নারী হাজতখানায় শ্রমিক লীগ নেতা তুফান, স্ত্রী-শাশুড়িসহ গ্রেফতার ৫

গ্রেফতার হওয়া তুফান সরকার ও তার স্বজনরা। ছবি: সংগৃহীত
বগুড়ায় আদালতের নারী হাজতখানায় ঢুকে সাজাপ্রাপ্ত আসামি তুফান সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করার অভিযোগে তার স্ত্রী, শাশুড়ি এবং অন্যান্য পরিবারের সদস্যসহ পাঁচজনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। সোমবার (৩ মার্চ) বিকেলে বগুড়া চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে এ ঘটনা ঘটে।
অভিযোগ রয়েছে যে, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) মামলায় ১৩ বছরের কারাদণ্ডপ্রাপ্ত তুফান সরকারকে আদালতের নারী হাজতখানায় তার পরিবারের পাঁচ সদস্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে সুযোগ দেওয়া হয়। এই ঘটনার পর আদালত পুলিশের সহকারী টাউন উপপরিদর্শক (এটিএসআই) জয়নাল আবেদিনকে দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে প্রত্যাহার করে পুলিশ লাইন্সে পাঠানো হয় এবং ঘটনার তদন্তের জন্য একটি তিন সদস্যের কমিটি গঠন করা হয়। তদন্ত কমিটির প্রধান হিসেবে নিযুক্ত হয়েছেন বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) হোসাইন মুহাম্মদ রায়হান।
তুফান সরকার বগুড়া শহর শ্রমিক লীগের আহ্বায়ক ছিলেন। তার বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা রয়েছে। এসব মামলার মধ্যে পাঁচটি হত্যা, ধর্ষণ এবং নারী নির্যাতনসহ গুরুতর অভিযোগ রয়েছে। ২০১৭ সালে তিনি ছাত্রী ধর্ষণ মামলায় গ্রেফতার হন এবং ২০১৯ সালের ৫ আগস্ট থেকে একাধিক হত্যা মামলায় আসামি হওয়ার পর আত্মগোপনে চলে যান। ২০২৪ সালের ২৩ ডিসেম্বর রাতে ডিবি পুলিশ তাকে গ্রেফতার করে।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম মঈনুদ্দিন জানান, আদালতের নারী হাজতখানায় সাজাপ্রাপ্ত তুফান সরকারের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে গিয়ে তার স্ত্রী, শাশুড়ি, শ্যালক এবং অন্যান্য সদস্যদের গ্রেফতার করা হয়েছে। তবে এই ঘটনায় আদালত পুলিশ তাদের বিরুদ্ধে সুনির্দিষ্ট কোনো মামলা দায়ের করেনি। আপাতত তাদের ৫৪ ধারায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হয়েছে।
গ্রেফতার হওয়া পাঁচজনের মধ্যে রয়েছেন- তুফান সরকারের দ্বিতীয় স্ত্রী আইরিন আকতার, শাশুড়ি তাসলিমা বেগম, শ্যালক নয়ন আকন্দ, স্ত্রীর বড় বোন আশা খাতুন এবং আইনজীবীর সহকারী হারুনুর রশিদ।
বগুড়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার সুমন রঞ্জন সরকার জানিয়েছেন, আদালতের নারী হাজতখানায় সাজাপ্রাপ্ত কয়েদির সঙ্গে স্বজনদের সাক্ষাতের বিষয়টি তদন্তের আওতায় আনা হয়েছে। তিনি আরো বলেন, “যদি তদন্তে অন্য কোনো ব্যক্তি জড়িত থাকেন, তবে সুপারিশের ভিত্তিতে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
এ বিষয়ে আদালত ও পুলিশের সূত্রে জানা গেছে, সোমবার দুপুরে তুফান সরকারের বিরুদ্ধে একটি মামলায় সাক্ষ্য গ্রহণের দিন ধার্য ছিল। ওই সময় চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের নারী হাজতখানার দরজা কালো কাপড় দিয়ে ঢেকে দিয়ে তুফান সরকারের সঙ্গে তার পরিবারের সদস্যদের সাক্ষাতের ব্যবস্থা করা হয়। বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর আদালত প্রাঙ্গণে উত্তেজনা দেখা দেয় এবং পরে তুফান সরকারকে দ্রুত প্রিজন ভ্যানে তুলে কারাগারে পাঠানো হয়।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) দায়ের করা ১ কোটি ৫৯ লাখ ৬৮ হাজার ১৮২ টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের মামলায় তুফান সরকারকে গত বছরের ২৭ নভেম্বর ১৩ বছরের কারাদণ্ড দেন বগুড়ার স্পেশাল জজ মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ।
