সাংসদ রিমনের বিরুদ্ধে জমি দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ
বরগুনা-২ আসনের সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বিরুদ্ধে জমি জবরদখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে।
রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে পাথরঘাটা উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের বাসিন্দা বেলায়েত হোসেন পাথরঘাটা থানায় সাংসদ রিমনের বিরুদ্ধে জমি দখল করে ভবন নির্মাণের অভিযোগ করেন।
বেলায়েত পাথরঘাটা উপজেলার রায়হানপুর ইউনিয়নের পূর্ব লেমুয়া গ্রামে মৃত ইসাহাক আলী মুসল্লীর ছেলে। সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমনের বাড়িও একই ইউনিয়নে।
বেলায়েত হোসেনের দাবি, কাকচিড়া নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি সংলগ্ম এলাকায় তার পৈত্রিক রেকর্ডিয় জমি দখল করে ভবন নির্মাণ করছেন সাংসদ রিমন। এ ছাড়া কাকচিড়া খাদ্যগুদামের চলাচলের পথ বন্ধ করে সেটিও দখলে নিয়ে ভবন নির্মাণ কাজ করছেন বলে জানিয়েছেন খাদ্য বিভাগের জমিদাতারা।
পাথরঘাটা থানায় করা লিখিত অভিযোগে বেলায়েত হোসেন উল্লেখ করেন, তফসিল বর্ণিত বরগুনা জেলার পাথরঘাটা উপজেলার লেমুয়া মৌজার জেএল নং-০৪, এসএ খতিয়ান নং- ৫৪০/১১৬১ দাগ নং- ৩১৭০ এর ৩.৫০ শতাংশ জমি নিয়ে আদালতে বণ্টন মামলা বিচারাধীন।
ওই মামলায় সম্প্রতি জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করেও আদেশ দিয়েছেন আদালত। কিন্তু আদালতের আদেশ অমান্য করে গত ২২ ফেব্রুয়ারি বিকালে স্থানীয় সংসদ সদস্য শওকত হাচানুর রহমান রিমন ও তার অনুসারী কাকচিড়ার বাসিন্দা মাহবুব ওই জমি দখলে নিয়ে মাটি কাটার কাজ শুরু করেন। তিনি এতে বাধা দেওয়ার পর বিষয়টি স্থানীয়ভাবে মিমাংসার কথা হয়।
কিন্তু গত রবিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর একটার দিকে তিনি তার জমিতে গিয়ে দেখতে পান, সেখানে সাংসদ রিমন ও মাহবুব ভবন নির্মাণের কাজ করছেন। এসময় তিনি কাজ করতে নিষেধ করলে সাংসদের অনুসারী মাহবুব হুমকি-ধামকি দিয়ে তাকে সেখান থেকে চলে যেতে বলেন।
বেলায়েত জানান, ওই মৌজার এসএ ৫৪০ খতিয়ানের ৩১৭০ দাগে মোট ১৩ শতাংশ জমির এসএ রেকর্ডিয় মালিক মোট ১০ জন। এর মধ্যে চারজনের ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি আনোয়ার গংদের কেনা। বাকি জমির মধ্যে জালাল আহমেদ শিকদার ও আবু জাফর ৭ দশমিক ২৫ শতাংশের জমির মালিক। তারা জমি বিক্রি করেননি। সাংসদ রিমন কেতাব আলী গংদের দশমিক ৭৫ এক শতাংশ ও ইসমাইল গংয়ের ওয়ারিশদের দশমিক ৬৫ জমির কিনেছেন। অথচ, তিনি দাগের ৭ শতাংশ জমি দখল করে নিয়েছেন।
মঙ্গলবার (১ মার্চ) দুপুরে বেলায়েত হোসেন জানান, তিনি পাথরঘাটা থানায় লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা পুলিশ পাঠিয়ে ওই কাজ বন্ধ করার অনুরোধ করেছেন। সোমবার সকাল পর্যন্ত কাজ বন্ধ রাখলেও দুপুরে মাহবুব ফোন করে বেলায়েত হোসেনকে বলেছেন, ‘ এমপি সাথে টক্কর দিয়ে জমি খাবা, দেকপাআনে তোমারে জমি কেডা খাওয়ায়, তোমার কাগজপত্র থাকলে ঢাকায় গিয়া এমপির লগে কতা কও মিয়া।’
বেলায়েত আরও জানান, ২০০২ সালে জমির শরিকদের মধ্যে বণ্টন নিয়ে আরএস ৩৭৪ খতিয়ানের এসএ চারটি ৫৪০, ১১৬১, ২০৪ ও ৭১৫ এ চারটি খতিয়ানের মোট ৩১৬৯, ৩১৭০, ৩১৭৭, ৩১৭৯ (৩৫৪৮ বাটা দাগ) বিরোধীয় এ পাঁচটি দাগ নিয়ে বণ্টন মামলা চালু হয়। আইনজীবীর বাবা মারা যাওয়ায় মামলাটি পরিচালনায় ব্যাঘাত ঘটে। ২০০৮ সালে পুনরায় মামলা চালু করলে ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজ্ঞ আদালত জমিতে স্থিতাবস্থা জারি করে আদেশ দেন।
বেলায়েত হোসেন বলেন, “১৪ বছর ধরে বণ্টন মামলা চালাইয়া মুই নিঃস্ব হয়ে গেছি মামলায়। মোর হেই জমি এখন এমপিসাব দখল কইর্যা বিল্ডিং গাততেছে। তিনদিন ধইর্যা তারে (এমপিরে) ফোন দিতেছি, ফোন না ধইর্যা ব্লক লিস্ট কইর্যা রাকছে। লাগলে মুই অই জমিতেই মইর্যা যামু, তোমো (তবুও) মোর জাগা ছাড়মু না।”
এদিকে, জমি দখল ও হুমকি দেওয়ার বিষয়ে যোগাযোগ করা হলে মাহবুব বলেন, “আমি যতটুকু জানি, ওই দাগ থেকে এমপি মহোদয় ৭ শতাংশ জমি কিনেছেন। সেখান থেকে তার ৫ শতাংশ জমি দখলে আছে। দখলীয় জমিতেই তিনি কাজ করছেন। ওনাকে হুমকি দেওয়ার প্রশ্নই আসে না। তিনি যদি কাগজপত্রে জমি পান তবে সেটা অন্য কেউ নিতে পারবে না।”
সাংসদ শওকত হাচানুর রহমান রিমন দাবি করেন, যে জমিতে কাজ করছেন, ওই জমির ক্রয়সূত্রে মালিক তিনি।
এ বিষয়ে তিনি বলেন, “৩১৭০নং দাগে মোট ১৩ শতক জমির আমি ৭ শতাংশ জমি রেকর্ডিয় মালিকের ওয়ারিশদের কাছ থেকে কিনেছি। দীর্ঘ ২৫ বছর ধরে ওই জমি আমার দখলে। এখন আমি সেই জমিতে কাজ করছি। একই দাগে বেলায়েত হোসেনের দাবিকৃত জমি ৩ দশমিক ৫০ শতাংশ। আমি তাকে (বেলায়েত হোসেনকে) বলেছি, কাগজপত্র নিয়ে আসেন। কিন্তু তিনি আসেননি। এখানে যদি বেলায়েতের জমি থাকে তবে আমি তাকে বুঝিয়ে দেব।”
এমএসপি