মাগুরায় জার্মানী ভক্তের সাড়ে ৭ কিলোমিটারের পতাকা
আর কয়েক দিন পরেই শুরু হবে কাতার বিশ্বকাপ ফুটবল-২০২২। বিশ্বকাপ ফটবল উন্মাদনায় ইতিমধ্যে মেতে উঠেছে সারা বিশ্ব। প্রায় দেড় যুগ ধরে বিশ্বকাপের সময় জার্মানির বড় পতাকা বানিয়ে আসছেন মাগুরা সদরের ঘোড়ামারা গ্রামের কৃষক আমজাদ হোসেন (৭০)। আজ শুক্রবার সকাল ১০ টায় সদরের নিশ্চিতপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয় মাঠে জার্মানির সাড়ে ৭ কিলোমিটার পতাকা প্রদর্শন করে মাগুরাবাসীতে তাক লাগিয়ে দিয়েছে আমজাদ।
এ পতাকা প্রদর্শন অনুষ্ঠানে তার যোগ দেয় চট্রগ্রাম জেলার জার্মানী ফুটবল ফ্যান ক্লাবের সদস্যরা। পাশাপাশি গ্রামের আপমর জনসাধারণসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। প্রতি বিশ্বকাপেই আমজাদের বানানো পতাকার দৈর্ঘ্য বাড়ে ২০০৬ সালে প্রথমে দেড় কিলোমিটার দৈর্ঘ্যের জার্মানির পতাকা তৈরি করেন তিনি।
২০১০ সালে বিশ্বকাপের সময় পতাকা হয় আড়াই কিলোমিটার। ২০১৪ সালে আমজাদ তৈরি করেন ৩ কিলোমিটার। সর্বশেষ ২০১৮ সালে পতাকার দৈর্ঘ্য ছিল সাড়ে ৫ কিলোমিটার। এবার কাতার বিশ্বকাপ উপলক্ষে আমজাদ হোসেন তৈরি করেছেন সাড়ে ৭ কিলোমিটার দীর্ঘ জার্মানির পতাকা।
সরজমিন আজ শুক্রবার আমজাদের গ্রামে ঘোড়ামারা গিয়ে কথা হয় তার সাথে। তিনি বলেন, ২০০৬ সালে শুরু দিকে পতাকা তৈরি করতে গিয়ে পরিবারের কারও সমর্থন ছিল না। তারপর নিজের জমি বিক্রি করে গড়েছিলাম জার্মামির পতাকা। তবে এবার নিজের সন্তানেরাই পতাকা তৈরির খরচ দিয়েছেন। এবার নতুন করে দুই কিলোমিটার বাড়িয়ে পর্বের পতাকার সাথে যুক্ত করে মুল পতাকার দৈর্ঘ্য হয়েছে সাড়ে ৭ কিলোমিটার।
গত দুই সপ্তাহ ধরে ৪ জন দর্জি মিলে পতাকা সেলাই করেছেন। এবার নতুন দুই কিলোমিটার পতাকা তৈরি করতে ইতিমধ্যে আমার ৯০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। তার মধ্যে কাপড়ে খরচ হয়েছে প্রায় ৭০ হাজার টাকা। পরিবহন ও সেলাই মজুরিতে বাকি টাকা খরচ হয়েছে। শুধু পতাকা তৈরি করেই আমজাদের বিশ্বকাপের উন্মাদনা শেষ হয় না। যে দিন জার্মানির খেলা হয় সেদিন বাড়িতে চলে নানা আয়োজন। জার্মানির খেলা দেখতে তার বাড়িতে ভিড় করে গ্রামের গ্রামের নানা বয়সী মানুষ । আর দল জিতলেই তার খরচ বেড়ে যায় ।
তিনি আরও বলেন, ২০১৪ সালে আমার মা বাদে পরিবারের সবাই পতাকা তৈরি বিপক্ষে ছিল। কিন্তু আমি সেটা শুনি। ২০ শতক জমি বিক্রি করে দিলাম। পেলাম ৫ লক্ষ টাকা। তারপর বাড়িতে প্রজেক্টও কিনে খেলা দেখার আয়োজন করলাম। ২০১৪ সালে তৎকালিন জার্মান রাষ্ট্রদূত মাগুরায় এসে জার্মানির পতাকা ইদ্বোধন করেন। সে সময় আমাকে জার্মান দূতাবাসের পক্ষ থেকে সংবর্ধনা দেওয়া হয়। একই সাথে জার্মান ফুটবল ফ্যান ক্লাবের অজীবন সদস্য প্রদান করা হয় আমাকে।
