চট্টগ্রামে ছিনতাই করা গাড়ি দিয়েই ছিনতাই!
এ যেন এক আফ্রিকার মুভির দৃশ্য! দিনের বেলায় থাকে বিশ্রামে। রাত হলেই চার যুবক মিলিত হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজের গাড়ি পার্কিং স্থানে। রাতে বিভিন্ন স্থান ঘুরে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে করে ছিনতাই। একটি ছিনতাই করা প্রাইভেটকার দিয়েই নগরী এবং এর আশপাশে ঘুরে ঘুরে লুটপাট, চাঁদাবাজি, ছিনতাই করে বেড়ায় একদল অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী।
বৃহস্পতিবার (১০ ফেব্রুয়ারি) রাতে এমনই একটি চক্রকে গ্রেপ্তার করে পাঁচলাইশ থানা পুলিশ। এসময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় ছিনতাইয়ে ব্যবহার করা প্রাইভেটকার (চট্টমেট্রো-গ-১১-৩৯৫৬), ১০টি মোবাইল, ১টি ট্যাব, দেশীয় অস্ত্র, চার রাউন্ড কার্তুজ এবং নগদ ৪০ হাজার টাকাসহ বেশ কিছু মালামাল।
গ্রেপ্তার আসামিরা হলেন- বেলাল হোসেন আসলাম (২৭), তানভির ইসলাম রুকন (২৭), মো. সোহেল (৩০) ও কামাল উদ্দিন (২৮)।
পুলিশ জানায়, তাদের সবার নামে বিভিন্ন থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী ও শিশু নির্যাতনের একাধিক মামলা রয়েছে।
চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-কমিশনার (উত্তর) মোখলেছুর রহমান জানান, আসামিরা গত ৫ ফেব্রুয়ারি দুপুরে সীতাকুন্ড যাওয়ার কথা বলে পাহাড়তলী থানাধীন অলংকার মোড় থেকে একটি প্রাইভেটকার ভাড়া করেন। ফৌজদারহাট বায়েজিদ লিংক রোডে আসার পর আসামিরা প্রাইভেটকারের ড্রাইভার ইলিয়াসকে (৩০) জিম্মি করেন। পরে ইলিয়াসের বাবার মোবাইলে ফোন করে প্রাইভটকারটি ছেড়ে দেওয়ার বিনিময়ে ৫০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে ছিনতাইকারীরা।
কিন্তু অল্প সময়ের মধ্যে এত টাকা দেওয়া সম্ভব না হওয়ায় ছিনতাইকারীরা ড্রাইভার ইলিয়াসকে পুরো দিন আটকে রেখে মারধর করে। রাত প্রায় ৮টার সময় অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে চালকের বিকাশ নম্বরের পাসওয়ার্ড জেনে নিয়ে মোবাইল ছিনিয়ে নিয়ে ইলিয়াসকে গাড়ি থেকে নামিয়ে দেয়।
তারপর ছিনতাই করা প্রাইভেটকার দিয়ে তারা নগরীর বিভিন্ন জায়গায় তাদের উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য কার্যক্রম শুরু করে। ছিনতাইয়ে সফলতা পেতে তারা উত্তর চট্টগ্রামের একটি মাজারও জিয়ারত করেন। সেখানে আবার মোটা অংকের একটা মানতও করে ছিনতাইকারীরা।
ছিনতাইকারীরা নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে প্রাইভেটকারটি দিনের বেলায় চট্টগ্রাম মেডিকেলের সামনে পার্কিং করে রাখতো।
গত ৬ ফেব্রুয়ারি বিকালে চট্টগ্রাম নগরীর বায়েজিদ অক্সিজেন কাঁচাবাজারের কাছে একটি মেডিসিন ফার্মেসি থেকে তারা অস্ত্র ঠেকিয়ে নগদ ৭০ হাজার টাকা এবং মোবাইল ফোন ছিনতাই করে। এ বিষয়ে দোকান মালিক বায়েজিদ থানায় একটি মামলাও করেন।
পুলিশ জানায়, মামলার ঘটনা তদন্তকালে বিভিন্ন স্থানে সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে প্রাইভেটকারটি শনাক্ত করা হয়। পরে জানা যায়, কারটি সীতাকুণ্ড এলাকা হতে ছিনতাই করা হয়েছে এবং উক্ত ঘটনায় সীতাকুণ্ড থানায় একটি মামলা হয়েছে। পরবর্তীতে সিসিটিভি ফুটেজ থেকে আসামিদের ছবি নিয়ে পুলিশ অভিযানে নামে।
গোপন সংবাদের ভিত্তিতে ৯ ফেব্রুয়ারি রাতে বায়েজিদ লিংক রোডে অবস্থিত চেকপোস্টে গাড়িটিকে আটক করা হয়। এ সময় ছিনতাইকৃত গাড়িসহ ছিনতাইকারীদের কাছ থেকে অস্ত্র, গুলি, ছুরি জব্দ করা হয়।
পরবর্তীতে তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ছিনতাইকৃত মালামালও উদ্ধার করে পুলিশ।
/এমএসপি