কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের টেন্ডারে অনিয়ম!
কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল ভবন নির্মাণ প্রকল্প নিয়ে পানি কম ঘোলা হয়নি। নতুন করে হাসপাতালের অভ্যন্তরীণ সড়ক, সীমানা প্রাচীর ও ড্রেন নির্মাণ, লিফট ক্রয়সহ পুকুর খননের টেন্ডারে অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে। এ বিষয়ে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন এসএম শামীম নামে একজন ঠিকাদার।
ঠিকাদার শামীমের অভিযোগ, সরকারের অর্থ আত্মসাত করে নিজের আখের গোছাতে নির্বাহী প্রকৌশলী কাজ দিয়েছেন পছন্দের ঠিকাদারকে। সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারের কাজ পাওয়ার কথা থাকলেও বেশিরভাগ ক্ষেত্রে কাজ পেয়েছেন বেশি দরদাতা ঠিকাদাররা। এতে ঠিকাদার লাভবান হলেও সরকারের ক্ষতি হবে কয়েক কোটি টাকা। এ বিষয়ে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন তিনি।
সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা হস্তক্ষেপ করার পরও কুষ্টিয়া মেডিকেলের নির্মাণ কাজ নিয়ে অনিয়মের শেষ নেই।
গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম যোগদানের পর থেকেই অনিয়মের আখড়া গড়ে তুলেছেন বলে জানা গেছে।
বিশেষ করে, কাজ শেষে বিল পাওয়াসহ ঠিকাদারদের জিম্মি করে ঘুষ আদায় করেন তিনি।
এবার মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ভবনে লিফট ক্রয়ের টেন্ডারে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।
সূত্র জানায়, সম্প্রতি এ প্রকল্পের কিছু দরপত্র আহ্বান করা হলেও সেগুলো নিষ্পত্তি করতে সময় লাগে প্রায় চার মাস।
অভিযোগ উঠেছে, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী এ চার মাস সময় নিয়েছেন কেবল তার পছন্দের ঠিকাদারকে কাজ পাইয়ে দেওয়ার জন্য।
জানা গেছে, কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের রাস্তা, ড্রেন নির্মাণ ও পুকুর খননসহ আনুষঙ্গিক কাজের জন্য গত ডিসেম্বরে গণপূর্ত বিভাগ, কুষ্টিয়া ৭ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করে।
এ কাজের জন্য দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। সর্বনিম্ন দরদাতা হয় মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজ। অথচ তাদের বাদ দিয়ে গ্যালিক্সি অ্যাসোসিয়েটসকে কার্যাদেশ দেন নির্বাহী প্রকৌশলী।
নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে এ অনিয়মের অভিযোগ করেন মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজের মালিক এসএম শামীম।
একইভাবে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের সীমানা প্রাচীর নির্মাণ কাজের জন্য ১৯ কোটি টাকার টেন্ডার আহ্বান করা হয়।
দুটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান দরপত্র দাখিল করে। এর মধ্যে সর্বনিম্ন দরদাতা হয় কেএসএসই এসএইচজে (জেভি) নামক ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান।
এ ছাড়া ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্স দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা হয়। দাবি করা ঘুষের টাকা না পেয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দিয়েছেন বলে নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন সর্বনিম্ন দরদাতা প্রতিষ্ঠানটি।
তাদের অভিযোগ, প্রথম সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ পেতে হলে নির্বাহী প্রকৌশলীকে শতকরা প্রায় আড়াই ভাগ টাকা দিতে হবে বলে জানানো হয়। তারা এ টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানালে তাদের বাদ দিয়ে দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতা ইউনুস অ্যান্ড ব্রাদার্সকে কার্যাদেশ দেয়া হয়েছে। এতে কোটি টাকার ওপরে ঘুষ লেনদেন হয়েছে বলে মনে করছে প্রতিষ্ঠানটি।
এ ছাড়া দ্বিতীয় সর্বনিম্ন দরদাতাকে কাজ দেওয়ায় সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে ২০ লাখ টাকার বেশি।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক ঠিকাদার জানান, নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল যোগ দেওয়ার পর থেকে পদে পদে ঘুষ নেন। ঘুষের বিনিময়ে তিনি পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ দিচ্ছেন কিন্তু ভয়ে কেউ কিছু বলতে পারছেন না।
জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বরে কুষ্টিয়া মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল স্থাপন প্রকল্পের লিফট ক্রয়ের দরপত্র আহ্বান করা হয়। তিনটি প্যাকেজের মাধ্যমে টেন্ডার আহ্বান করে গণপূর্ত।
প্রতিটি প্যাকেজে ছয়টি প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নেয়। এর মধ্যে একাডেমিক ভবনের লিফট, হাসপাতাল ভবনের লিফট এবং ওটি আইসিইউ ও সিসিইউ ভবনের লিফট ক্রয়ের দরপত্র রয়েছে। এ তিনটি প্যাকেজেই সর্বনিম্ন কোনো দরদাতা কাজ পাননি।
এসব ক্ষেত্রে প্রায় দুই কোটি টাকার মতো অনিয়ম-দুর্নীতি হয়েছে বলে অভিযোগ সর্বনিম্ন দরদাতা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলোর।
নির্বাহী প্রকৌশলীর বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে মেসার্স শামীম এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী এসএম শামীম জানান, গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ এনে তিনি গণপূর্তের প্রধান প্রকৌশলীর কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। এর বাইরে এ বিষয়ে কোনো কথা বলতে নারাজ তিনি।
এদিকে, কাজের অনিয়ম বিষয়ে জানতে চাইলে গণপূর্তের নির্বাহী প্রকৌশলী জাহিদুল ইসলাম বলেন, “ঠিকাদার শামীম যেসব অভিযোগ করেছেন তা মিথ্যা ও উদ্দেশ্যমূলক। দরপত্রের প্রধান দুটি শর্ত না মানায় তিনি কাজ পাননি। দরপত্র মূল্যায়ন কমিটি প্রতিটি কাজ দেওয়ার আগে সঠিকভাবে যাচাই-বাছাই করেছে। শতভাগ নিয়ম মেনে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। যোগ্য প্রতিষ্ঠানকে কাজ দেওয়া হচ্ছে। এখানে কোনোপ্রকার অনিয়ম হচ্ছে না।”
ঠিকাদাররা কাজ না পাওয়ায় মিথ্যা অভিযোগ করছে বলে জানান তিনি।
এমএসপি