২০১৮ সালেও জার্মান দূতাবোসের কর্মকর্তারা এসেছিলেন পতাকা প্রদর্শন অনুষ্ঠানে। তবে এ বছর জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসেনের কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতেই নতুন পতাকা প্রদর্শন করা হয়। কথা প্রসঙ্গে আমজাদ আরও বলেন, ২০০৫ সালে দিকে আমি কঠিন পীড়ায় আক্রান্ত হই। বিভিন্ন ঔষধ খেয়েও কোনো কাজ হয় না। তখন মাগুরা শহরের মনোরঞ্জন কবিরাজ নামের একজন চিকিৎসকের পরামর্শে জার্মানির তৈরি হোমিও ঔষধ সেবন করে আরোগ্য লাভ করি। এরপর থেকেই আমি জার্মান দলের ভক্ত।
জার্মান দলের প্রতি রয়েছে আমার অকৃত্রিম ভালোবাসা। বিশেষ করে বিশ্বকাপ ফুটবল এলেই জার্মানির দলের প্রতি ভালোবাসার টানে কিছু একটা করতে ভালো লাগে। তারই আলোকে আমি আমার ভালোবাসার দল জার্মানির পতাকা দৃষ্টি করি। ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধিও পরিকল্পনা আছে আমার। এবারের বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হোক জার্মানী এই প্রত্যাশা আমার।
গ্রামের স্থানীয় শরিফুল ইসলাম বলেন, আমজাদ আমাদের গ্রামের ছেলে। সে দারুন ভক্ত ও পাগল জার্মান দলের। জার্মান দলের প্রতি গভীর ভালোবাসার টানেই সে প্রতি বছর তার তৈরিকৃত পতাকার দৈর্ঘ্য বাড়ায়। এবার তার পতাকার দৈর্ঘ্য হয়েছে সাড়ে ৭ কিলোমিটার। আমিও জার্মান দলের ভক্ত। জার্মান দল এবার বিশ্বকাপ চ্যাম্পিয়ন হোক এটা আমরা চাই।
চট্রগ্রাম থেকে আসা জার্মানি ফুটবল ফ্যান ক্লাবের সদস্য আকতার হোসেন বলেন, আমরা সূদর চট্রগ্রাম থেকে এসেছি আমার প্রিয় দল জার্মানির ভক্ত আমজাদ ভাইকে স্বাগত জানাতে। আমার মনে বাংলাদেশে এত বড় দৈর্ঘ্যে পতাকা আর নেই। আমজাদ সাহস নিয়ে এ পতাকা তৈরি করেছেন। আমি জার্মানিকে ভালোবাসি। জার্মানি এবারের বিশ্বকাপে ফেবারিট দল। তাই এবারের বিশ্বকাপ জার্মানির।
মাগুরার ক্রীড়া সংগঠক বারিক আনজাম বারকি বলেন, আমজাদ ভাই জার্মান দলের দারুন ভক্ত। জার্মান দলের প্রতি ভালোবাসার টানেই সে দীর্ঘ সাড়ে ৭ কিলোমিটার পতাকা তৈরি করেছে। আমরা ফুটবল খেলোয়াড় তৈরি করি। তাই ফুটবলের প্রতি আমাদের ভালোবাসা রয়েছে অনেক।
আমজাদ ভাইয়ের ফুটবলের প্রতি ভালোবাসা আছে বলেই তার এ পতাকা তৈরি করা। আমরা তার সাফল্য কামনা করি। মাগুরা চাউলিয়া ইউপি চেয়ারম্যান হাফিজার রহমান বলেন,আমজাদ আমার এলাকার ছেলে। সে জার্মান দলের পাগল ভক্ত। নিজের জমি বিক্রি করে সে জার্মান দলের পতাকা তৈরি করেছে। যা অনেকেই পক্ষে করা সম্ভব নয়। আমি তার দল জয়ী হোক এ কামনা করছি।
এএজেড