ঈদের আনন্দে যমুনা সেতু পূর্বপাড়ে বিনোদন প্রেমীদের উপচে পড়া ঢল!

ছবি : ঢাকাপ্রকাশ
যান্ত্রিক জীবনে কর্মব্যস্ততার ফাঁকে পরিবার-পরিজন ও প্রিয় মানুষকে সঙ্গে নিয়ে কোরবানি ঈদুল আজহার আনন্দকে উপভোগ করতে মেতেছে বিনোদন প্রেমীরা। এ উৎসবকে কেন্দ্র করে টাঙ্গাইলের অন্যতম যমুনা সেতু পূর্ব পাড়ে যমুনা নদীর তীরবর্তী গরিলাবাড়ী এলাকার পাথরঘাটে গড়ে উঠেছে বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র।
এছাড়া যমুনা নদীর ওপর নির্মিত যমুনা সেতু ও সদ্য নির্মিত যমুনা রেল সেতু দেখতে ছুটে আসছেন টাঙ্গাইলসহ দেশের নানা প্রান্তের বিনোদন প্রেমী হাজারো মানুষ। এই বিনোদন কেন্দ্রে সন্ধ্যায় সূর্যাস্ত দেখা মেলায় প্রকৃতির পরিবেশ হয়ে ওঠেছে আরও মনোরম।
শুধু তাই নয়— যমুনা সেতু ছাড়াও রয়েছে আনন্দ পার্ক, যমুনা সেতু রিসোর্ট, যমুনা সেতু জাদুঘর, শিশু পার্ক, যমুনা সেনানিবাস কপি হাউজ ও বিপণী-বিতান মার্কেট, সুইমিংপুল, হরিণ দেখার দৃশ্য, যমুনা সেতু পূর্ব গোল চত্বর ও আশপাশে রয়েছে নানা ওষুধি গাছের বাগান। দর্শনার্থীদের জন্য রয়েছে নৌকা বা ছোট ট্রলারযোগে যমুনা নদী পথে যমুনা সেতু ও যমুনা রেল সেতু দেখার ব্যবস্থা। পাথরঘাটে অসংখ্য নৌকা ও ট্রলার সারিবদ্ধভাবে মাঝিরা সাজিয়ে রেখেছেন। এখানে খেলনা দোকান ছাড়াও ফুসকাসহ ফাস্ট ফুড জাতীয় নানা রকম দোকানপাট গড়ে উঠেছে।

ঈদের প্রথম, দ্বিতীয় দিন যমুনা সেতু পূর্বপাড়ের পাথরঘাট এলাকায় বিকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দেখা যায়, যমুনার পাড়ে পরিবার-পরিজন কেউ কেউ নিয়ে সূর্যাস্ত দেখছেন। আবার কেউ তাদের পছন্দের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে বেড়াতে এসেছেন। এখানে নৌকা বা ট্রলার দিয়ে ঘুরতে জনপ্রতি ৫০ টাকা দিয়ে যমুনা সেতু ও যমুনা রেল সেতু দেখছেন খুব কাছ থেকে। এছাড়াও কেউ আবার মোটরসাইকেলযোগে যমুনা থেকে উপরে ঘুরছেন ও রেল সেতু দেখছেন। অনেকেই শিশুদের জন্য বিভিন্ন খেলনা কিনছেন। সব মিলিয়ে বিকালে এই সেতু পূর্ব এলাকায় মানুষের উপচে পড়া ঢল নেমে যায়।
গাজীপুরের কালিয়াকৈর থেকে যমুনা সেতু পূর্বপাড়ে ঘুরতে আসা ইশারাত আক্তার, সুমাইয়া ইসলাম বলেন— সারা বছর চাকরি ও সংসার জীবন নিয়ে ব্যস্ত থাকতে হয়। ঈদের দিন আমাদের কাছে বিশেষ একটি আনন্দের দিন। তাই ঈদের আনন্দ পরিবার ও সন্তানদের সঙ্গে উপভোগ করতে যমুনা সেতু পূর্বপাড়ে আসছি। এখানে হাজার হাজার মানুষের সমাগম দেখা যাচ্ছে। খুব ভাল লাগছে এখানে ঘুরতে এসে। প্রতি উৎসবেই ঘুরতে আসব এখানে। তাছাড়া এই বিনোদন কেন্দ্র কম খরচে বিভিন্ন স্পটও ঘুরে দেখা যাচ্ছে। পরিবেশটাও অনেক ভালো।
বগুড়ার শেরপুর থেকে আসা স্কুল শিক্ষক শহিদুর ইসলাম বলেন— এরআগে কখনো যমুনা সেতু দেখতে পরিবার নিয়ে আসা হয়নি। এবার যেহেতু লম্বা ছুটি পেয়েছি তাই ঈদ উপলক্ষে ঘুরতে আসছি। পরিবারের লোকজন এই প্রথম যমুনা সেতু সরাসরি কাছ থেকে দেখতে পেল। এখানে এসে খুব ভাল লাগছে। বাচ্চারাও অনেক আনন্দ উল্লাস করছে। দীর্ঘদিন ধরে এটি যেহেতু বিনোদন বা পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত লাভ পেয়েছে, তাই সরকারের উচিত যমুনা সেতু এই এলাকাটি আরও উন্নত ব্যবস্থা করা । এতে আরও লোকজনের সমাগত হবে বলে আশা।
স্থানীয় সমাজকর্মী রেহানা পারভীন সুমি বলেন— যমুনা সেতু নির্মাণ হওয়ার পর থেকে এই সেতু দেখতে দূর-দূরান্ত থেকে লোকজন ছুটে আসে। বর্তমানে আরেকটি যুক্ত হয়েছে সেটি হলো সদ্য নির্মিত যমুনা রেল সেতু। টাঙ্গাইলে তেমন কোনো বিনোদন কেন্দ্র না থাকায় যমুনা সেতু এলাকাকে বেছে নেন বিনোদন প্রেমীরা। তবে, বিনোদন কেন্দ্রের মান তেমনটা উন্নত নয়। সরকারিভাবে উদ্যোগ নিলে এখানে দেশের বৃহত্তম বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। এতে করে অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হতে পারবে সরকার ও স্থানীয় নানান ব্যবসায়ীরা।

যমুনা সেতু পূর্ব নৌ ফাঁড়ির ইনচার্জ কামাল হোসেনের কাছে আইনশৃঙ্খলার বিষয়ে জানতে চাই তিনি জানান— ঈদ উপলক্ষে দর্শনার্থীদের বাড়তি নিরাপত্তার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এছাড়া স্থানীয় ও দূর-দূরান্ত থেকে আসা সাধারণ দর্শনার্থীসহ রাজনীতিবিদসহ দেশের বিশিষ্টদের নিরাপত্তার ব্যাপারেও যমুনা সেতু পূর্ব নৌ পুলিশ সতর্ক রয়েছে। দর্শনার্থীদের নিরাপত্তায় আমাদের পুলিশ টিমের সদস্যরা সার্বক্ষণিক তৎরপর। তাছাড়া ঘুরতে আসা কোনো দর্শনার্থী বা পর্যটক এখন পর্যন্ত কোনো হয়রানিমূলক অভিযোগ করেনি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
