সন্ত্রাসীদের থেকে মুক্ত দেবহাটার ১৩২০ বিঘা জমি

দীর্ঘ দেড় বছর পর সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও ডাকাত দলের অভয়ারণ্যখ্যাত খলিশাখালি জনপদ দখলমুক্ত হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ নভেম্বর) সকালে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসীদের জবরদখল থেকে বিস্তৃর্ণ ওই জমি পুনরুদ্ধার করে নেন প্রায় ৩০০ জন জমির রেকর্ডিয় মালিক। পুনরূদ্ধারের আগমুহুর্তে জমির মালিকপক্ষের খলিশাখালি জনপদে প্রবেশের খবর পেয়েই সেখানকার কয়েকটি মৎস্য ঘেরের বাসায় আগুন ধরিয়ে দেয় ভূমিদস্যু, সন্ত্রাসী ও ডাকাত দলের সদস্যরা। মালিকপক্ষের প্রতিরোধের এক পর্যায়ে সন্ত্রাসীরা পিছু হটলে, সেখানকার অপরাধীদের আস্তানা গুলো ভেঙে গুড়িয়ে দিয়ে জমির দখল নেন মালিকপক্ষ।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, গত বছরের ১০ সেপ্টেম্বর ভোররাতে নোড়ারচকের সন্ত্রাসী ইসমাইল মেম্বার, আকরাম ডাকাত, কালু ডাকাত, গফুর মাস্তানের নের্তৃত্বে মুহুর্মুহু গুলি ও বোমাবর্ষন করে প্রায় ৩০০ মালিকের রেকর্ডিয় খলিশাখালি নামক ১৩২০ বিঘা রেকর্ডিয় জমি জবরদখল ও মৎস্য ঘেরগুলো লুট করে নেয় সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও ডাকাত দলের সদস্যরা।
এরপর থেকে ওই খলিশাখালি জনপদকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের দাগী অপরাধীদের আঁখড়া হিসেবে গড়ে তুলেছিল ইসমাইল ও তার দলবল। সম্প্রতি প্রশাসনের একের পর এক অভিযানে ইসমাইল বাহিনীর সন্ত্রাসী ও ডাকাতরা দফায় দফায় অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হলেও অদ্যবধি আত্মগোপনে রয়ে গেছে এসব সন্ত্রাসী ও ভূমিদস্যু বাহিনীর প্রধান ইসমাইল।
অবৈধ অস্ত্রসন্ত্র ও নিজস্ব বাহিনী থাকায় দীর্ঘদিন ধরে ভূমিদস্যু ও সন্ত্রাসী ইসমাইলকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে রাজনৈতিক ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে আসছিল ক্ষমতাসীন দলের উপজেলা পর্যায়ের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। আধিপত্য বিস্তার ও জনবল সরবরাহের পাশাপাশি এসব নেতাদের বড় একটি অংশের আর্থিক যোগানও দিত ইসমাইল।
কতিপয় এসব নেতার সুপারিশে সীমাহীন অপকর্ম চালানো স্বত্বেও সন্ত্রাসী ইসমাইল ও তার বাহিনীর সদস্যরা দীর্ঘদিন ছিল প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে। এভাবেই সামান্য কাঠমিস্ত্রি থেকে কয়েক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি বনে যায় ইসমাইল, মুলদলের শীর্ষ নেতাদের সুপারিশে একসময় সে ঢুকে পড়ে উপজেলা যুবলীগে।
এরপর থেকে যুবলীগের সাইনবোর্ড ব্যবহার করে খলিশাখালি জনপদ জবরদখলে নিয়ে মঙ্গলবার পুনরূদ্ধারের আগ পর্যন্ত ওই জনপদকে অপরাধের অভয়াশ্রম গড়ে তুলে সেখানে রামরাজত্ব কায়েম করে আসছিল ইসমাইল ও তার বাহিনীর সদস্যরা। সন্ত্রাসী ইসমাইলের বিরুদ্ধে পুলিশের ওপর হামলা করে আসামী ছিনতাই, চাঁদার দাবিতে মারপিট, অবৈধ অস্ত্র ও ডাকাতিসহ একাধিক মামলা রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
একের পর এক সন্ত্রাসী কার্যকলাপের অভিযোগ থাকায় ইতোমধ্যেই সন্ত্রাসী ইসমাইলের যুবলীগের ত্রান সম্পাদকের পদ স্থগিত করে প্রেস বিজ্ঞপ্তি দিয়েছেন উপজেলা যুবলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান মিন্নুর ও সাধারণ সম্পাদক বিজয় ঘোষ।
এদিকে, গত দেড় বছরের জবরদখল থেকে অবশেষে বিস্তৃর্ণ জমি পুনরুদ্ধার হওয়ায় হাসিমুখে প্রশাসনের প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগী জমির মালিক ও তাদের পরিবারের সদস্যরা। অপরদিকে সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু ও ডাকাত দলের দীর্ঘদিনের অত্যাচার, চাঁদাবাজি ও দস্যুতা থেকে খলিশাখালি জনপদ শেষমেষ দখলমুক্ত হওয়ায় স্বস্তিভরে প্রশাসনকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন উপজেলার সর্বস্তরের মানুষ।
এ ব্যাপারে দেবহাটা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এবিএম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী ও দেবহাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শেখ ওবায়দুল্যাহ বলেন, খলিশাখালির জবরদখলকৃত জমি পুনরুদ্ধার ঘিরে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে তা মনিটরিংয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সজাগ অবস্থানে রয়েছে।
এএজেড
