গাজীপুরে শিক্ষক দম্পতিকে পরিকল্পিত হত্যা, দাবি স্বজনদের
গাজীপুরে এক শিক্ষক দম্পতির মরদেহ তাদের প্রাইভেটকারের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়েছে। বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) ভোরে মহানগরীর গাছা থানার বড়বাড়ির বগারটেক এলাকার সড়কের পাশে থাকা ওই গাড়ি থেকে তাদের মরদেহ উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় স্বজনদের দাবি তাদের
পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।
নিহতরা হলেন-গাজীপুর মহানগরীর গাছা থানাধীন কামারজুরি এলাকার মৃত হাবিবুর রহমানের ছেলে এ কে এম জিয়াউর রহমান মামুন (৫১) তার স্ত্রী মাহমুদা আক্তার জলি (৩৫)। এদের মধ্যে মামুন গাজীপুরের টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক এবং তার স্ত্রী জলি টঙ্গী বাজার এলাকার আমজাদ আলী সরকার বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা পদে কর্মরত ছিলেন।
নিহতের সহোদর বড় ভাই রিপন ও শ্যালীকা আহমিদা আক্তার লিমা বলেন, নিহতদের গলায় কালো দাগ রয়েছে। তাদের মুখ দিয়ে লালা ঝরছিল। এটি একটি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ডের ঘটনা। তাদের সঙ্গে থাকা স্বর্ণালংকার, নগদ প্রায় দুই লাখ টাকা ও মোবাইল ফোন কিছুই নেয়নি হত্যাকারীরা। ঘটনাটি যদি পরিকল্পিত নাই হতো তাহলে টাকা, স্বর্ণ, মোবাইল ও গাড়ি নিয়ে যেত। অথচ তাদের কিছুই তারা নেয়নি। শুধু দুজনের জীবন নিয়ে গেছে। এলাকায় বা পরিবারের মাঝে কোনও বিরোধ নেই। তবে জিয়াউর রহমানের সঙ্গে সম্প্রতি তার স্কুলের কয়েকজনের মতবিরোধ সৃষ্টি হয়েছে বলে জেনেছি। প্রায় দুই বছর আগে টঙ্গীর শহীদ স্মৃতি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদে যোগ দেন জিয়াউর রহমান। এর আগে তিনি দীর্ঘদিন টঙ্গীর নোয়াগাঁও উচ্চ বিদ্যালয়সহ নরসিংদী ও নারায়নগঞ্জের একাধিক স্কুলে শিক্ষকতা করেন। ময়নাতদন্তের পর জানাযা শেষে নিহত দুজনের মরদেহ জিয়ার রহমানের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশালে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হবে।
নিহত জিয়াউর রহমানের ভগ্নিপতি মাওলানা আব্দুর রশিদ জানান, নিহত দম্পত্তি গাছা থানার কামারজুরি এলাকার নিজ বাড়িতে সপরিবারে বসবাস করতেন। জিয়াউর রহমান মামুনের গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের ত্রিশাল উপজেলার দড়ি কাঁঠাল এলাকায়। জিয়াউর রহমান ও তার স্ত্রী জলি টঙ্গীর পৃথক স্কুলে চাকরি করলেও তারা প্রতিদিন একসঙ্গে নিজস্ব প্রাইভেটকারে স্কুলে যাওয়া-আসা করতেন। বুধবার (১৭ আগস্ট) স্কুলের কাজ শেষে বিকাল সাড়ে ৬টার দিকে মামাতো ভাইকে গাড়িতে তুলে জিয়াউর নিজে গাড়ি চালিয়ে স্ত্রী জলির স্কুলে যায়। সেখান থেকে জলিকে গাড়িতে তুলে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন তিনি। পথে মামাতো ভাইকে রাস্তায় নামিয়ে দেন তারা। জিয়াউর রহমানের ছেলে এ কে এম তৌসিফুর রহমান মিরাজ সন্ধ্যা পৌনে সাতটার দিকে তার বাবার মোবাইলে ফোন দেয়। কিন্তু বাবার ফোন রিসিভ না হওয়ায় তার মায়ের ফোনে ফোন দিচ্ছিলেন। পরে মা ফোন ধরে বাসায় আসার কথা জানিয়ে বলেন ‘আমরা পথে আছি, কিছুক্ষণের মধ্যে বাসায় আসছি।’
নিহতের ছেলে তৌসিফুর রহমান মিরাজ জানান, মোবাইলে কথা বলার সময় মায়ের কথাবার্তায় ক্লান্তির ভাব বুঝতে পারি। এর দীর্ঘক্ষণ পরও বাসায় না আসায় আমি পুনরায় ফোন করি। কিন্তু রিং বাজলেও বাবা-মা কেউ ফোন রিসিভ করেননি। এরপর একাধিকবার ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করেও পাওয়া
যায়নি। এই দম্পতির হদিস না পেয়ে স্বজনরা রাতভর বিভিন্ন স্থানে খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। তারা গাছা থানা, টঙ্গী পূর্ব, পশ্চিম থানা এবং পূবাইল থানায়ও যোগাযোগ করেন। বড় চাচা ও ফুপাকে সঙ্গে নিয়ে আমরা পূবাইল থানায় খোঁজ করে ভোর সাড়ে ৫টার দিকে ফিরছিলাম। পথিমধ্যে গাছা থানাধীন বড়বাড়ির বগারটেক এলাকায় হারবাইদ-বড়বাড়ি সড়কের পাশে জিয়াউর রহমানের প্রাইভেটকারটি দাঁড়িয়ে থাকতে দেখি। আমরা গাড়ির কাছে এগিয়ে গিয়ে চালকের সিটে বাবা এবং তার পাশের সিটে (সামনে) মায়ের শীতল ও নিথর দেহ দেখতে পাই। আমরা তাদের উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় বোর্ড বাজারে তায়েরুন্নেছা মেমোরিয়াল মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরে সেখান থেকে উত্তরার নস্ট্রাম হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাদের মৃত ঘোষণা করেন। এরপর দুটি অ্যাম্বুলেন্সে করে তাদের মরতেহ গাছা থানায় আনা হয়।
এ ব্যাপারে গাজীপুর মেট্টোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (অপরাধ) মোহাম্মদ ইলতুৎমিশ বলেন, ঘটনাটি তদন্তে ইতিমধ্যে কাজ শুরু করা হয়েছে। বিষয়টি পরিকল্পিত হত্যাকাণ্ড কি না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে। ময়নাতদন্তের জন্য নিহত শিক্ষক দম্পত্তির মরদেহ গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
এসআইএইচ