ভাইরাল হওয়া মালা খানের স্বামী ও দুই মেয়ে থাকেন কানাডায়, ঢাকায় আছে গরু-ছাগলের খামার!
ভাইরাল হওয়া মালা খানের স্বামী ও দুই মেয়ে থাকেন কানাডায়, ঢাকায় আছে গরু-ছাগলের খামার! ছবি: সংগৃহীত
বাংলাদেশ রেফারেন্স ইনস্টিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টসের (বিআরআইসিএম) সদ্য বিদায়ী প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান নিজের অফিসের ভেতরে বিশেষভাবে তৈরি গোপন কক্ষের নিয়ে মুখ খুলেছেন।
একটি জাতীয় দৈনিক সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি দাবি করেছেন, তার অফিসের আলোচিত গোপন কক্ষ আসলে গোপন ছিল না। এ বিষয়ে ওই অফিসের সবাই জানতেন। সম্প্রতি তার অফিসে গোপন কক্ষ থাকার খবর দেখে অবাক হন স্থানীয়রা।
মালা খান টাঙ্গাইলের ভূঞাপুর উপজেলার অলোয়া ইউনিয়নের নিকলা মহাব্বত (ঘাইনঞ্জানি) গ্রামের আবুল ফজল খানের মেয়ে। বাবার চাকরির সুবাদে ঢাকায় লেখাপড়া করেন এবং বড় হন। তার চাচা গরু ব্যবসায়ী তোফাজ্জল খানের মাধ্যমে এলাকায় জমি ক্রয় ও গরু-ছাগল বেচা-কেনা করতেন মালা। এছাড়াও তার নিজ এলাকার কিছু বেকার লোককে সরকারি-বেসরকারি চাকরিও দিয়েছেন বলে জানান এলাকাবাসী।
সম্প্রতি ভাইরাল হওয়ার মালা খানের এমন খবর দেখে হতভাগ স্থানীয়রা। সরেজমিনে উপজেলার অলোয়ার নিকলা মহাব্বত এলাকায় গিয়ে এমন তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্যসূত্রে জানা গেছে, বিআরআইসিএম’র মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান চাকরির পাশাপাশি ঢাকার মোহাম্মদপুরের বসিলা এলাকায় দেশ-বিদেশের বিভিন্ন জাতের গরু ও ছাগলের খামার করে। ওই খামার পরিচালনা করতো তার আপন ছোট ভাই।
এছাড়াও রাজধানীত এই বসিলাতেই তার জায়গা ও বাসা রয়েছে। সেখানে টাঙ্গাইলসহ জেলার বিভিন্ন জায়গা থেকে চাচা তোফাজ্জল খানের মাধ্যমে গরু ও ছাগল কিনে মোটাতাজা করা হত খামারে। এরপর তার চাচা ও ঢাকার বিভিন্ন লোকের মাধ্যমে সেগুলো খামারসহ টাঙ্গাইলে এনেও বিক্রি করতো। গত ৫ই আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশত্যাগের পর বসিলার ওই খামার থেকে অনেকেই গরু ছাগল নিয়ে গেছেন।
এছাড়া তার কয়েক মাস আগেও তার চাচা তোফাজ্জল এক ট্রাক গরু টাঙ্গাইলে নিয়ে বিক্রি করেছেন। তাছাড়া তার ভাই মোন্তাজ খানের রাজধানী অদূরে কেরানিগঞ্জ গুরুর খামার ছিল। তার ভাই মোন্তাজ বছর খানেক আগে মারা গেছেন। মালা খান তার চাচার মাধ্যমে এলাকায় ৫৯ শতাংশ জমি কিনেছেন। তিনি বিআরআইসিএমতে এলাকার বেশ কয়েকজনকে চাকরি দিয়েছেন। তারা এখনও সেখানে বিভিন্ন পদে কর্মরত রয়েছেন।
মালা খানের তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে কানাডায় পড়াশুনা করছে। তার স্বামীও মোস্তফা আনোয়ার একজন বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিলেন। বর্তমানে তিনি দুই মেয়ের সাথেই কানাডায় বসবাস করছেন। তবে গুঞ্জন রয়েছে স্বামী ও মেয়েদের জন্য কানাডায় বাড়ি কিনেছেন তিনি। মালা খানের বিরুদ্ধে পিএইচডি ডিগ্রী অর্জনের সনদ জালের অভিযোগ রয়েছে। এনিয়ে ২০১৫ সালের ৮ ফেব্রুয়ারিতে জাতীয় দৈনিক একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছিল।
