অসময়ের বৃষ্টিতে লালমনিরহাটে আলু-ভাটায় ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি
শীত মৌসুমের শেষ দিকে হঠাৎ বৃষ্টিতে সীমান্তবর্তী জেলা লালমনিরহাটের আলু চাষি ও ইটভাটা মালিকদের ব্যাপক ক্ষয়-ক্ষতি হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দিবাগত রাত থেকে শনিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সকাল পর্যন্ত বৃষ্টি হয়। ফলে লালমনিরহাট জেলার ৬ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমি পানিতে নিমজ্জিত হয়েছে।
এদিকে, লালমনিরহাট গোটা জেলার ৩৬টি ভাটার কাঁচা ও শুকনো ইট পানিতে ভিজে নষ্ট হয়েছে।
ইটভাটার মালিকেরা বলছেন, এভাবে যদি আরও কয়েকদিন বৃষ্টি চলতে থাকে, তাহলে ভাটা চালু রাখা যাবে না।
অন্যদিকে, আলু চাষিরা বলছেন, এমনিতে বাজারে আলুর দাম কম। এর মধ্যে মাঘ মাসে হঠাৎ বৃষ্টি আলু চাষিদের সবকিছু নষ্ট করে দিয়েছে।
জেলায় কিছু দিনের মধ্যে শুরু হবে আলু তোলার ব্যস্ততা। তাই চাষিরা এখন আলু নিয়ে চিন্তায় পড়েছেন। আলুর ভালো দাম না পেলে কৃষকেরা এ পেশা থেকে বিমুখ হয়ে পড়বেন- এমনটাই মনে করছেন কৃষিসংশ্লিষ্ট।
সরেজমিন দেখা গেছে, সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর, বড়বাড়ি, কুলাঘাট, মোগলহাটসহ ৯টি ইউনিয়নের আলুর জমিতে পানি থইথই করছে। এবার চড়া দামে সার ও বীজ কিনে আলু চাষ করছেন চাষিরা। তা ছাড়া তেলের দাম বাড়ায় নতুন করে বেড়েছে জমিতে হাল-চাষের খরচ। এত কিছুর পরও বাম্পার ফলনের আশায় আলু রোপণ করেছেন কৃষকেরা। কিন্তু শীতকালে হঠাৎ অনাবৃষ্টি তাদের সব আশা নষ্ট করে ফেলেছে।
সদর উপজেলার মহেন্দ্রনগর ইউনিয়নের মফিজুল্ল্যাহ বলেন, ‘এবার আলু চাষে আমাদের মতো চাষিদের খরচ অনেক বেশি হয়েছে। কেননা, ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে এবার সার ও বীজ কিনতে হয়েছে চড়া দামে। তেলের দাম বাড়ায় অন্যান্য খরচ বেশি পড়েছে। এ মৌসুমে আমি ৭ বিঘা জমিতে আলু চাষ করেছি। এবারে আমার প্রতি বিঘায় খরচ পড়েছে ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা। কিন্তু যখন আলু তোলার সময় ঘনিয়ে এসেছে ঠিক সেই সময় হঠাৎ বৃষ্টির ফলে আলুর জমিতে পানি জমে থইথই করছে পানি। এতে আলু জমিতে পচে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।’
আদিতমারী উপজেলার আলু চাষি মনোয়ারুল হক বলেন, ‘এ বছর ৪ বিঘা জমিতে আলু রোপণ করেছি। গত বছরের তুলনায় এবারে বিঘাপ্রতি ৫ হাজার থেকে ৬ হাজার টাকা বেশি খরচ গুনতে হয়েছে। এত কিছুর পরও দুই টাকা লাভের আশায় আলু রোপণ করেছি।’
এদিকে বাজারে আলুর দামও কম। এই দামে খরচ ওঠানো সম্ভব নয়। দাম কম হওয়ায় কৃষকেরা এ পেশা থেকে বিমুখ হয়ে পড়বেন বলে জানান এই কৃষক।
লালমনিরহাট জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক শামীম আশরাফ জানান, এ বছর জেলায় ১০ হাজার হেক্টর জমিতে আলুর লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। হঠাৎ প্রবল বৃষ্টিতে জেলার ৬ হাজার ৪৩২ হেক্টর জমি পুরোপুরি নিমজ্জিত এবং বাকি জমিগুলো আংশিক নিমজ্জিত আছে। জমি থেকে পানি সরানোর পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে কৃষকদের।
এদিকে, আদিতমারী উপজেলার সাপ্টিবাড়ি ইউনিয়নের টেপাটারি ভাটাপাড়া এলাকার এলএমবি ও মেসার্স সান ব্রিকস ভাটায় দেখা যায়, রোদে শুকাতে দেওয়া কাঁচা ইটগুলো বৃষ্টির পানিতে ডুবে আছে।
এ ছাড়া পোড়ানোর আগে শুকানো সারিবদ্ধ করে রাখা ইটগুলোও বৃষ্টির পানিতে গলে নষ্ট হয়ে গেছে।
এলএমবি ব্রিকসের ম্যানেজার মো. শেফাউল ইসলাম দুলাল বলেন, গত দুইদিনের এ বৃষ্টিতে আমাদের ১০ লাখ শুকানো ইটের ক্ষতি হয়েছে। যার মূল্য প্রায় ২০-২৫ লাখ টাকা।
মেসার্স সান ব্রিকসের মালিক এমদাদুল হক এন্তা বলেন, ‘বৃষ্টির কারণে আমার ভাটার ১৫-২০ লাখ টাকা ক্ষতি হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আবহাওয়া যদি এমন চলতে থাকে তাহলে এ বছর আর ভাটা চালু করা সম্ভব হবে না।’
লালমনিরহাট জেলা ইটভাটা মালিক সমিতির সভাপতি আব্দুল হাকিম বলেন, ‘বৃষ্টির পানিতে জেলার ৩৬টি ভাটারই ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়লার দাম আগের চেয়ে দ্বিগুণ, আর শ্রমিক ও মাটির দামও বেশি। এত কিছুর মধ্যেও ভাটাগুলো আমরা সচল রেখেছিলাম। কিন্তু হঠাৎ বৃষ্টি হওয়ায় আমাদের ভাটা মালিকদের অনেক ক্ষতি হয়ে গেল। এ ক্ষতি অনেক ভাটা মালিক পুষিয়ে উঠতে পারবে না। এ কারণেই হয়তো তাদের ভাটাগুলো বন্ধ হয়ে যেতে পারে।
জেড/এমএসপি