গরুর খামার থেকে বছরে ২ কোটি টাকা আয়
বেনাপোলের সীমান্তবর্তী গ্রাম পুটখালির সফল এক খামারির নাম নাছির উদ্দিন। ১৫ বছর ধরে তিল তিল করে গড়ে তুলেছেন স্বপ্নের গরুর খামার। তিনি ২০১৩ সালে নেপালি জাতের মাত্র পাঁচটি গরু নিয়ে শুরু করে ছোট্ট একটি গরুর খামার। পরবর্তীকালে স্থানীয় একটি এনজিও থেকে ৩ লাখ টাকা ঋণ ও নিজস্ব কিছু পুঁজি নিয়ে আরও ৫টি গরু কেনেন। ১০টি গরু থেকে পর্যায়ক্রমে বংশ বৃদ্ধির মাধ্যমে আজকের এ অবস্থায় এসে পৌঁছেছে খামারটি।
এখন শুধুই সামনের দিকে এগিয়ে যাওয়া। অক্লান্ত পরিশ্রম করছেন তিনি। পরিশ্রমই তাকে সাফল্যের সুবাতাস দিয়েছে। বর্তমানে বছরে আয়ের পরিমাণ প্রায় দুই কোটি টাকা।
জানা যায়, বর্তমানে তার খামারে ১২০টি দুধের গাভী রয়েছে। এসব গাভী থেকে প্রতিদিন ৫০০-৬০০ লিটার পর্যন্ত দুধ পেয়ে থাকেন। প্রতিদিন বিভিন্ন দুগ্ধ প্রক্রিয়াজাত কোম্পানি ও মিষ্টির দোকানে এসব দুধ সরবরাহ করে থাকেন।
বর্তমানে তার খামারে ১২০টি গাভি, ৫৫০টি ষাঁড় ও ১২০টি বাছুর রয়েছে। যার আনুমানিক বাজার মূল্য প্রায় ১ কোটি টাকা। গরুর ডেইরি খামারের পাশাপাশি রয়েছে একটি ছাগলের খামার। যেখানে দেশি ও উন্নত জাতের প্রায় ১২৫টি ছাগল রয়েছে।
বর্তমানে তার খামারে কাজ করছেন ৮৫ জন শ্রমিক। তাদের ৮ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা পর্যন্ত বেতন দিচ্ছেন। শ্রমিকরা জানান, এখানে কাজ করতে পেরে তারা অনেক খুশি।
খামারি মো. নাছির উদ্দিন জানান, প্রত্যেক বছরে খরচ বাদ দিয়ে দেড় থেকে দুই কোটি টাকা আয় হয়ে থাকে। গরুর খাদ্যের দাম ও দুধের বাজার ওঠা-নামার সাথে আয়ও ওঠা-নামা করে থাকে।
তিনি আরও জানান, তার খামারের সফলতার পেছনে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার সহযোগিতা রয়েছে। খামার করার পর থেকে আজ পর্যন্ত বড় ধরনের তেমন কোনো সমস্যা হয়নি।
তিনি মনে করেন, বাংলাদেশে বেকারত্ব দূর করতে অবলম্বন হতে পারে গরুর খামার। সরকারের সহযোগিতা পাওয়া গেলে এ খাতে ৩০ শতাংশ বেকারত্ব দূর করা সম্ভব।
পুটখালি গ্রামের আল আমিন জানান, আত্মনির্ভরশীল নাছির এখন এলাকাবাসী ও পরিবারের কাছে শ্রদ্ধা-ভালোবাসার মানুষ। তাকে অনুসরণ করে এলাকায় এখন অনেকেই গরু, ছাগল, হাঁস-মুরগির খামার করছেন। বিশেষ করে সীমান্তবর্তী অঞ্চলের মানুষ নাছিরের সাফল্যে স্বাবলম্বী হওয়ার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন।
পুটখালি ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান মো. হাদিউজ্জামান জানান, আমি দেখেছি নাছির উদ্দিন অনেক কষ্ট করে আজকে এই জায়গায় এসেছে। নাছিরকে দেখে ইউনিয়নের অনেক নারী-পুরুষ ছোট খাট গরুর খামার করে ভাগ্যের পরিবর্তন করেছেন।
যশোর জেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের কর্মকতা ড. রাশেদুল হক জানান, নাছিরের খামার এ অঞ্চলের সবচেয়ে বড় গরুর খামার। তিনি একজন দক্ষ খামারি। তাকে দেখে গ্রামের অন্যান্যরা গরু পালনে উৎসাহিত হচ্ছেন। তার খামারের গরু জেলার চাহিদা মিটিয়ে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সরবরাহ করা হচ্ছে। আমরা ক্ষতিগ্রস্ত খামারীদের সরকারিভাবে প্রণোদনা দেওয়ার চেষ্টা করছি।
টিটি/