রাণীনগরে তিন মাস ধরে বাঁশের বেড়ায় অবরুদ্ধ তিন পরিবার
নওগাঁর রাণীনগরে চলাচলের রাস্তায় বাঁশের বেড়া দিয়ে তিনটি কৃষক পরিবারকে তিন মাস ধরে অবরুদ্ধ করে রাখার অভিযোগ উঠেছে প্রতিবেশীদের বিরুদ্ধে।
উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের ভেবরা গ্রামের একটি বাড়িতে এ চিত্র দেখা গেছে।
দীর্ঘদিন অবরুদ্ধ অবস্থায় থাকায় চলাচলে ব্যাপক সমস্যা দেখা দিয়েছে। ইউনিয়ন পরিষদে অভিযোগ দিয়েও প্রতিকার না পাওয়ায় চরম বিপাকে পড়েছে পরিবারগুলো। বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
স্থানীয় ও ভুক্তভোগীর পরিবার সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার কালিগ্রাম ইউনিয়নের ভেবরা গ্রামের সোলাইমান আলীর তিন ছেলে কৃষক বাবলু সরদার, আনিছার সরদার ও মুনছুর সরদার তাদের পরিবারসহ দীর্ঘ বছর ধরে পৈত্রিক ভিটাবাড়িতে বসবাস করে আসছেন।
তাদের বাড়ির পাশেই প্রতিবেশী বেলাল হোসেন ও সেকেন্দার আলীর বসতবাড়ি। উভয়ের সীমানা পার্শ্ববর্তী হওয়ায় বেলাল হোসেন ও সেকেন্দার আলীর দুই সীমানার মাঝ বরাবর রাস্তা দিয়ে তারা যাওয়া আসা করতেন। সোলাইমান আলীর পরিবারের সদস্যরাও সব সময় ওই পথেই চলাফেরা করতেন।
গত তিন মাস আগে প্রতিবেশী বেলাল হোসেন এবং সেকেন্দার আলী উভয়ে নিজ নিজ জায়গার সীমানা দখল করে বাঁশের বেড়া দেন। এতে রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সোলাইমান আলীর তিন ছেলের পরিবার অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে।
ভুক্তভোগী বাবলু সরদার, আনিছার সরদার ও মুনছুর সরদার বলেন, “জন্মের পর থেকেই ওই পথ দিয়ে আমরা যাওয়া আসা করি। কিন্তু গত তিন মাস আগে ওই পথে এমনভাবে বাঁশের বেড়া দিয়ে ঘিরে রেখেছে যে, আমাদের চলাফেরা করা খুবই কঠিন হয়ে পড়েছে। রাস্তাটি বন্ধ হয়ে যাওয়ায় গত ৩ মাস ধরে উৎপাদিত কৃষিপণ্য ধান, চালসহ কোনো মালামাল বাড়ি থেকে বের করতে বা বাড়িতে নিয়ে আসতে পারছি না। বাধ্য হয়ে বাড়ির পাশে মাঠের মধ্যে জমির আইল দিয়ে কোনো রকম পায়ে হেঁটে চলাচল করছি।”
ভুক্তভোগীরা আরও বলেন, “এতে আমাদের পরিবারের সদস্যদের চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। বিষয়টি সমাধানে গ্রামবাসীর মাধ্যমে তাদের একাধিকবার বললেও সুরাহা না হওয়ায় গত দেড় মাস আগে ইউপি চেয়ারম্যান বরাবর লিখিত অভিযোগ দিয়েছি। তবে তিনিও এখনো বিষয়টি সমাধান করতে পারেননি।”
এ অবস্থা থেকে মুক্তি পেতে বিষয়টি সমাধানে প্রশাসনের হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
বাঁশের বেড়া দেওয়া বিষয়ে বেলাল হোসেনের স্ত্রী মাসুদা বিবি বলেন, “আমাদের বাড়ির খলিয়ানের ওপর দিয়েই বাবলু ও তার ভাইয়েরা সব সময় চলাচল করতো। অনেক সময় খলিয়ানে ধান শুকানোসহ বিভিন্ন কাজ করতে গেলে তারা খলিয়ানের ওপর দিয়ে হেঁটে যাওয়ায় মাঝে-মধ্যেই তাদের সঙ্গে দ্বন্দ্ব লেগে থাকতো। বিকল্প রাস্তায় চলাচল করতে তাদের একাধিকবার বললেও কর্ণপাত করেনি। তাই উভয়ের মাঝে দ্বন্দ্ব এড়াতে খলিয়ানের পশ্চিম পাশ দিয়ে দেড় ফিট রাস্তা রেখে বাঁশের বেড়া দিয়েছি। কিন্তু এরপরই সেকেন্দার আলী সীমানা ঘেঁষে বেড়া দেওয়ায় বাবলুদের চলাচলের রাস্তা বন্ধ হয়ে গেছে।”
এ বিষয়ে সেকেন্দার আলী বলেন, “চলাচলের রাস্তায় বেলাল হোসেন আগে বাঁশের বেড়া দিয়েছে। এরপর আমরাও নিজেদের সুবিধার্থে আমাদের জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়েছি। এখানে দোষের কিছু নেই।”
কালীগ্রাম ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল ওহাব চাঁন বলেন, “বিষয়টি সমাধানে উভয় পক্ষকে নিয়ে বসেছিলাম। তবে সমাধান করা সম্ভব হয়নি। আশা করছি, দ্রুত বিষয়টির সমাধান হবে।”
এ বিষয়ে রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সুশান্ত কুমার মাহাতো বলেন, “তিনটি কৃষক পরিবারকে অবরুদ্ধ রাখার বিষয়টি জেনেছি। ইতোমধ্যে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যানকে সেটি দ্রুত সমাধান করতে বলা হয়েছে। তিনি সমাধানে ব্যর্থ হলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
এমএসপি