“জালিয়াতির মালা গেঁথেছেন মালা খান” শিরোনামে ওই সংবাদে “জাল সনদ ও নিয়োগ পরীক্ষায় (লিখিত) সর্বনিম্ন নম্বর পেয়ে অকৃতকার্য হয়েও বেজ্ঞানিক কর্মকর্তা পদে নিয়োগ পেয়েছিলেন বলে বলা হয়।” এতে আরো বলা হয় জালিয়াতির মাধ্যমে মালা খান অর্জন করেছেন পিএইচডি ডিগ্রি। আর ওই পিএইচডি কোর্সের কো-সুপারভাইজার ছিলেন তার স্বামী মোস্তফা আনোয়ার। তিনি যে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি নিয়েছেন, সেই প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো অনুমোদন। ভুয়া প্রতিষ্ঠানটি টাকার বিনিময়ে দিয়েছে পিএইচডির সনদ।”
নিকলা এলাকার অনেকে জানান, মালা খান এলাকার অনেককে চাকরি দিয়েছেন যারা বেকার ছিল। তবে টাকার বিনিময়ে দিয়েছে কিনা সেটা কেউ বলতে পারেননি। এছাড়া এলাকায় তার চাচা তোফাজ্জলকে টাকা পয়সা দিয়ে সহায়তা করতো। তার চাচা ভূঞাপুর শিয়ালকোল হাটের ইজারাদার। চাচাই এলাকায় তাকে জায়গা জমি কিনে দিয়েছেন।
বিআরআইসিএমে চাকরি পাওয়া অলোয়া ইউনিয়নের ঘাইনঞ্জানি গ্রামের সোহান বলেন, কেরানিগঞ্জে জায়গা লিজ নিয়ে তার ভাইয়ের গরু ও ছাগলের খামার ছিল বলে জেনেছি। তবে বসিলাতে ছিল কিনা জানি না। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পরই অফিসের লোকজন যারা বিরোধীতা করেছেন তাদের কাছেই চাবি ছিল অফিসের। যেখানে কোন অবৈধ কোন কার্যকলাপ ছিল না ম্যাডামের।
তিনি বলেন- বিআরআইসিএমের কার্যালয়ে গরু ও ছাগল নিয়ে আসা হত বিক্রির জন্য। ঝামেলার কারণে খামার ছেড়ে দিয়েছিল ফলে গরু ও ছাগলগুলো অফিসে আনা হয়েছিল। সেখান থেকে আমি দুইটি গরু ও দুইটি রাম ছাগল নিয়েছি। ঢাকায় তার কোন সম্পত্তি নেই। ম্যাডামের পরিবার ও তার বাবা, ভাই ভাইয়ের স্ত্রী কোয়াটারের থাকতো।
চাচা তোফাজ্জল খান বলেন, মালা খানের ঘটনাটি দেখে বিষ্মিত হয়েছি। আমার ভাতিজি সৎ একজন কর্মকর্তা একজন বৈজ্ঞানিক। অফিসের লোকজনরা তার বিরুদ্ধে লেগেছে। তার অফিসের আয়না ঘর থাকাসহ বিভিন্ন অভিযোগ তুলছেন। তার ভাইয়ের খামার ছিল বসিলাতে। আন্দোলনের আগে এক ট্রাক গরু এনে টাঙ্গাইলের বিভিন্ন হাটে বিক্রি করেছি। এলাকায় কিছু জায়গা কিনে দিয়েছিলাম কিন্তু পরবর্তীতে ওই জমি আমি কিনে নিয়েছি।
বিআরআইসিএম’র মহাপরিচালক ও প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মালা খান জানান, ঘটনাটি সম্পূর্ণ বানোয়াট। গত ৫ আগস্টের পর অফিসের যাইনি কয়েকদিন। এরমধ্যে তারা আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে, মিথ্যা ঘটনা তৈরি করেছে। এছাড়া তারা মন্ত্রণালয় বরাবর অভিযোগ দিয়েছে আমার বিরুদ্ধে। মিথ্যা ঘটনার বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আইনগত কোন কিছুই করতে পারবো না।
তিনি আরও বলেন, সরকার পতনের পর কয়েকদিন অফিস করেছি। আগে থেকেই ওই কক্ষের বিষয়ে জানতো অফিসের লোকজন। কিন্তু এখন সেটি গোপন কক্ষ নাম দিয়ে প্রচার করছে। মূলত আমাকে অপদস্থ করার জন্যই এমন নাটক সাজিয়েছে। খামার প্রসঙ্গে বলেন- আমার ভাইয়ের গরু-ছাগলের খামার ছিল। আমার তিন মেয়ের মধ্যে দুই মেয়ে কানাডায় থাকে। আমার স্বামীও বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ছিল। তিনিও কানাডায় থাকেন।