ইতালি যাওয়ার পথে নৌকাডুবিতে ১০ মৃত বাংলাদেশির পরিচয় মিলেছে
ছবিঃ সংগৃহীত
অবৈধভাবে ইতালি যাওয়ার পথে ভূমধ্যসাগরে নৌকাডুবিতে মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার ১০ জনের মৃত্যুর খবর পাওয়া গেছে। নিখোঁজ রয়েছেন আরও চারজন।
বৃহস্পতিবার (৩০ জানুয়ারি) লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলে ভূমধ্যসাগরের উপকূলবর্তী ব্রেগা তীর থেকে বেশ কয়েকজন অভিবাসীর মরদেহ উদ্ধারের কথা জানায় লিবিয়ার বাংলাদেশ দূতাবাস।
নিহতদের মধ্যে ১০ জনের বাড়ি মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলায়। তাদের মৃত্যুর খবরে বাড়িতে চলছে শোকের মাতম। এ ঘটনায় জড়িত দালালদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানিয়েছেন নিহতদের স্বজন ও এলাকাবাসী।
নিহতরা হলেন- রাজৈর উপজেলার পশ্চিম স্বরমঙ্গল গ্রামের চা বিক্রেতা হাসান হাওলাদারের ছেলে রোমান ওরফে টিটু হাওলাদার, গোবিন্দপুরের বাসিন্দা আক্কাস আলী আকনের ছেলে আবুল বাশার আকন, সুন্দিকুড়ি গ্রামের নীল রতন বাড়ৈ, সাগর বাড়ৈ, একই গ্রামের মহেন্দ্র নাথ বিশ্বাসের ছেলে সাগর বিশ্বাস, গোবিন্দপুরের ফিরোজ শেখের ছেলে ইনসান শেখ ও আশিষ কীর্তনীয়া, বৌলগ্রামের নৃপেন কীর্ত্তনীয়ার ছেলে অমল কীর্ত্তনীয়া, একই গ্রামের চিত্ত সরদারের ছেলে অনুপ সরদার, শাখারপাড় গ্রামের সজিব মোল্লা, সাতবাড়িয়ার রাজীব এবং মুজুন্দারকান্দি গ্রামের ছেলে সুজন হাওলাদার। সবার বয়স ২০-৪০ বছরের মধ্যে।
নিখোঁজরা হলেন- ওপেন কীর্তনীয়া ছেলে নিপুণ কীর্তনীয়া (২২), আতাহার বেপারীর ছেলে কুদ্দুস বেপারী (৩৩), মন্নান হাওলাদারের ছেলে অহিদুল হাওলাদার (২৫) ও ইসরাফিল বেপারীর ছেলে মারুফ বেপারী (১৬)।
ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করেন, ভিটেমাটি বিক্রি করার পাশাপাশি চড়া সুদ ও ব্যাংক লোনে টাকা এনে দালালদের হাতে লাখ লাখ টাকা তুলে দিয়েও শেষরক্ষা হলো না এই যুবকদের। এ ঘটনার মূলহোতা রাজৈর হরিদাসদি গ্রামের স্বপন মাতুব্বর, মজুমদারকান্দি গ্রামের মনির হাওলাদার ও ফরিদপুরের ভাঙ্গা উপজেলার আলীপুরের রফিক দালাল ও একই উপজেলার বাবলাতলা গ্রামের রফিক সিকদার বলে জানা গেছে।
স্থানীয় মুরাদ হাওলাদার জানান, রাজৈর উপজেলার হায়দার শেখের ছেলে দালাল মনির শেখ (৫০) আগে দর্জির কাজ করতেন। এমনকি নিহতের বড় ভাই মাসুদ মাতুব্বরের ছেলে আকাশ মাতুব্বরকে ইতালি পাঠিয়ে মামলা মীমাংসা করে। তারপর থেকেই সে ইতালি নেওয়ার দালালি করছে। আর প্রতারণা করে অনেক জমিজমার মালিক হয়েছে।
নিহত আবুল বাশারের বাবা আক্কাস আলী আকন বলেন, মনির হাওলাদার ও স্বপন মজুমদার এই দুই দালাল ২৮ লাখ নিয়েছে আমার ছেলেকে ইতালি পাঠানোর কথা বলে। কিন্তু আমার ছেলের এমন মৃত্যু কিছুতেই মেনে নিতে পারছি না। এই দালালদের কঠোর বিচার চাই।
টিটু হাওলদারের চাচাতো ভাই রেজাউল হাওলাদার বলেন, দালালে লোভ দেখাইয়া আমার ভাইকে এভাবে মৃত্যুর মুখে ফেলে দেবে কখনোই তা ভাবতে পারিনি। দালালের কঠিন বিচার চাই। আর আমার ভাইয়ের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে সরকারের কাছে অনুরোধ করছি।
মাদারীপুরের রাজৈর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মাসুদ খান বলেন, ইতালি যাবার সময় লিবিয়ায় রাজৈর উপজেলার ১০ যুবক মারা গেছেন বলে বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে। নিহতদের পরিবার থেকে লিখিত অভিযোগ পেলে দালালদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এছাড়া প্রতিনিয়ত ওয়ারেন্টভুক্ত দালালদের গ্রেপ্তার করে আদালতে সোপর্দ করা হয়।
রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাহফুজুল হক বলেন, খবরটি শুনেছি। নিহতদের মরদেহ দেশে আনার জন্য সব ধরনের সহযোগিতা করা হবে।
মাদারীপুরের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট শাহ্ মোহাম্মদ সজীব বলেন, নিহত ১০ জনের মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হবে। দূতাবাসের মাধ্যমে ব্যবস্থা গ্রহণে কাজ শুরু করেছে জেলা প্রশাসন।