পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান
যশোরসহ ৪ জেলায় পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান। বাকী জেলাগুলো হলো- ঝিনাইদহ, মাগুরা ও নড়াইল। এই জেলাগুলোর মধ্যে ২১টি উপজেলায় ৬৭ ধরনের ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
যশোর ও মাগুরার ১২ উপজেলায় ৫ হাজারেরও উপরে বিভিন্ন ভার্সনের মিল-কারখানা, বেকারি, ইট ভাটা ও অন্যান্য প্রতিষ্ঠান রয়েছে। কিন্তু জনবল সংকটের কারণে তদারকি কিংবা ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারছে না অধিদপ্তর। দুই জেলার বিপরীতে যশোর অফিসে সৃষ্ট পদ মাত্র ১৪টি। এর মধ্যে লোকবল আছে মাত্র ৫ জন। খাতা-কলমে ইটভাটাসহ অনুমোদিত উৎপাদন প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা এক হাজার।
পরিবেশ অধিদপ্তর সূত্রের দাবি, ওই ৯ সহস্রাধিক ছোট-বড় উৎপাদন, ফিটিং, প্যাকেজিং, রাসায়নিক প্রতিষ্ঠান ও কারখানা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র ছাড়া চলায় বছরের পর বছর মোটা অংকের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার। এ ছাড়া সচেতনতার অভাবে এবং বিদ্যুৎ বিভাগের গাফিলতির কারণে ছাড়পত্র ছাড়াই অনেক প্রতিষ্ঠান পেয়ে যাচ্ছে বিদ্যুৎ সংযোগ। যথাযথ সার্ভে ও তদারকি ত্বরান্বিত করতে দ্রুত এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে উচ্চ মহলের হস্তক্ষেপ জরুরি।
পরিবেশ অধিদপ্তর ও দোকানপাট পরিদর্শন অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানিয়েছে, ৫ জন শ্রমিক থেকে শুরু করে অর্ধশত শ্রমিক কাজ করে এমন অগনিত উৎপাদন প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে বৃহত্তর যশোরের বিভিন্ন শহর পাড়া-মহলা, বাজার, এমনকি প্রত্যন্ত অঞ্চল গ্রামেও। বিস্কুট, চানাচুর, পাউরুটি, গুল, মাজন, রাইস মিল, ওয়েলডিং, করাত কল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, মবিল কারখানা, গ্রিস কারখানা, সার কারখানা, বিভিন্ন ভার্সনের প্লাস্টিক কারখানা, বেকারি, হোটেল, রেস্টুরেন্ট, ইদুর নাশক, রিফ্যাক্টরিজ, হাসপাতাল, ব্যটারি প্রতিষ্ঠান, টায়ার টিউব, কার্পেট বোর্ড রাসায়নিক, পালিশ, কৃত্রিম রাবার, চিনি, কাপড় রঙ রাসায়নিক প্রক্রিয়াকরণ, লোহা ও ইস্পাত প্রস্তুত, এসিডসহ আরো অনেক ভার্সনের প্রতিষ্ঠানের পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র নেই। যথাযথ সার্ভের অভাবে এর পুঙ্খানুপুঙ্খ পরিসংখ্যানও খাতা-কলমে নেই অধিপ্তরের কাছে।
তবে কয়েকটি এলাকায় এ ধরনের প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা ও অবস্থান অনুযায়ী জানা গেছে, যশোর, মাগুরা, ঝিনাইদহ ও নড়াইল জেলায় প্রতিষ্ঠানের সংখ্যা কম পক্ষে ১০ হাজার। এর মধ্যে এসব প্রতিষ্ঠানের পরিবেশগত দিক দেখাশুনার জন্য যশোর পরিবেশ অধিদপ্তরে জনবল আছে মাত্র ৫ জন। এখানে অনুমোদিত পদের সংখ্যা ১৪ জন। আছেন একজন উপ-পরিচালক। দুইজন সহকারী পরিচালকের মধ্যে আছেন একজন, দুইজন পরিদর্শকের মধ্যে আছেন ১ জন। দুইজন নমুনা সংগ্রহকারীর মধ্যে আছেন ১ জন। অফিস সহকারী পদে কেউ নেই। পদটি শূন্য। ড্রাইভার আছেন একজন। বিপুল সংখ্যক যেসব প্রতিষ্ঠান ছাড়পত্র নেয়নি তাদের প্রতিষ্ঠানগুলোকে নোটিশ দেওয়ার কাজটিও হচ্ছে না।
