পুলিশের গুলি কেড়ে নিয়েছে সাকিবের ক্রিকেটার হওয়ার স্বপ্ন
ছবি: সংগৃহীত
নীলফামারীর সৈয়দপুরের ছেলে সাকিব মাহমুদুল্লাহ। স্বপ্ন ছিল বড় ক্রিকেটার হওয়ার, লাল সবুজের জার্সি গায়ে জড়ানোর। কিন্তু সেই স্বপ্ন শেষ হয়ে গিয়েছে জুলাই অভ্যুত্থানে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশের ছোড়া ছররা গুলির আঘাতে একটি চোখের আলো হারিয়েছেন তিনি, ডান চোখটিও এখন নষ্ট হওয়ার পথে। তাছাড়া, জাতীয় দলের খেলোয়াড় হওয়ার সেই স্বপ্নও এখন তার কাছে অধরা। এখন সরকারি সহায়তায় হলেও চোখের আলোটুকু ফিরে পেতে চান সাকিব।
সৈয়দপুরে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে গত ১৮ জুলাই বন্ধুদের সঙ্গে মিছিলে অংশ নিয়ে গুলিবিদ্ধ হন সাকিব। সহযোদ্ধারা তাঁকে উদ্ধার করে প্রথমে নীলফামারী ১০০ শয্যা হাসপাতালে ভর্তি করেন। এর পর রংপুর ও ঢাকার একটি বেসরকারি চক্ষু ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা নিয়েছেন। কিন্তু সাকিবের বাম চোখে আর আলো ফিরে আসেনি। এখন ডান চোখেও ভালো দেখতে পারছেন না।
রংপুর কারমাইকেল কলেজের অনার্স ব্যবস্থাপনা বিভাগের প্রথম বর্ষের ছাত্র সাকিব মাহমুদুল্লাহর বাড়ি সৈয়দপুর পৌর শহরের কাজীপাড়া মহল্লায়। তার বাবা আকবর আলী ছিলেন একজন মাংস ব্যবসায়ী এবং মা আছিয়া খাতুন গৃহিণী। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট সাকিব।
ছোটবেলা থেকে তার ক্রিকেটার হওয়ার ইচ্ছা ছিল। তাই লেখাপড়ার পাশাপাশি নিয়মিত ক্রিকেট অনুশীলন করতেন সাকিব। বিভিন্ন মাঠে ক্রিকেটের আসরে সুনামও কুড়িয়েছেন তিনি। এজন্য বিভিন্ন ক্রিকেট টিম থেকে ডাক পড়ত সাকিবের। এভাবে কিছু আয়-রোজগার শুরু হয় তার। কিন্তু বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গিয়ে পুলিশের ছররা গুলির আঘাতে এলোমেলো হয়ে যায় সাকিবের দীর্ঘদিনের লালিত স্বপ্ন।
সাকিব জানান, জেলার প্রথম বিভাগে বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে খেলতেন তিনি। বাবার মৃত্যুর পর বড় দুই ভাই সংসারের হাল ধরেন। এর মধ্যে তিনি ক্রিকেট খেলেই নিজের পড়ার খরচ চালাতেন। এখন ক্রিকেট খেলতে না পারলে হয়ত শিক্ষাজীবনের ইতি টানতে হবে।
জানা গেছে, বাংলাদেশ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক সঞ্জয় কুমার দাস অস্ত্রোপচার করে সাকিবের চোখের ভেতরে থাকা গুলি বের করতে সমর্থ হলেও রেটিনার অংশটি বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। দেশে তাঁর চিকিৎসা হবে না। ভারতের চেন্নাইতে নিলে হয়ত সাকিবের বাম চোখে আলো ফিরতে পারে। এখনও সাকিবের মাথা থেকে ৮টি, নাকে ১টি ও চোয়ালে বিঁধে থাকা ১টি গুলি বের করা যায়নি।
কাঁদতে কাঁদতে সাকিবের মা আছিয়া খাতুন বলেন, এত রক্ত, এত জীবনের বিনিময়ে যে স্বাধীন দেশ হলো, সেই দেশ আজ আমার ছেলে দেখতে পারছে না। আর দেখতে পারবে কিনা, তারও নিশ্চয়তা নেই। তিনি বর্তমান সরকারের কাছে সাকিবের জন্য একটা সরকারি চাকরির জন্য আকুতি জানান।
উল্লেখ্য, সৈয়দপুরের ইউএনও নূরে-আলম সিদ্দিকী বলেন, ছাত্র আন্দোলনের আহতদের তালিকা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে। এ ব্যাপারে এখনও কোনো নির্দেশনা আসেনি। সাকিবের বিষয়টি কেউ জানায়নি। তবে পরিবারের পক্ষ থেকে জানালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।