যশোরে বন্ধ হয়ে গেল ১৫৭৯টি মুরগি খামার
যশোরে দুই বছরে বন্ধ হয়ে গেছে ১৫৭৯টি মুরগি খামার। দফায় দফায় খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ায় খামারিদের লোকসানের কারণেই বন্ধ হয়ে যায় এসব খামার। আবার এ খাতে শিল্প প্রতিষ্ঠানের বড় বিনিয়োগ থাকায় ছোট খামারিরা প্রতিযোগিতা করে টিকে থাকতে পারছে না বলে জানান তারা।
যশোর জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ২০২০ সালে জেলায় মুরগির খামার ছিল ২ হাজার ৭২৩টি। এর মধ্যে পোলট্রি ছিল এক হাজার ৪২৩টি এবং ব্রয়লার ছিল এক হাজার ৩০০। এখন সেখানে টিকে রয়েছে এক হাজার ১৪৪টি।
ঝিকরগাছার মোবারকপুর গ্রামের ওহিদুজ্জামান শাওন জানান, আমার লেয়ার খামারে ৪ হাজার ২০০ মুরগি রয়েছে। প্রতিদিন ৩ হাজার ডিম পাওয়া যায়। যা দিয়ে গত ৩ বছর আগেও ভালো ছিলাম। তখন ৭-৮ টাকায় ডিম বিক্রি করতাম। কিন্তু এখন ১১ টাকা পিস ডিম বিক্রি করেও লাভের মুখ দেখা যাচ্ছে না। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, এক বছর আগেও প্রতি বস্তা ফিড ১৬০০ টাকা ছিল এখন সেই বস্তা হয়েছে ২ হাজার ৭৫০ টাকা। এছাড়া সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়ে গেছে। এই অবস্থায় টিকে থাকা সম্ভব নয়।
কেশবুপরের বাসিন্দা মশিয়ার রহমান জানান, তার খামারে লেয়ার মুরগি রয়েছে ৭ হাজার। প্রতিদিন গড়ে ৬ হাজার ডিম পাওয়া যায়। বছরখানেক আগেও ডিম বিক্রি করে ভালো অবস্থা যাচ্ছিল। বর্তমান সময়ে মুরগির খাবারের অস্বাভাবিক দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে ডিম বিক্রি করেও লাভ করা যাচ্ছে না। সেই সাথে মুরগির সব ধরনের ওষুধের দাম বেড়েছে। এ ছাড়াও পোলট্রি খাতে শিল্প প্রতিষ্ঠান জড়িত থাকায় ছোট খামারিরা টিকতে পারছে না। কেননা শিল্প প্রতিষ্ঠানগুলো নিজেরাই ফিড ও ওষুধ তৈরি করে নিজেদের খামারে ব্যবহার করেন। সেই কারণে তারা কম দামে এগুলো পেয়ে থাকে। আর আমাদের মতো খামারিরা সেই খাদ্য বা ওষুধ কিনতে হচ্ছে তাদের থেকে বেশি দামে।
উপজেলার খতিয়াখালি গ্রামের শিলা রানী বলেন, তাদের খামারে ৩৫০০ মুরগি রয়েছে। খামারে প্রতিদিন ৩২০০ ডিম পাওয়া যায়। এই ডিম বাজারে বর্তমানে সাড়ে ১০ টাকা করে বিক্রি করছি। মুরগির খাদ্যের দাম তিনগুণ বেড়েছে কিন্তু ডিমের দাম পিসে ২ টাকা বেড়েছে। এতে করে ডিম বিক্রি করে লাভ হচ্ছে না। কোনো রকম টিকে থাকতে হচ্ছে। যদি সামনে ভালো সময় আসে এই ভরসায়।
যশোর শহরের পোলট্রি ফিড খাবার বিক্রেতা সাব্বির আহমেদ জানান, গত এক বছরের ব্যবধানে মুরগির খাবারের দুই-তিনগুণ দাম বেড়েছে। আগে যেখানে ভুট্টার কেজি ছিল ১৮ টাকা, সেটি এখন ৩৬ টাকা। রাইসপলিস ২৮ টাকার জায়গায় বিক্রি করছি ৩৩ টাকায় এবং সয়াবিন ছিল ৩৮ টাকা, সেটি এখন ৮৫ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে।
তিনি বলেন, দাম বৃদ্ধির কারণে অনেক ছোট খামারি ব্যবসা ছেড়ে দিচ্ছেন। এতে আমাদের ব্যবসাও ছোট হয়ে আসছে। বাজারে লেয়ার মুরগির বাচ্চা ৪৩ টাকা, ককরেল ১৮ টাকা এবং ব্রয়লার বাচ্চা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা পিস হিসেবে।
জেলা প্রাণীসম্পদ কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, যশোরের আফিল পোলট্রি ফার্ম বৃহৎ পরিসরে ডিম ও একদিনের বাচ্চা উৎপাদন করছে। তাদের ডিম পাড়া মুরগি রয়েছে ৬ লাখ ৭২ হাজার। ৩ লাখ মুরগি থেকে মাংস উৎপাদন হয়। আর প্রতি মাসে ডিম উৎপাদন হয়ে থাকে ১ কোটি ৩৬ লাখ ৮ হাজার পিস।
এ প্রসঙ্গে আফিল গ্রুপের পরিচালক মাহবুব আলম বলেন, আমাদের ফার্ম এই অঞ্চলে পোলট্রি খাতে অবদান রেখে চলেছে। প্রতিদিন ৬ লাখ ৭২ হাজার ডিম উৎপাদন হচ্ছে, যা এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যস্থানে পাঠানো হয়।
এ ব্যাপারে যশোর জেলা প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রাশেদুল হক জানান, পোলট্রি খাতে আমাদের জেলা অসামান্য অবদান রেখে চলেছে। আমরা নিয়মিত সব খামারিদের সাথে যোগাযোগ করে পরামর্শ দিচ্ছি। এতে করে পোলট্রি খাত বড় হচ্ছে। তবে খাবারের দাম বেড়ে যাওয়ার কারণে বাজারে প্রতিযোগিতায় ছোট খামারিরা টিকতে পারছে না। এতে করে তারা ব্যবসা গুটিয়ে নিচ্ছেন। খাবারে ভুট্টা লাগে ৫৫ শতাংশ। সেটির দাম বেড়ে দ্বিগুণ হয়েছে। গত দুই বছরের ব্যবধানে এক হাজার ৫৭৯টি মুরগি খামার বন্ধ হয়ে গেছে।
এসআইএইচ