ফেনী জেনারেল হাসপাতাল
অস্ত্রোপচারের তারিখ পাওয়া যায় নিবন্ধনের ৫ মাস পর
ছাগলনাইয়ার শিলুয়া গ্রাম থেকে হার্নিয়ার চিকিৎসা করতে ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালে এসেছেন আজাদ হোসেন। চিকিৎসক বলেছেন, অস্ত্রোপচার করতে হবে। কিন্তু হাসপাতাল থেকে অস্ত্রোপচার করতে তারিখ দেওয়া হয়েছে পাঁচ মাস পর।
চৌদ্দগ্রামের শিলরী গ্রাম থেকে মাথায় টিউমার নিয়ে এসেছেন মিজানুর রহমান। তাকেও চিকিৎসক অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দিয়েছেন। হাসপাতালের সার্জারি বিভাগ থেকে তাকেও তারিখ দেওয়া হয়েছে পাঁচ মাস পর।
রোগযন্ত্রণা নিয়ে অপারেশনের জন্য অপেক্ষা করছেন মিজানুর ও আজাদ। শুধু মিজানুর বা আজাদ নয়, ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালে বিভিন্ন জটিল রোগে প্রায় ১ হাজার ৭০০ রোগীকে অস্ত্রোপচারের জন্য লম্বা সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছে। এ অবস্থায় রোগ যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে কেউ কেউ অতিরিক্ত টাকা খরচ করে বেসরকারি হাসপাতালে ছুটছেন। যাদের সঙ্গতি নেই, তাদের রোগ জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে।
হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, লোকবল সংকট, অপারেশন থিয়েটারের স্বল্পতাসহ নানা কারণে সার্জারি বিভাগে রোগীর সিরিয়াল দীর্ঘ হচ্ছে। প্রতিদিন হাজার হাজার রোগী ফেনী জেলা ছাড়াও নোয়াখালীর সেনবাগ, কোম্পানীগঞ্জ, চট্টগ্রামের মিরসরাই, পার্বত্য চট্টগ্রামের রামগড়, কুমিল্লা জেলার চৌদ্দগ্রাম উপজেলা থেকে ফেনী জেনারেল হাসপাতালে ছুটে আসে। রোগীর এত বিশাল চাপ সহ্য করার মতো চিকিৎসক, অবকাঠামো ও লোকবল ফেনী সদর হাসপাতলে নেই। হাসপাতালটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নীত করা হলেও লোকবল রয়েছে সেই ১০০ শয্যারই।
হাসপাতাল ঘুরে দেখা যায়, প্রতিটি কক্ষ রোগীতে ভরপুর। শুধু সার্জারি বিভাগে গত ২৪ জানুয়ারি পর্যন্ত অপারেশনের রোগীর তালিকায় রয়েছেন এক হাজার ৭৩৮ জন। এসব রোগীকে আগামী আগস্ট মাস পর্যন্ত অপারেশনের তারিখ দিয়ে বাড়তি অপেক্ষা করতে ব্যবস্থাপত্র লিখে দেওয়া হয়েছে। হাসপাতালের নিবন্ধন খাতায় ২০২০ সালের রোগীও রয়েছে।
একাধিক সূত্র জানায়, হাসপাতালে সপ্তাহে ছয় দিন অপারেশন করা হয়। সার্জারি, অর্থোপেডিক, চক্ষু, গাইনি বিভাগের জন্য ভিন্ন ভিন্ন দিন ধার্য রয়েছে। এর মধ্যে সার্জারি বিভাগে দুই দিনে ১৪-১৫টি অপারেশন করা হয়। এখানে সিনিয়র কনসালট্যান্টসহ মাত্র চারজন চিকিৎসক রয়েছেন। অথচ এ বিভাগে গড়ে প্রতি সপ্তাহে ২২-২৩ জন রোগী আসেন অপারেশনের জন্য। এ কারণে চলতি বছরের আগস্ট মাস পর্যন্ত আর কোনো তারিখ খালি নেই। দিন যত যাচ্ছে, এ চাপ আরও বাড়ছে।
অপারেশনের অপেক্ষায় থাকা হার্নিয়া রোগী মিজানুর রহমান জানান, প্রচণ্ড ব্যথার কারণে কোনো কাজ করতে পারছেন না। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ অপারেশনের জন্য জুন মাসের ২৬ তারিখ আসতে বলছে।
আরেক রোগী আজাদ হোসেন জানান, তাকে আগস্ট মাসের শেষ সপ্তাহে তারিখ দেওয়া হয়েছে। এদিকে মাথায় টিউমারটি দিন দিন বড় হচ্ছে। একই অবস্থা অন্যান্য রোগীদেরও।
ফেনী ২৫০ শয্যার জেনারেল হাসপাতালের সার্জারি বিভাগের সিনিয়র কনসালট্যান্ট কামরুজ্জামান বলেন, হাসপাতালে এক হাজার ৭৩৮ রোগী অপারেশনের জন্য অপেক্ষমাণ। সপ্তাহে দুই দিন তিনি অপারেশন থিয়েটার পান। বাকি দিন অন্যান্য বিভাগ অপারেশন করে। এই হিসাবে মাসে আট দিন অপারেশন করেন। এর মধ্যে জটিল রোগ, বিভিন্ন দুর্ঘটনাসহ জরুরি ভিত্তিতে তাৎক্ষণিক কিছু রোগীর অপারেশন করতে হয়। বাকি রোগীদের ব্যবস্থাপত্র দিয়ে বাড়িতেই থাকতে বলা হয়। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য পর্যাপ্ত অপারেশন থিয়েটার, চিকিৎসক, অভিজ্ঞ নার্স ও ওয়ার্ড বয় নিয়োগ দিতে হবে।
এ প্রসঙ্গে ফেনীর সিভিল সার্জন রফিক উস সালেহীন জানান, ফেনীর যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নতির কারণে আশপাশের জেলা থেকে প্রচুর রোগী জেনারেল হাসপাতালে আসেন। জনবল ও অবকাঠামো না বাড়ালে এ সমস্যা দূর করা কঠিন।
ফেনী ২৫০ শয্যা জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. আবুল খায়ের মিয়াজী জানান, জনবল ও অবকাঠামো সংকটের বিষয়ে কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। দ্রুত এ সমস্যার সমাধান হবে বলে আশা করছি।
এসএন