দক্ষ কম্পিউটার প্রশিক্ষক বাকপ্রতিবন্ধী এডিসন
দুই বছর আগেও কম্পিউটার চালাতে পারতেন না এডিসন বাড়ৈ। কিন্তু এখন তিনি দক্ষ কম্পিউটার প্রশিক্ষক। নেত্রকোনা শহরের মোক্তারপাড়ার একটি কম্পিউটার প্রশিক্ষণ সেন্টারে প্রশিক্ষক হিসেবে কর্মরত তিনি।
নেত্রকোনা শহরের নাগ্রা এলাকার বাসিন্দা আন্দ্রিয় বাড়ৈয়ের ছেলে এডিসন। এবার শহরের মালনী কারিগরি উচ্চ বিদ্যালয় থেকে জিপিএ-৪.৫০ পেয়ে উত্তীর্ণ এসএসসি পাস করেন।
এডিসনের বাবা আন্দ্রিয় বাড়ৈ বলেন, ১৪ বছরের এডিসন জন্ম থেকেই কথা স্পষ্ট করে বলতে পারে না। গত বছরের ১৪ মার্চ এডিসনকে এক্সেল কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে কম্পিউটার চালানো শিখতে ভর্তি করানো হয়। এক্সেলের পরিচালক সুস্থির সরকার নিজে এডিসনকে কম্পিউটার শেখানোর দায়িত্ব নেন। তিনি খুব যত্নসহকারে কম্পিউটার শেখাতে থাকেন। পরিচালক কিছুদিন পরই বুঝলেন এডিসনের প্রযুক্তিগত জ্ঞান বেশ ভালো, তাই তাকে প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে বেশি সময় রাখতেন।
এডিসনের মা পুস্প বাড়ৈ জলেন, ‘এক্সেল কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের পরিচালকের কাছে আমি সারাজীবন কৃতজ্ঞ থাকব। আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না যে, আমার ছেলে কম্পিউটারে এত ভালো করতে পারবে। ঈশ্বরকে ধন্যবাদ।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে প্রশিক্ষণার্থী মীম বলেন, এডিসন সবচেয়ে আন্তরিক প্রশিক্ষক। সব প্রশিক্ষণার্থী তাকে খুব পছন্দ করে। আমারও তার কাছে শিখতে খুব ভালো লাগে। আমরা তাকে কোনো বিষয়ে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি কখনো রেগে উঠেন না। তার কাছ থেকে আমরা শিখতে পেরে খুব আনন্দিত।
এক্সেলের পরিচালক সুস্থির সরকারক বলেন, কম্পিউটার শেখানোর জন্য তার মাও তার সঙ্গে ভর্তি হয়েছিলেন, যেন ছেলেকে দেখাশোনা করতে পারেন। কিছুদিন পর এডিসন নিজে নিজেই প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে আসতে থাকেন এবং কম্পিউটার শিক্ষার প্রতি বেশ আগ্রহী হয়ে উঠেন। ছয় মাসের কোর্সে ভর্তি হয়ে ৪-৫ মাসেই এডিসন বেসিক কম্পিউটার আয়ত্ব করে নেন। তাকে হার্ডয়্যার সম্পর্কে ধারণা দেওয়া হয়। বর্তমানে তিনি কম্পিউটারের যেকোনো সমস্যা চিহ্নিত করতে পারেন বা প্রয়োজনীয় সফ্টওয়্যার নিজে নিজেই দিতে পারেন। শুধু তাই নয় তার বাবার এনজিওর অফিসিয়াল কম্পিউটার সংক্রান্ত সব কাজ এখন এডিসন নিজেই পরিচালনা করেন। এক্সেল কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রে সাতজন প্রশিক্ষক রয়েছেন। তার মধ্যে বর্তমানে খুব জনপ্রিয় প্রশিক্ষক এডিসন।
এক্সেলের পরিচালক বলেন, এডিসনকে আমি পাইলট প্রোগ্রাম হিসাবে ধরে নিয়ে কাজ করি। এরই মধ্যে তার মতো আরও তিনজন শিক্ষার্থী ভর্তি করিয়েছি। আমি বুঝতে পারলাম, বাক প্রতিবন্ধী কিংবা শারীরিক প্রতিবন্ধী যারা আছেন তাদের টেকনিক্যাল শিক্ষার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা হবে না বরং তারা খুব বেশি ভালো করবে। এডিসনের সব কাজে আমি সন্তুষ্ট। এডিসনকে আমি অনেক ভালোবাসি। তাকে আমি আমার নিজের সন্তানের মতোই দেখি। এ ধরনের যারা আছে তাদের প্রতি খুব বেশি যত্নশীল হওয়া দরকার সবারই। সবাই যদি এগিয়ে আসি তাহলে এ ধরনের প্রতিবন্ধী শিশু-কিশোরদের আমরা সমাজের মুলস্রোতে নিতে পার।
এডিসন বাড়ৈ নিজের ভাষায় ভাব প্রকাশ করে বলেন, ‘আমি এ বছর এসএসসি পাস করেছি। প্রযুক্তি নিয়ে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে অনেক বড় হবার প্রত্যাশা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় স্বপ্ন।’
এসএন