ফ্যাসিবাদের অধীনে জনগণের পুলিশ হতে পারেনি: জিএমপি কমিশনার

ছবি: সংগৃহীত
গাজীপুরের ধীরাশ্রমে আওয়ামী লীগের কর্মীদের হামলায় নিহত শিক্ষার্থী আবুল কাসেমের জানাজার নামাজ রাজবাড়ি ময়দানে অনুষ্ঠিত হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টায় তার মরদেহ ঢাকা থেকে রাজবাড়ি ময়দানে পৌঁছালে সেখানে আগে থেকেই অপেক্ষমাণ শত শত মানুষ একত্রিত হন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর মরদেহ বোর্ডবাজারের দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকায় তার নিজ বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়, যেখানে আরেক দফা জানাজার পর পারিবারিক কবরস্থানে দাফন সম্পন্ন হয়।
জানাজায় বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতা, প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, পুলিশ এবং সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ উপস্থিত ছিলেন। এতে অংশ নেন গাজীপুর মহানগর পুলিশ (জিএমপি) কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার জাহিদুল ইসলাম, গাজীপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মামুন আল রশিদ, রেভিনিউ ডেপুটি কালেক্টর (আরডিসি) মো. রায়হানুল ইসলাম, গাজীপুর মহানগর জামায়াতের আমির অধ্যক্ষ জামাল উদ্দিন, বিএনপির মহানগর ও থানা পর্যায়ের নেতৃবৃন্দ, হেফাজতে ইসলাম, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, ইসলামী ছাত্রশিবির এবং ছাত্র অধিকারের নেতৃবৃন্দসহ অনেকে।
জানাজার পূর্বে বক্তব্য রাখেন গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার ডা. নাজমুল করিম খান। তিনি বলেন, "বাংলাদেশে যারা পলাতক ছিল, তারা আবারও হায়নার মতো আক্রমণ চালিয়েছে। আজকের এই ঘটনা আমাদের প্রথম শহিদ আবুল কাসেমকে উপহার দিয়েছে।" তিনি আরও বলেন, "বাংলাদেশ পুলিশ একটি গৌরবময় ইতিহাসের ধারক। ১৯৭১ সালে রাজারবাগ থেকে প্রতিরোধ যুদ্ধ শুরু করেছিল পুলিশ, তখন তারা জনগণের ভালোবাসা অর্জন করেছিল। কিন্তু গত ১৫ বছর ধরে পুলিশ বাহিনীকে জনগণের বিরুদ্ধে দাঁড় করানো হয়েছে। ফ্যাসিবাদের অধীনে কাজ করলে পুলিশ জনগণের বন্ধু হয়ে উঠতে পারে না।"
পুলিশ কমিশনার আরও বলেন, "আমি আজ কথা দিচ্ছি, পুলিশের প্রতিটি সদস্য জনগণের স্বার্থে কাজ করতে চায় এবং জনগণের পুলিশ হতে চায়। ফ্যাসিবাদ উৎখাতের পর যদি সেই শক্তি আবার মাথাচাড়া দিয়ে ওঠে, তাহলে জনগণ এবং পুলিশ একসাথে তাদের রুখে দাঁড়াবে। অপারেশন ‘ডেভিল হান্ট’-এর মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যে বহু সন্ত্রাসীকে গ্রেপ্তার করেছি। আমাদের বিশ্বাস, সন্ত্রাসী বা ফ্যাসিবাদ কারও একক সম্পত্তি নয়। প্রকৃত রাজনীতি যারা করে, তারা ফ্যাসিবাদী হতে পারে না।"
এদিকে শহীদ আবুল কাসেমের একমাত্র ছোট বোনের লেখাপড়া ও বিয়ের দায়িত্ব নিয়েছে জামায়াতে ইসলামী।
উল্লেখ্য, গত শুক্রবার রাতে গাজীপুর মহানগরীর ধীরাশ্রম দক্ষিণখান এলাকায় সাবেক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হকের পৈত্রিক বাড়িতে দুষ্কৃতকারীরা হামলা চালায়। খবর পেয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কর্মীরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সেখানে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের কর্মীরা পরিকল্পিতভাবে তাদের ওপর হামলা চালায়। এ ঘটনায় ১৭ জন গুরুতর আহত হন এবং হাসপাতালে ভর্তি হওয়ার পর বুধবার বিকেলে আবুল কাসেম মারা যান। নিহত কাসেম গাজীপুরের দক্ষিণ কলমেশ্বর এলাকার হাজী জামাল উদ্দিন চিশতির ছেলে।
এ ঘটনায় ৯ ফেব্রুয়ারি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের গাজীপুর জেলা শাখার আহ্বায়ক মো. আব্দুল্লাহ আল মোহিত মামলা দায়ের করেন। মামলায় ২৩৯ জনের নাম উল্লেখসহ অজ্ঞাতনামা ২০০-৩০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। প্রধান আসামি করা হয়েছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ কর্মী ও সাবেক মন্ত্রীর ভাতিজা আমজাদ মোল্লাকে। সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, এ মামলায় ১৩২ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
