বরগুনায় প্রতিবন্ধী কার্ড বাণিজ্য!
বরগুনায় প্রতিবন্ধী সংগঠনের নামে সহায়তা কার্ড বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।
প্রতারণার শিকার ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ড কাউন্সিলের সাবেক কমান্ডার আবদুর রশীদ মিয়ার ছেলে লিটন মিয়া বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী সংস্থা (বিপিএস) নামে একটি সংগঠন থেকে খাদ্য ও সেলাই মেশিন সহায়তা দেওয়ার নাম করে কার্ড বিক্রি করে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছেন।
বুধবার (২ মার্চ) দুপুরে শতাধিক নারী-পুরুষ বরগুনা সদর ইউনিয়নের ক্রোক এলাকায় জড়ো হয়ে লিটনের বিরুদ্ধে প্রতারণার অভিযোগ আনেন।
জেলা সমাজ সেবা কর্মকর্তা জানিয়েছেন, এটা প্রতারণা। প্রতিবন্ধীদের নামে বেসরকারি কোনো সংগঠনের মাধ্যমে সহায়তা দেওয়া হয় না।
ক্রোক এলাকার বাসিন্দা রিয়াজ মিয়া বলেন, “গত বছরের নভেম্বর মাসে মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার আবদুর রশীদ মিয়ার বড় ছেলে লিটন মিয়া ‘বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী সংস্থা (বিপিএস)’ নামে একটি সংগঠনের পরিচালক দাবি করে খাদ্য ও সেলাই মেশিন সহায়তা দেওয়ার নাম করে এলাকায় কার্ড বিক্রি শুরু করেন।”
একই এলাকার চায়ের দোকানী কালাম বলেন, “লিটন মিয়া তিন প্যাকেজের কার্ড বিক্রি করেছেন। এর মধ্যে ৩৫০ টাকার কার্ডধারীদের প্রতিমাসে দুই কেজি করে আটা, চিনি, ডাল ও সয়াবিন তেলের প্যাকেজ। একইভাবে ৫০০ টাকার কার্ডধারীরাও আটা, চিনি, তেল ডালের পাশাপাশি আধা কেজি গুড়ো দুধের প্যাকেজ।
এ ছাড়া সেলাই মেশিন দেওয়ার নামে ৩ হাজার থেকে শুরু করে সর্বনিম্ন ২ হাজার টাকার নিয়ে কার্ড বিক্রি করেছেন।
পিন্টু নামের আরেক ভুক্তভোগী বলেন, “কার্ড বিক্রির পরবর্তী মাসের প্রথম দিকে কিছু কার্ডধারীকে স্থানীয় কয়েকটি দোকান থেকে প্রতিশ্রুত খাদ্য-সহায়তা দিয়ে আস্থা অর্জন করেছেন লিটন। এরপর অনেকে তার কাছ থেকে কার্ড কিনেছেন। কিন্তু, গত ডিসেম্বর মাস থেকে এখন পর্যন্ত আর কাউকে কার্ডের বিপরীতে কোনো খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়নি।”
ভুক্তভোগী জাহানারা বলেন, “আমরা তাকে ফোন দিয়ে সহায়তার বিষয়ে জানতে চাইলে দিনের পর দিন, কাল-পরশু দেবো বলে যাচ্ছেন। এভাবে তিনমাস অতিক্রম হয়ে গেলেও আমাদের সন্দেহ হয় এবং খোঁজ নিয়ে জানতে পারি, আমরা তার প্রতারণার শিকার।”
সেলাই মেশিন পাবেন এমন প্রত্যাশায় লিটনের কাছ থেকে ২ হাজার টাকায় কার্ড কিনেছিলেন ক্রোক এলাকার কনা আক্তার, সালমা বেগম, আসমা বেগম মেরি বেগমসহ আরও অনেক নারী।
তারা বলেন, লিটনকে বিশ্বাস করে টাকা দিয়েছিলাম। কিন্তু পরে জানতে পারি, আসলে সে প্রতারক। এখন আমরা কার্ডে টাকা ফেরত পেলেই হয়, মেশিনের দরকার নাই।
ওই এলাকার ইউপি সদস্য মোশাররফ হোসেন বলেন, “ক্রোক এলাকার পারভীন, সগীর মিয়াসহ বেশ কয়েকজন দোকানদার লিটনের হয়ে কার্ড বিক্রি করেছেন। শুধু বরগুনা সদরেই না, পাথরঘাটা উপজেলারও বেশকিছু এলাকার হাজার হাজার নারী-পুরুষের কাছে কার্ড বিক্রি করে টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন লিটন।”
এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হলে লিটন মিয়া নিজেকে বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী সংস্থা (বিপিএস) বাংলাদেশের বরগুনা জেলার পরিচালক দাবি করেন। তিনি দাবি করেন, সংগঠনটি নিবন্ধিত না হলেও ২০০৯ সালে বরগুনা জেলার তৎকালীন জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক আবদুল মতিন সংগঠন পরিচালনার অনুমতি দিয়েছেন। তবে ঢাকার সরাফ উদ্দীন নামের এক ব্যবসায়ী এ সংগঠনের মাধ্যমে প্রতিবন্ধীদের সহায়তা দিচ্ছেন।
কার্ড বিক্রির বিষয়টি স্বীকার করে লিটন বলেন, “আমি তাদের বাড়িতে মালামাল পৌঁছে দেওয়ার খরচা বাবদ টাকা নিয়েছি।”
জেলা সমাজসেবা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক কাজী মুহাম্মদ ইব্রাহীম বলেন, “প্রতিবন্ধীদের আমরা সরাসরি মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে সহায়তা দিয়ে থাকি। বরগুনা জেলায় কোনো সংগঠনের মাধ্যমে আমরা কার্যক্রম পরিচালনা করছি না। প্রতিবন্ধী সংগঠনের নামে যদি কেউ সহায়তা দেওয়ার নাম করে টাকা পয়সা নেয় তবে সেটা প্রতারণা। আমরা বিষয়টি খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেব।”
এমএসপি