হারিয়ে যাওয়া সেই ঘটি গরম চানাচুর

চোখে সানগ্লাস, মাথায় লাল টুপি। পরনে কয়েক রঙের সিট কাপড় দিয়ে তৈরি জামা ও পায়জামা, পায়ে সাদা কেটস। বাম কাঁধে ঝুলানো টিনের পাত্র, আর ডান হাতে ঝুমুর আর পেছনে রয়েছে ব্যাগ। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতেই এমন বেশভূষা ও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে উপস্থিত মানুষদের বিনোদন দিয়ে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করে নিজ সংসারের খরচ চালানোর পাশাপাশি ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ মেটান ৫০ বছর বয়সী আবু বিশ্বাস।
তিনি খুলনা জেলার ডুমুরিয়া থানার সাজিয়াড়া গ্রামের মৃত শফি বিশ্বাসের ছেলে আবু বিশ্বাস। বিগত কয়েকদিন ধরে সাতক্ষীরা শহরের বিভিন্ন এলাকায় যেয়ে বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে মানুষের মন আকৃষ্ট করে ঘটি গরম বিক্রয় করে চলেছেন তিনি।
ঘটি চানাচুর বিক্রেতা আবু বিশ্বাস বলেন, আমার মনে দুঃখ কষ্ট থাকলেও বিভিন্ন অঙ্গভঙ্গি দিয়ে বিনোদন দিয়ে মানুষের মন আকৃষ্ট করে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করি। প্রতিদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে কাঁধের পেছনে ব্যাগ এবং ঘটিতে করে কয়লা জ্বালিয়ে ভাজা বিক্রি করতে বের হয়। তারপর জেলার এক প্রান্ত থেকে অপর প্রান্ত ঘুরে বিক্রি করি ঘটি চানাচুর।
বছরের ৬ মাস খুলনার ডুমুরিয়া বাস স্ট্যান্ডে লেবুর শরবত বিক্রি করে, বাকি ৬ মাস দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেয়ে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করে সংসার চালান জানিয়ে তিনি বলেন, আমার বয়স পঞ্চাশের একটু বেশি। আবাদি জমিজমা নেই বললেই চলে। স্বামী-স্ত্রী ও তিন ছেলেমেয়ে নিয়ে আমার সংসার। বড় মেয়ে অষ্টম শ্রেণীতে এবং ছোট মেয়ে ও ছেলে পঞ্চম শ্রেণীতে পড়াশোনা করে। বর্তমানে ঘটি গরম চানাচুর বিক্রি করে তাদের পড়াশোনাসহ সংসার চালাতে হচ্ছে।
ঘটি গরম চানাচুর ১০ টাকা থেকে শুরু করে ২০ টাকায় প্রতি পাত্রে বিক্রি করি জানিয়ে তিনি আরও বলেন, স্ত্রীকে সাথে নিয়ে চিড়া, চানাচুর, জিরা, তেঁতুল, গোটা, হলুদ, রসুন মরিচ, তেজপাতা, ধনিয়াসহ বিভিন্ন ধরনের মসলা দিয়ে তৈরি করেন ঘটি গরম। দিন শেষে এগুলো বিক্রি হয় প্রায় ১৭০০ টাকা। খরচ বাদ দিয়ে লাভ থাকে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা।
৬ বছর ধরে এ পেশায় জড়িত জানিয়ে তিনি জানান, বছর ৬ আগে ঢাকায় তার ওস্তাদ জাফর আলীর থেকে এই কাজে হাতে খড়ি তার। সেই থেকে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যেয়ে ঘটি চানাচুর বিক্রি করে চলেছি।
এএজেড
