কুমারখালী সরকারি খাদ্য গুদামে নিম্নমানের চাল
কুষ্টিয়ার কুমারখালীতে সরকারের খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির ১০ টাকা এবং ওএমএসের ৩০ টাকা দরের চালে নিম্নমানের পচা, ছত্রাক ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে৷
গত সোমবার (২৮ ফেব্রুয়ারি) বিকালে ভুক্তভোগীরা চাল উত্তোলনের পর সাংবাদিকদের কাছে এমন অভিযোগ করেছেন৷
এ বিষয়ে কুমারখালীর কলেজ পাড়ার বাসিন্দা রোকেয়া বেগম জানান, সরকারিভাবে যে চাল দিচ্ছে তা কোনোভাবেই খাওয়ার উপযোগী নয়, বাড়িতে নিয়ে গিয়ে রান্না করার সময় এ চাউলের সঙ্গে বাজারের ভালো চাল মিশিয়ে রান্না করতে হয়৷
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ভুক্তভোগী বলেন, পচা, পোকালাগা, ছত্রাক ও দুর্গন্ধযুক্ত চাল দেওয়া হচ্ছে৷ গরিব মানুষরাই বাধ্য হয়ে এখান থেকে কার্ডের মাধ্যমে কম টাকায় চাল কিনে৷ কিন্তু তা খাওয়া যায় না৷
জানা গেছে, কুমারখালী পৌরসভার দুইটি পয়েন্টে সরকারি চাল বিক্রয় করা হয়৷ সরেজমিনে পৌর এলাকার দুইটি ওএমএস চালের ডিলার পয়েন্টে গিয়ে দেখা যায়, কুমারখালী সরকারি খাদ্য গুদাম থেকে সরবরাহ করা চালের মধ্যে বেশ কয়েক বস্তা পচা। এ ছাড়া ছত্রাকের আক্রমণে চাল থেকে দুর্গন্ধ বের হচ্ছে। তার সঙ্গে ভালো চালান মিশিয়ে বিক্রি করা হচ্ছে৷
এ বিষয়ে ওএমএস চালের ডিলার মিজানুর রহমান বলেন, 'আমরা ডিলাররা ফুড অফিস থেকে চাল সংগ্রহ করি৷ মাঝে মধ্যেই দেখি ভালো চালের সঙ্গে খারাপ চাল মিশানো পাওয়া যায়৷ সব বস্তা তো আর দেখে নেওয়া যায় না৷ খাদ্য গুদাম যা আমাদের দেয় তাই বিতরণ করি৷ কিন্তু জনগণ নিতে চায় না৷'
আরেক ওএমএস ডিলার মোতালেব হোসেন বলেন, 'ডিলাররা অসহায়৷ কিছু বলতে গেলে যদি ডিলারশিপ বাতিল হয়ে যায় এ ভয়ে কিছু বলতে পারি না৷ খাদ্য গুদাম সার্চ করলে এরকম বহু বস্তা নষ্ট চাল পাওয়া যাবে৷'
চাল উত্তোলন করতে আসা মালিয়াট গ্রামের আকলিমা খাতুন বলেন, 'আমরা গরিব মানুষ৷ পেটের দায়ে এ সরকারি চাল কিনে খাই৷ মাঝেমধ্যেই পচা লাল চাল দেয়, কিন্তু কিছু বলতে পারি না৷ কারণ গরিবের কথা শুনবে কে?'
আরেক ভুক্তভোগী উপজেলার বাটিকামারা এলাকার শাহনাজ বেগম জানান, ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে যখন পচা চাল পাই। তখন আর মনে চায় না যে সরকারি চাল নিতে আসি৷ কিন্তু নিরুপায় হয়ে পেটের দায়ে আবার আসতে হয়৷
এ ব্যাপারে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রণ কর্মকর্তা এরশাদ আলী বলেন, 'খাদ্য গুদামের চালের অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে৷ ভবিষ্যতে নিম্নমানের চাল যাতে গুদামে না আসে তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে৷'
এ বিষয়ে কুমারখালী সরকারি খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি-এলএসডি) জামশেদ ইকবাল বলেন, 'চাল ডিলাররা দেখে শুনে বুঝে নিয়ে যায়৷ চালের মান নিয়ে কোনো অভিযোগ আমার জানা নেই৷'
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) বিতান কুমার মণ্ডল বলেন, 'ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে কয়েক মাস আগে অভিযোগ শুনেছিলাম৷ চালের মান নিয়ে ডিলারদের প্রত্যয়ন দেওয়ার কথা বলা হয়েছিল৷ কিন্তু কোনো ডিলার প্রত্যয়ন দেননি৷'
আগের মতোই সব চলতে থাকলে ওসি-এলএসডির বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি৷
এসএন