ইউএনওর অফিস সহকারীর ১০ কোটি টাকার বাগানবাড়ি
১০ কোটি টাকার বাগানবাড়ি (ইনসটে: আব্দুল বারেক)। ছবি: সংগৃহীত
১৯০ শতাংশ জমিতে দ্বিতল ভবনসহ দৃষ্টিনন্দন বাগানবাড়ি বানিয়ে মানিকগঞ্জে আলোচনার জন্ম দিয়েছেন তৃতীয় শ্রেণির এক সরকারি কর্মচারী। নাম আব্দুল বারেক। সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী তিনি। তিনি কোটি কোটি টাকা খরচা করে বাগানবাড়ি বানিয়ে সেটির নাম দিয়েছেন ‘ক্ষণিকের নীড়’। ছোটপদে চাকরির অর্জিত টাকা দিয়ে এই আলিশান প্রাসাদ নির্মাণ করা নিয়ে এলাকায় প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, সদর উপজেলার উকিয়ারা গ্রামের ইয়াছিন আলীর ছেলে আব্দুল বারেক। বাবা-মায়ের পারিবারিক কলহে তিনি ছোটবেলায় পড়াশোনা করেছেন সাটুরিয়া উপজেলার বালিয়াটি এতিমখানায়। বাবার সঙ্গে তার মায়ের বিচ্ছেদের পর দিয়ারা গোলড়া গ্রামে নানার বাড়ির পক্ষ থেকে ১৮ শতাংশ জমিতে তার মাকে দেয়া হয়েছিল একটি বাড়ি। ১৯৮৮ সালে আব্দুল বারেক দৌলতপুর ম্যাজিস্ট্রেট কোর্টে যোগ দেন সার্টিফিকেট সহকারী হিসেবে। এরপর তিনি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে চাকরি করেছেন। অবসরের সন্ধিক্ষণে এসে তিনি মানিকগঞ্জ সদর উপজেলায় নির্বাহী অফিসারের অফিস সহকারী হিসেবে কর্মরত আছেন।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সদর উপজেলার জাগীর ইউনিয়নের দিয়ারা গোলড়া গ্রামে ১ একর ৯০ শতাংশের জমি ও স্থাপনাসহ ওই বাগানবাড়ির বাজারমূল্য কমপক্ষে ১০ কোটি টাকা। এছাড়া তার নামে-বেনামে কোটি কোটি টাকার সম্পদ রয়েছে বলে জানা গেছে। তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারী সামান্য চাকরি করে এই অঢেল সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন এর সঠিক তদন্ত দাবি করেছেন এলাকাবাসী।
আব্দুল বারেকের মামা জালাল উদ্দিন জানান, সাড়ে তিন বিঘা জমিসহ বারেক ও তার মাকে নিয়ে এসে জালাল উদ্দিন তার নিজ এলাকায় ১৮ শতাংশ জমির ওপর একটি টিনের ঘর তৈরি করে দেন এবং বারেককে সাটুরিয়ার একটি এতিমখানায় রেখে পড়াশোনা করার ব্যবস্থা করে দেন।
তবে কিছুদিন পর পৈতৃক সূত্রে পাওয়া সাড়ে তিন বিঘা জমি বিক্রি করে দেন। সেই বারেক বাটোয়ারা মামলা দিয়ে তাদেরই হয়রানি করেছেন। এখন তিনি বিশাল বাগানবাড়ির মালিক।
দিয়ারা গ্রামের ফুলচাঁন জানান, বারেক তাদের এলাকায় যখন আসেন তখন মামার বাড়ির দেয়া বাড়ি ছাড়া কিছুই ছিল না তার। এতিমখানা থেকে পড়াশোনা করে তিনি ডিসি অফিসে ছোট চাকরি করতেন। মানুষের অর্থসম্পদ আত্মসাৎ ও দুর্নীতি করে তিনি এখন কোটি কোটি টাকার ধনসম্পদের মালিক হয়েছেন।
স্থানীয় আব্দুস ছাত্তার জানান, আব্দুল বারেক অবৈধভাবে জমি হাতিয়ে নেয়াসহ বিভিন্ন দুর্নীতির মাধ্যমে সম্পদের পাহাড় গড়েছেন। তিনি এই চাকরির বেতনের টাকা দিয়ে সংসার চালানোর খরচ নির্বাহের পাশাপাশি লাখ লাখ টাকা দিয়ে পাঁচ মেয়েকে ঢাকায় পড়াশোনা করিয়েছেন। তৃতীয় শ্রেণির এই কর্মচারীর বেতন কত সেখানে ১০ কোটি টাকার বাগানবাড়িসহ অঢেল সম্পদের মালিক কীভাবে হলেন এ বিষয়ে সঠিক তদন্ত হওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
দিয়ারা গোলড়ার শরীফ জানান, বারেক ডিসি অফিসসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় কেরানি থাকা অবস্থায় প্রশাসনের ছত্রছায়ায় নানা দুর্নীতি করেছেন। ১ একর ৯০ শতাংশের ওপর বিশাল বাগানবাড়ি করেছেন। যা মানিকগঞ্জের অন্য এমপি-মন্ত্রীদেরও নেই। কত টাকা উপার্জন করলে এই ধরনের এই বাড়ি নির্মাণ করা সম্ভব তা সহজেই অনুমেয়। বিষয়টি খতিয়ে দেখার জন্য বর্তমান সরকারের বিশেষ দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
আব্দুল বারেক দাবি করেন, তার বিষয়ে যেসব অভিযোগ উঠেছে তা সত্য নয়। তিনি মানিকগঞ্জ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়সহ বিভিন্ন উপজেলায় নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ে অফিস সহকারী পদে সততার সঙ্গে চাকরি করেছেন। তার সম্পদের বিবরণী জমা দেয়া আছে।
মানিকগঞ্জ সদর উপজেলা নির্বাহী অফিসার লিটন ঢালী গণমাধ্যমকে জানান, আব্দুল বারেক সম্প্রতি তাদের এখানে যোগদান করেছেন। কোনো দপ্তরে এ বিষয়ে অভিযোগ হলে তাদের তদন্ত কাজে সার্বিক সহযোগিতা করা হবে। তিনি যে বেতন পান তা দিয়ে ১০ কোটি টাকার সম্পদ করা সম্ভব না। তবে অনেকেরই পারিবারিক সম্পদ থাকতে পারে। এ বিষয়ে কোনো অভিযোগ পেলে তদন্তসাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।