নষ্ট হতে পারে, যখন জানা যায়, তখনই ব্যবস্থা নেওয়া হয়।” বীর মুক্তিযোদ্ধার বারান্দায় চিকিৎসা নেওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, “মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য কেভিনের ব্যবস্থা রয়েছে। যদি এমন কিছু হয়ে থাকে, তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”

সার্বিকভাবে ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্যকমপ্লেক্সে চিকিৎসাসেবা যে ভয়াবহ নাজুক অবস্থায় রয়েছে, তা এই চিত্রগুলো স্পষ্ট করে দেয়। দ্রুত সময়ের মধ্যে যথাযথ নজরদারি ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা না নিলে, এই হাসপাতাল রোগীদের সুস্থতার জায়গা হয়ে না থেকে এক ভয়াবহ দুর্ভোগের কেন্দ্রে পরিণত হতে পারে।

Header Ad
Header Ad

জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের

জাতীয় পার্টি (জাপা) কোনো সুবিধাবাদী দল নয় বলে দাবি করেছেন দলটির চেয়ারম্যান জি এম কাদের। আজ শনিবার সকালে রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে আয়োজিত বর্ধিত সভায় তিনি এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, আমাদের নামে অনেক ধরনের অপপ্রচার করা হচ্ছে। কিছু মানুষ আমাদেরকে নানাভাবে হেনস্তা করার চেষ্টা করছেন। সোশ্যাল মিডিয়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন মাধ্যমে বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে জানাশোনা কথাকে তারা ভুলভাবে তুলে ধরছেন। তাদের কথা হলো- আমরা সুবিধাবাদী, সুবিধাভোগী।

জাপা চেয়ারম্যান বলেন, আমরা বলতে চাই জাতীয় পার্টির সিংহভাগ মানুষ সব সময় জনগণের পাশে ছিল। জনগণের স্বার্থে তারা সংগ্রাম করেছে। আগামীতেও তারা জনগণের পাশেই থাকবে।

 

Header Ad
Header Ad

প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি

ছবি: সংগৃহীত

ওপার বাংলার জনপ্রিয় নির্মাতা সৃজিত মুখার্জিকে হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। গুরুতর সমস্যা নিয়ে শুক্রবার মধ্যরাতে কলকাতার একটি বেসরকারি হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে। পরে চিকিৎসকরা তাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণের জন্য আইসিইউতে নিয়ে যান।

পরিচালকের ঘনিষ্ঠ সুত্রের বরাত দিয়ে ভারতীয় গণমাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে, গতকাল রাতে হঠাৎই শ্বাসকষ্ট শুরু হয় সৃজিতের। সেই সঙ্গে বুকে হালকা ব্যথাও অনুভব করছিলেন পরিচালক। এরপর রাত সাড়ে ১২ টার দিকে দ্রুত হাসপাতালে নেয়া হয় তাকে।

সেখানে রাতেই বেশ কিছু টেস্ট করানো হয়। শনিবার টেস্টের রিপোর্ট পাওয়ার কথা রয়েছে। আর তা দেখে চিকিৎসকেরা সিদ্ধান্ত নেবেন কতদিন পরিচালককে হাসপাতালে থাকতে হবে।

আরও পড়ুন: অন্তরঙ্গ দৃশ্যের আগে প্রেমিক ও পরিবারের অনুমতি নিয়েছিলেন কৌশানি। তবে হাসপাতাল সূত্র জানিয়েছে, সৃজিতের শারীরিক অবস্থা আপাতত স্থিতিশীল।

সদ্যই লিমকা বুক অফ রেকর্ডসের তালিকায় স্থান দখল করেছে সৃজিতের ‘অতি উত্তম’। ইনস্টাগ্রামে গর্বের কথা শেয়ার করেছেন তিনি। তাছাড়া এই নির্মাতার নতুন সিনেমা ‘কিলবিল সোসাইটি’ মুক্তি পেয়েছে গত ১১ এপ্রিল।

Header Ad
Header Ad

সর্বশেষ সংবাদ

ভূঞাপুর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স হাসপাতালই যেন নিজেই অসুস্থ!
জাতীয় পার্টি কোনো সুবিধাবাদী দল নয়: জিএম কাদের
প্রচণ্ড শ্বাসকষ্ট নিয়ে আইসিইউতে পরিচালক সৃজিত মুখার্জি
জুলাই গণঅভ্যুত্থান যেন কোনোভাবেই ব্যর্থ না হয় : নাহিদ ইসলাম
আ.লীগের মিছিল ঠেকাতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টার নির্দেশ
হাসিনা-কাদেরসহ ১২ জনের বিরুদ্ধে ইন্টারপোলে ‘রেড নোটিশ’ জারির আবেদন
নিখোঁজের ১৪ ঘণ্টা পর সেই শিশু সেহেরিশের লাশ উদ্ধার
আগামী ঈদের আগেই রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনে কাজ করছে সরকার
লাল কাপড়ে ঢাকা হবে দেশের সব পলিটেকনিকের ফটক
৬০ বছর বয়সে বিয়ে করলেন বিজেপি নেতা দিলীপ ঘোষ
চুয়াডাঙ্গা সীমান্তে ১২ কেজি রূপার গয়না জব্দ
ফয়জুল করীমকে বরিশালের মেয়র ঘোষণার দাবি
রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে অংশ নেওয়া বাংলাদেশি যুবক নিহত
গোবিন্দগঞ্জে সাবেক ইউপি চেয়ারম্যান আটক
বাংলাদেশি যুবককে ধরে নিয়ে বিএসএফের হাতে তুলে দিল ভারতীয়রা
জাতীয় ঐকমত্য কমিশনের সঙ্গে এনসিপির বৈঠক শনিবার
বাংলাদেশের সঙ্গে বৈঠক নিয়ে বিজ্ঞপ্তিতে যা জানাল পাকিস্তান
গাজায় ইসরায়েলের বিমান হামলা, শিশুসহ একই পরিবারের ১৩ জন নিহত
ভারতীয় ক্রিকেটাররা আমাকে নগ্ন ছবি পাঠাত, অভিযোগ ট্রান্সজেন্ডার ক্রিকেটারের
১৮৭ জনকে নিয়োগ দেবে শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর