তদন্ত না করেই পুলিশ পরিদর্শকের নির্দেশে মামলা
তদন্ত করে সত্যতা যাচাই বাছাই না করেই মামলা নিয়ে আসামিদের জেল হাজতে প্রেরণের অভিযোগ উঠেছে আশুলিয়া থানা পুলিশের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক(এস.আই) হাচিব শিকদার ঢাকা প্রকাশকে বলেন, তৎকালীন পরিদর্শক(অপারেশন) যিনি বর্তমানে পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ স্যারের নির্দেশে এই মামলা নেওয়া হয়েছে।
গত ১ অক্টোবর বিকেলে আশুলিয়ার টংগিবাড়ি থেকে চারজনকে ম্যাগনেটিক পিলার প্রতারণার অভিযোগে আটক করে আশুলিয়া থানা পুলিশ। ২ অক্টোবর আমান উল্লাহ নামের এক ব্যক্তি তাদের বিরুদ্ধে বাদি হয়ে ম্যাগনেটিক পিলার প্রতারণা মামলা দায়ের করেন। যার মামলা নং ১০(১০)২২, যাতে মাওলা মতিন(৭০), মোঃ কবির (৪২), মোঃ রফিক(৩৬), পারভেজ(৩৫) এই চার জনকে আসামি করা হয়।
সেই মামলার কপি নিয়ে সংবাদ লেখার সময় মামলার কিছু অসংগতি ধরা পড়ে ঢাকা প্রকাশের সাভার উপজেলা প্রতিনিধির কাছে। ম্যাগনেটিক পিলার প্রতারণা নিয়ে মামলা হলেও পিলার সদৃশ কিছু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। অভিযোগে বলা হয়েছে ১ নাম্বার আসামীকে বিকাশের একটি পার্সোনাল নাম্বারে ১ লাখ টাকা দেওয়া হয়েছে। কিন্তু একদিনে বিকাশের পার্সোনাল নাম্বারে ৩০ হাজার টাকার বেশি দেওয়া সম্ভব না।
ঘটনার সত্যতা জানার জন্য আসামিপক্ষের সাথে যোগাযোগ করার বারবার চেষ্টা করেন এই প্রতিবেদক। অবশেষে ৬ই অক্টোবর এই মামলার আইনজীবী মোঃ ইব্রাহিম খলিল রানার মাধ্যমে এই মামলার ২ নাম্বার আসামি মোঃ কবিরের (৪২) চাচাতো ভাই বদিউজ্জামানের মোবাইল নাম্বার পায় এই প্রতিবেদক।
বদিউজ্জামান মোবাইল ফোনে ঢাকা প্রকাশকে জানান, আমার ভাই মোঃ কবির একজন ডেভলাপার। তিনি ভোলা এন্টারপ্রাইজের মালিক। এই মামলার ১ নাম্বার আসামি মাওলা মতিন (৭০) জমির ব্রোকার (দালাল)। তার মাধ্যমে জমি কিনতে আশুলিয়ার টংগাবাড়িতে এই মামলার বাদি আমান উল্লাহর বাড়িতে যায় আমার ভাই। কথা-বার্তার এক পর্যায়ে জমির বায়না টাকা দেওয়ার জন্য বলেন আমান উল্লাহ।
কিন্তু আমার ভাই কবির বলেন, আমরা তো জমির কাগজপত্রই ঠিকমতো দেখলাম না, বায়না টাকা কেনো দিবাম। এই নিয়ে বাক-বিতণ্ডার এক পর্যায়ে আমান উল্লাহ এবং তার লোকজন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আমার ভাইসহ এই মামলার আসামী চার জনের উপর হামলা চালিয়ে মারাত্মক জখম করে। আমার ভাই কবিরের পা গুরতর যখম হওয়ার কারণে তাকে পরবর্তীতে পংগু হাসপাতালে ভর্তি করায় পুলিশ।
বদিউজ্জামান আরও বলেন, আমান উল্লাহর প্লান ছিলো বড় ধরনের টাকার ধান্ধা করা। তার বাড়ির ভিতরে অবরুদ্ধ করে আমার ভাইসহ চারজনকে টাকার জন্য অমানুষিক নির্যাতন করা হয়েছে। ওই বাড়িতে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে। ফুটেজ যাচাই করলেই সত্য ঘটনা বেরিয়ে আসবে।
এবিষয়ে জানতে চাইলে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা আশুলিয়া থানার উপ-পরিদর্শক(এস.আই) হাচিব শিকদার ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, আমি এ বিষয়ে কিছু জানি না। আমারতো ভাই মামলা নেওয়ার ক্ষমতা নাই। আপনি তৎকালীন পরিদর্শক(অপারেশন) যিনি বর্তমানে পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ স্যারের যোগাযোগ করেন। উনি সব জানেন, ওনার নির্দেশেই সব কিছু করা হয়েছে। তদন্ত করে সত্যতা যাচাই না করে পুলিশ মামলা নিতে পারে কিনা, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনে বলেন, আপনি ভাই রশিদ স্যারের সাথে কথা বলেন।
জানতে চাইলে তৎকালীন পরিদর্শক (অপারেশন) যিনি বর্তমানে পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুর রাশিদ ঢাকা প্রকাশ-কে বলেন, বাদিপক্ষ অভিযোগ করেছে। আমরা অভিযোগ নিয়েছি। ঘটনার তদন্ত না করেই পুলিশ মামলা নিতে পারে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি কোনো সদুত্তর দিতে পারেন নাই। তাছাড়া ম্যাগনেটিক পিলারের অভিযোগ হলেও ওখানে পিলার সদৃশ কিছু উদ্ধার করতে পারেনি পুলিশ। এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ওটা তদন্তকারী কর্মকর্তা দেখবে।
এএজেড