অবাধ্য সন্তানদের নির্যাতন থেকে বাঁচতে শিল্পপতির আকুতি
নারায়ণগঞ্জে অবাধ্য ৯ সন্তানের নির্যাতন থেকে বাঁচতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন সাইজুদ্দিন মিয়া নামে বৃদ্ধ এক শিল্পপতি।
শনিবার (১৯ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে নিজেকে অসহায় দাবি করে প্রধানমন্ত্রীর কাছে এ আকুতি জানান তিনি।
সংবাদ সম্মেলনে সাইজুদ্দিন মিয়া অসুস্থ থাকায় তার পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন তার দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখি।
সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করা হয়, গত ৮ ডিসেম্বর সাইজুদ্দিনের প্রয়াত প্রথম স্ত্রীর ৩ ছেলে ও ৬ মেয়ে সম্পত্তি লিখে দিতে বলে। তাতে রাজি না হওয়ায় সাইজুদ্দিন, তার দ্বিতীয় স্ত্রী গুলনাহার আক্তার আঁখি এবং দ্বিতীয় সংসারের একমাত্র ছেলে আতিকুল ইসলাম শান্তকে হত্যার উদ্দেশ্যে মারধর করে। বর্তমানে তিনি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন।
ঘটনার বিবরণে বলা হয়, ১৯৮৮ সালে শিল্পপতি সাইজুদ্দিন মিয়ার প্রথম স্ত্রী মারা যাওয়ার পর ১৯৯১ সালে আঁখিকে তিনি বিয়ে করেন। এ সংসারে তার একটি ছেলে আছে।
রূপগঞ্জের কাঞ্চনে সাইজুদ্দিন মিয়ার ‘সাইজুদ্দিন ও শান্ত টেক্সটাইল’ নামে দুটি কাপড়ের মিল আছে। তবে প্রথম পক্ষের ৩ ছেলের কেউই বাবার বাধ্য সন্তান নন। প্রথম পক্ষের সন্তানরা সাইজুদ্দিনের টাকা বিপথে খরচ করেন। বাবার ব্যবসা দেখাশোনা বা তাকে কোনো ধরনের সহযোগিতা করেন না। এ কারণে প্রথম পক্ষের ছেলে-মেয়েদের ওপর সাইজুদ্দিন মিয়ার অভিমান আছে। একই বাউন্ডারির ভেতরে পৃথক বাড়িতে বসবাস করেন সাইজুদ্দিন ও তার প্রথম পক্ষের সন্তানরা।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উল্লেখ করা হয়, সাইজুদ্দিন মিয়ার স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি প্রথম পক্ষের সন্তানদের লিখে দিতে বার বার তাকে হুমকি ও চাপ দেওয়া হচ্ছিল। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর সন্তানদের হুমকির কারণে আদালতে ৭ ধারায় মামলা করেন তিনি।
মামলা করে বাসায় ফেরার পরেই প্রথম পক্ষের ৩ ছেলে রফিকুল ইসলাম, তরিকুল ইসলাম বাবু, শাহজাহান মিয়া; মেয়ে রাহিমা আক্তার ও শাহারা আক্তার ডেইজী এবং ৩ ছেলের স্ত্রীরা মিলে একদল বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে হামলা চালায়।
তারা সাইজুদ্দিন মিয়াকে বেধড়ক মারধর করে। তার দ্বিতীয় স্ত্রী আঁখিকে মারধর করে ডান হাত এবং ছেলে শান্তর পা ভেঙে দেয়। মারধর শেষে তাদের একটি ঘরে বন্দি করে রাখা হয়।
পরে তারা ‘৯৯৯’ এ ফোন দিলে পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। তাদের উদ্ধার করে রূপগঞ্জ উপজেলার ইউএনওর কাছে নিয়ে যায়। সব ঘটনা শুনে ইউএনও তাদের নিরাপদ স্থানে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দেন। এরপর তারা সিদ্ধিরগঞ্জে চলে আসেন। নিরাপত্তার কারণে রূপগঞ্জ থানায় মামলা করতে না পেরে নারায়ণগঞ্জ আদালতে একটি মামলা করেন। কিন্তু মামলাটি যথাযথ ভাবে তদন্ত না করেই রূপগঞ্জ থানার উপ-পরিদর্শক সিরাজ আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। যে কারণে হামলাকারীরা দ্রুত জামিন পেয়ে যান।
পরে আদালতে দাখিলকৃত অভিযোগপত্রের বিরুদ্ধে নারাজি দেন সাইজুদ্দিন মিয়া। নারাজির পরিপ্রেক্ষিতে আদালতে মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।
সাইজুদ্দিন মিয়া সংবাদ সম্মেলনে অভিযোগ করেন, প্রথম পক্ষের সন্তানরা তাকে মারধর করে বাড়ি থেকে বের করে দিয়ে ঘরে থাকা সিন্দুক ভেঙে দলিলপত্র, এনআইডি কার্ড এবং ব্যাংকের চেক বইসহ জরুরি কাগজপত্র নিয়ে যায়। এমনকি দুটি মিলে উৎপাদিত ২ কোটি টাকা মূল্যের কাপড় বাজারে মাত্র ১ কোটি টাকায় বিক্রি করে দেয়।
বর্তমানে অবাধ্য ওই সন্তানদের কব্জায় তার দুটি মিলসহ স্থাবর সম্পত্তিগুলো আছে।
সাইজুদ্দিন মিয়া আরও বলেন, প্রথম পক্ষের সন্তানরা সম্পত্তি বাটোয়ারা করতে কাঞ্চন পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রসূল কলির দ্বারস্থ হন। তিনি আওয়ামী লীগ নেতা কলিকে আশ্বস্ত করেছিলেন যে, জানুয়ারিতে সন্তানদের মধ্যে তার সম্পত্তি বাটোয়ারা করে দেবেন। কিন্তু তার আগেই গত বছরের ডিসেম্বর মাসে তাকে ও তার দ্বিতীয় স্ত্রী এবং দ্বিতীয় স্ত্রীর একমাত্র সন্তান শান্তর ওপর হামলা চালায়।
বাবার ওপর হামলা অভিযোগের বিষয়ে জানতে চেয়ে ফোনে যোগাযোগ করা হয় সাইজুদ্দিন মিয়ার বড় ছেলে রফিকুল ইসলামের সঙ্গে। তবে তিনি কোনো মন্তব্য না করে ফোনকল কেটে দেন।
এমএসপি