খাতা-কলমে সার্ভে হিসেব না থাকলেও ২০১০ সাল থেকে যশোর অধিদপ্তরের কার্যক্রম । আর গত ১২ বছরে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদনের আওতায় এসেছে মাত্র ১ হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান। এদের মধ্যে ৯ হাজার প্রতিষ্ঠান রয়েছে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বাইরে। আবার নতুন অনেক প্রতিষ্ঠান পরিবেশ ছাড়পত্র ছাড়াই গড়ে উঠেছে।
পরিবেশ সংরক্ষণ বিধিমালা ১৯৯৭ অনুযায়ী, ৭৬টি ধরনের প্রতিষ্ঠানে বিদ্যুৎ সংযোগ নিতে পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্র অত্যাবশ্যকীয় করা হলেও অনেক প্রতিষ্ঠানে ছাড়পত্র ছাড়াই বিদ্যুৎ সংযোগ লেগে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের বাইরে থাকা এই অঞ্চলের শিল্প-কারখানা, ক্ষুদ্র শিল্প, কুটির শিল্প, বিভিন্ন খাদ্য উৎপাদন প্রতিষ্ঠান, খাবার হোটেল, ইটভাটা, বরফ কল, আইসক্রিম ফ্যাক্টরি, রাইস মিল, হলুদ মিল, জর্দা কারখানা, বেকারি শিল্প কারখানা, রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহারের প্রতিষ্ঠান থেকে লাখ লাখ টাকা রাজস্ব আয় থেকে বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।
বিপুল সংখ্যক এ ধরনের প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের আওতায় আসলে একদিকে একটি স্বচ্ছ সিস্টেমের মধ্যে চলে আসবে প্রতিষ্ঠানগুলো তেমনি কমে যাবে এই সেক্টরে চলা নানা অসংগতি ও অনিয়ম। সেইসঙ্গে কমবে পরিবেশ ঝুঁকি।
এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদপ্তর যশোরের উপ-পরিচালক সাঈদ আনোয়ার জানান, জনবল সংকটের কারণে প্রয়োজনীয় প্রচার-প্রচারণাও কম হচ্ছে। এ ছাড়াও সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীদের ইতিবাচক মনোভাবের অভাবে অনেক উৎপাদন প্রতিষ্ঠান অনুমোদনের আওতায় আসেনি। অধিদপ্তরের যশোর অফিসের জন্য ১৪টি সৃষ্ট পদ থাকলেও মাত্র ৫ জন রয়েছেন। যেখানে সৃষ্ট পদও কম। তিনিসহ মাত্র ৫ জনের জনবল দিয়ে যতদূর সম্ভব অনুমোদনের বাইরে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো সনাক্ত করে নোটিশ করার চেষ্টা ও তাগিদ অব্যাহত রয়েছে।
তিনি আরও বলেন, এ যাবৎ এক হাজারের মতো প্রতিষ্ঠান পরিবেশের ছাড়পত্রের আওতায় এসেছে। যাতে করে নিজ উদোগে প্রতিষ্ঠান মালিকরা পরিবেশ অধিদপ্তরের ছাড়পত্রের জন্য আবেদন করেন এবং পরিবেশ আইন মেনে চলেন। সেজন্য মাঝে মাঝে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হচ্ছে।
এসআইএইচ