যমুনায় বাড়ছে পানি, ভাসছে কৃষকের স্বপ্ন
কৃষক শহিদুল ইসলাম। তিনি স্থানীয় এনজিও থেকে ঋণ নিয়ে টাঙ্গাইলের ভূঞাপুরে যমুনা নদীর চরাঞ্চলে অনেক কষ্টে হাড়ভাঙা পরিশ্রম করে প্রায় ১০-১২ বিঘা জমিতে বাদাম, কাতি কালাই, ধানসহ নানা ধরনের ফসলের আবাদ করেছেন। কিন্তু যমুনায় এক রাতে পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় তার প্রায় ৬ বিঘা জমির ফসল নিমিষেই তলিয়ে বিলীন হয়ে গেছে। এতে তার কষ্টের স্বপ্নগুলো যেন স্বপ্নই থেকে গেল।
শহিদুল উপজেলার গোবিন্দাসী ইউনিয়নের কুকাদাইর গ্রামের বাসিন্দা। তিনি বলেন, এ নিয়ে যমুনা নদীতে ষষ্ঠবারের মতো পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এর আগেও ফসল পানিতে তলিয়ে যায়। তবে তাতে তেমন ক্ষতি না হলেও অসময়ে পানি বৃদ্ধির কারণে আবারও ফসল তলিয়ে যাওয়ায় সীমাহীন ক্ষতির মুখে পড়েছি।
শুধু শহিদুল একা নয়, তার মতো একই দশা কৃষাণী শান্তি বেগম, কৃষক হুরমুজ প্রামাণিক, রহিজ উদ্দিন ও সবুর আলীর। তারা বলেন, বিগত বছরগুলোতে এমন সময়ে কখনো এভাবে পানি বৃদ্ধি পেতে দেখেনি। এ বছর কয়েক দফায় বন্যার কারণে চরাঞ্চলের কৃষকদের অনেক ক্ষতি হয়েছে। বাদাম ও কার্তি কালাইসহ অন্যান্য ফসল চোখের সামনে তলিয়ে যাচ্ছে। এভাবে পানি বাড়লে আর ঘুরে দাঁড়াতে পারব না।
সরেজমিনে উপজেলার যমুনা নদীর গোবিন্দাসী, গাবসারা ও অর্জুনা চরাঞ্চলে ঘুরে দেখা যায়, গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে চরাঞ্চলে বাদাম, কার্তি কালাই ও ধানসহ বিভিন্ন ফসল রোপন করেন চাষিরা। সেগুলো নতুন পানিতে তলিয়ে গেছে ও ভাসছে। অনেকের ফসলি জমি ভেঙে নদীগর্ভে বিলীন হচ্ছে। সব মিলিয়ে কৃষকরা দিশেহারা হয়ে পড়েছে। ক্ষতি পুষিয়ে নিতে কৃষি প্রণোদনাসহ সহযোগিতার দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা যায়, উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢল ও টানা বৃষ্টিতে টাঙ্গাইলের যমুনা নদীতে এ বছর দফায় দফায় পানি বৃদ্ধি পেয়েছে। এবার ষষ্ঠ দফায় পানি বাড়ছে। দফায় দফায় পানি বৃদ্ধির কারণে ঠিক সময়ে ফসল উৎপাদন করতে না পারায় কৃষকরা হতাশ হয়ে পড়ছে। তবে তাদের অভিযোগ, বালু খেকোরা অবৈধভাবে ফসলি জমি কেটে বালু উত্তোলনের কারণে নদীর গতিপথ পরিবর্তনের ফলে চরাঞ্চলের কৃষকরা প্রতিনিয়িত এমন ক্ষতির শিকার হচ্ছেন।
উপজেলা কৃষি অফিসার কৃষিবিদ ড. মো. হুয়ামূন কবীর বলেন, যমুনা নদীতে হঠাৎ পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় উৎকণ্ঠায় কৃষকরা। তবে এ পানি বৃদ্ধিতে চরাঞ্চলে কৃষিতে তেমন ক্ষতি হবে না। কেননা পুরোপুরিভাবে কৃষকরা বাদামসহ অন্যান্য রবি ফসল রোপণ করেনি। আগে যেসব কৃষক বিভিন্ন ফসল রোপণ করেছিলেন সেগুলো তলিয়ে গেছে শুনেছি। তবে কৃষকরা যাতে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারে সে লক্ষ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
এসজি