৫ বছর পর খুন ও লাশ গুমের মামলার ভিকটিম জীবিত উদ্ধার
কুষ্টিয়ায় খুন ও লাশ গুমের মামলার ভিকটিম রকিবুজ্জামান রিপনকে (৩০) পাঁচ বছর পর জীবিত উদ্ধার করেছে পিবিআই পুলিশ। মঙ্গলবার (২২ ফেব্রুয়ারি) কুষ্টিয়া পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেষ্টিগেশনের (পিবিআই) পুলিশ সুপার মো. শহীদ আবু সরোয়ার স্বাক্ষরিত এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে সাংবাদিকদের এ তথ্য জানানো হয়।
পুলিশ সুপার শহীদ আবু সরোয়ার জানান, মেহেরপুর জেলার সদর থানাধীন গোভীপুর (দত্তপাড়া) এলাকার মামলার বাদী মো. মনিরুল ইসলামের পুত্র ভিকটিম মো. রকিবুজ্জামান রিপনের (৩০) সঙ্গে মামলার ১ নম্বর বিবাদী মোছা. শ্যামলী খাতুনের বিয়ে হয়। বিয়ের প্রায় ছয় মাস পর হতে ভিকটিম তার শ্বশুর বাড়িতে ঘর জামাই হিসেবে বসবাস শুরু করেন এবং তাদের সংসারে একটি পুত্র সন্তান জন্ম গ্রহণ করে। কিছুদিন পর রিপনের সংসারে দাম্পত্য কলহ শুরু হলে বাদী তার ছেলে রিপনের কোনো খোঁজ-খবর না পাওয়ায় তার ছেলেকে হত্যাপূর্বক লাশ গুম করে ফেলার ধারণার বশবর্তী হয়ে রিপনের স্ত্রী, শ্বশুর, শাশুড়ি এবং চাচা শ্বশুরের বিরুদ্ধে বিজ্ঞ আদালতে মামলা দায়ের করেন। থানা পুলিশ দীর্ঘদিন তদন্ত করে রিপনকে জীবিত অথবা মৃত কোনোভাবেই উদ্ধার করতে না পেরে বিজ্ঞ আদালতে চুড়ান্ত রিপোর্ট দাখিল করেন। পরবর্তীতে বিজ্ঞ আদালত থানা পুলিশের তদন্ত প্রতিবেদন গ্রহণ না করে পুলিশ সুপার, পিবিআই, কুষ্টিয়াকে তদন্ত পূর্বক প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ প্রদান করেন।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে আরো জানানো হয়, পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রধান ও এডিশনাল আইজিপি বনজ কুমার মজুমদার বিপিএম (বার), পিপিএম এর প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধান ও দিক নির্দেশনায় পিবিআই, কুষ্টিয়া জেলার পুলিশ সুপারের নেতৃত্বে পুলিশ পরিদর্শক (নিঃ) মো. মনিরুজ্জামানসহ একটি আভিযানিক দল গত ২০ ফেব্রুয়ারি বিকাল সাড়ে পাঁচটায় গাজীপুর জেলার শ্রীপুর থানাধীন রাজেন্দ্রপুর এলাকায় ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডের সামনে রাস্তার উপর থেকে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ভিকটিম রিপনকে উদ্ধারপূর্বক তার জবানবন্দি গ্রহণের জন্য বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করেন। পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণের বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানানো হয়।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, ভিকটিম রকিবুজ্জামান রিপন (৩০) ২০১৭ সালের ৮ জুলাই তারিখে অভিমান করে পিতা-মাতা, ভাই-বোন, স্ত্রী, পুত্র আত্মীয়-স্বজন ফেলে বাড়ি থেকে নিরুদ্দেশ হন। ভিকটিম মো. রকিবুজ্জামান রিপন আত্মগোপনে ছিলেন। তাকে উদ্ধারপূর্বক জিজ্ঞাসাবাদের এক পর্যায়ে তিনি তার সঠিক নাম পরিচয় প্রকাশ করেন।
জানা যায়, ভিকটিম রিপন কৌশলে মো. শরিফুল ইসলাম নামে ছদ্মনাম ধারণ করে গত ২০২০ সালের ১০ মার্চ গাইবান্ধা জেলার সুন্দরগঞ্জ থানার মনমথ কুঠিপাড়া এলাকার মো. সিরাজুল ইসলামের মেয়ে মোছা. শিমলা আক্তার (২০) এর সঙ্গে জামালপুর জেলার সরিষাবাড়ী থানার পৌরসভা কাজী অফিসে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের ৬ মাস বয়সের একটি পুত্র সন্তান রয়েছে। এ ছাড়া উক্ত ভিকটিম ছদ্মনাম ব্যবহার করে টেকনিশিয়ান (ইলেকট্রিক্যাল) পদে ডার্ড কম্পোজিট টেক্সটাইল লিমিটেডে চাকরি করত মর্মে জানা যায়।
এদিকে দীর্ঘ পাঁচ বছর পর ভিকটিম রিপনকে জীবিত ও সুস্থ অবস্থায় উদ্ধারের এ ঘটনায় তার ও আসামিদের পরিবারে স্বস্তির নিশ্বাস বইতে শুরু করেছে। আসামিরা মিথ্যা, খুন ও লাশ গুমের মামলা থেকে হাঁপ ছেড়ে বেঁচেছে এবং বাদী তার পুত্রকে ফিরে পেয়ে খুশি হয়েছেন।
এসআইএইচ