'আমাগো বসতভিটা ছাড়া করার নানা চেষ্টা চলছে'
সাভারের বিরুলিয়া ইউনিয়নের কুমারখোদা গ্রাম। এই গ্রামের সর্ব দক্ষিণে হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রায় ৭০টি পরিবারের বসবাস। চৌদ্দ পুরুষ ধরে পৈত্রিক সূত্রে মালিকানাধীন এই ভিটায় বসবাস করছেন তারা। কিন্তু সম্প্রতি তাদেরকে উচ্ছেদ করে তাদের বসতভিটা দখল করতে মরিয়া হয়ে উঠেছে দখিনা সিটি নামে একটি হাউজিং কোম্পানি।
দখিনা সিটির মালিক কর্নেল (অব.) আজম খানের বিরুদ্ধে ভয়-ভীতি প্রদর্শনসহ নানা অত্যাচারের অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
সর্বশেষ গত শুক্রবার (১৯ আগস্ট) গভীর রাতে বীণা রানী সরকারের খড়ের পালায় আগুন লাগানোর অভিযোগ উঠেছে দখিনা সিটির লোকজনের বিরুদ্ধে। এ ঘটনায় সাভার মডেল থানায় অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগী পরিবার।
ভুক্তভোগী বীণা রানী সরকার বলেন, তাদের (দখিনা সিটির) লোকজন নানাভাবে আমাগো উপর অত্যাচার করতেছে। আমাগো পোলাপান স্কুলে যাওয়ার সময় হেগোর লোকজনে ধইরা মারে। পোলাপানরে কুমারখোদা খালে গোসল করতে দেয় না। আমাগো চলাচলের একমাত্র রাস্তা বেকু দিয়া কাইটা খাল বানাইয়া ফালাইছে। কয়দিন আগে আমার গরুর খাবার পুড়ি ফেলাইছে, গরুকে এখন কী খাওয়াব? এর আগে হাঁস-মুরগি নিয়ে গেছে, এখন কী করব বাবা? বলতে বলতে কেঁদে ফেলেন তিনি।
মন্দির কমিটির সাবেক সভাপতি সুদাংশু সরকার বলেন, সরকারি রাস্তা অনুমোদন হইছে। কয়েকবার আইসা মাপ দিয়াও গেছে। কিন্তু রাস্তা বানাইয়া দেয় নাই। আমাগো বসতভিটা ছাড়া করার জন্য নানা চেষ্টা তারা করতাছে। আমাগো বাপ-দাদার বাড়ি ছাইরা আমরা কই যামু।
একই গ্রামের পুস্পা রানী বলেন, এরা আমাদের মানুষই মনে করে না। আমাদের বাচ্চাদের স্কুলে যাওয়ার সময় মারধর করে। আজকে খেড়ের পালায় আগুন দিয়েছে, কাল আমাদের বাড়িতে আগুন দিবে না তার কি বিশ্বাস আছে!
তিনি আরও জানান, তাদেরকে এই এলাকা থেকে উচ্ছেদ করার জন্য কর্নেল আজম ও তার লোকজন পাঁয়তারা করে আসছে। তাদেরকে স্বাভাবিক চলাফেরা করতেও কোনো না কোনো ভয়াবহ পরিস্থিতির শিকার হতে হয়। এখান থেকে মাটি কাটাই হামলাকারীদের মূল উদ্দেশ্য। কিন্তু তারা তাদের শত বছরের পুরনো বাসস্থান ছেড়ে কোথাও যেতে চায় না। তারা দুর্গার মন্দিরের মাটি কাটতে দিবে না। রাস্তাসহ চারপাশ দিয়ে সব কেটে দেওয়া হয়েছে। এমনকি নিচে গেলে বাচ্চাদেরকেও রেহাই দেয় না তারা।
এ ঘটনা জানার জন্য দখিনা সিটির সাইনবোর্ডে পাওয়া নম্বরে কল করে সাংবাদিক পরিচয় দিলে কল কেটে দেওয়া হয়। পরবর্তীতে বারবার চেষ্টা করা হলেও আর যোগাযোগ করা সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে বিরুলিয়া পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই মো. দিদার হোসেন মুঠোফোনে বলেন, অভিযোগের বিষয়ে তদন্ত চলছে। আসামিরা অজ্ঞাত হওয়ায় তাদের চিহ্নিত করতে সময় লাগছে। পুলিশের পক্ষ থেকে তাদের বলা হয়েছে, আপনাদের বসতভিটা থেকে কেউ আপনাদের উচ্ছেদ করতে পারবে না।
এসজি