টাকার বিনিময়ে ইউপি সদস্য প্রার্থীকে জিতিয়ে দিতে নির্বাচন কর্মকর্তার চুক্তি
রংপুরের মিঠাপুকুরে ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) একজন সদস্য প্রার্থীকে জয়ী করতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে গোপন চুক্তির অভিযোগ পাওয়া গেছে। এ সংক্রান্ত একটি অডিও ক্লিপ ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে।
সেখানে সাড়ে ৪ লাখ টাকার বিনিময়ে রফিকুল ইসলাম নামে এক ইউপি সদস্য (মেম্বার) প্রার্থীকে জয়ী করতে নানা পরিকল্পনার প্রায় ১৩ মিনিটের একটি অডিও ক্লিপ ফেসবুকে শোনা যাচ্ছে।
বৃহস্পতিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) দুপুরে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য অডিও ক্লিপ সংযুক্ত করে প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন সচিবালয়ে চিঠি দিয়েছেন রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা এসএম সাহাতাব হোসেন।
ফেসবুকে গোপন চুক্তি অডিও ভাইরাল হওয়া তথ্যে জানা যায়, এ নির্বাচনে বালারহাট ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য প্রার্থী রফিকুল ইসলামকে জয়ী করে দেওয়ার জন্য সাড়ে ৪ লাখ টাকার চুক্তি করেন উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল হান্নান।
ওই অডিও ক্লিপের কথোপকথনে শোনা যায়, রফিকুল ইসলাম নামে ওই প্রার্থীকে জয়ী করতে ভোটকেন্দ্র থেকে প্রতিপক্ষের লোকজনকে বের করে দেওয়া এবং ভোটের আগেই অন্তত ৩০০ ব্যালট পেপার সরবরাহের বিনিময়ে টাকা চেয়েছেন ওই নির্বাচন কর্মকর্তা।
অডিও রেকর্ডে নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল হান্নান ওই ইউপি সদস্যকে বুঝান, ‘যেহেতু নির্বাচন করতে গেলে প্রতিদিনই ১০ হাজার করে টাকা ব্যয় হবে, তাতে ৫ থেকে ১০ লাখ টাকা খরচ হবে। তারপরও নির্বাচিত হওয়ার কোনো গ্যারান্টি নেই। তাই সেটি না করে তার সঙ্গে ৫ লাখ টাকার চুক্তি করলে তিনি যেভাবেই হোক জিতিয়ে দেবেন।
এ ক্ষেত্রে তিনি গ্যারান্টি হিসেবে জেতাতে না পারলে টাকা ফেরত দেওয়ার প্রতিশ্রুতিও দেন।
নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান প্রিজাইডিং অফিসার, সহকারী প্রিজাইডিং অফিসার ও পুলিশ প্রশাসনের সহযোগিতায় তাকে জিতিয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি ও আশ্বাস দেন।
এ ব্যাপারে মিঠাপুকুরের বালারহাট ইউনিয়নের ৪ নম্বর ওয়ার্ডের ফুটবল প্রতীকের সদস্য পদপ্রার্থী রফিকুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি পুরো ঘটনাটি স্বীকার করেন।
অভিযুক্ত মিঠাপুকুর উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নান বলেন, ‘এসব শোনার সময় নাই। অডিও ক্লিপ নিয়ে নির্বাচন কমিশনারের কাছে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেন।’
রংপুর আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা জিএম সাব উদ্দিন বলেন, ‘গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদ এবং ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া অডিও সংযুক্ত করে নির্বাচন কর্মকর্তা আবদুল হান্নানকে প্রত্যাহার এবং তার বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য আমরা একটি চিঠি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচন সচিবালয়ে পাঠিয়েছি ‘
‘আশা করছি, দ্রুত সময়ের মধ্যে নির্বাচন সচিবালয় থেকে আমরা সিদ্ধান্ত পাবো। সেই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী নির্বাচন কর্মকর্তা আব্দুল হান্নানের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
তিনি আরও জানান, নির্বাচন কমিশন তাকে প্রত্যাহারের আদেশ দিলে সেখানে নতুন করে আরেকজন নির্বাচন অফিসার সংযুক্ত করা হবে। আইনানুগ এবং অবাধ নির্বাচনের জন্য আমরা বদ্ধপরিকর। কোনো কর্মকর্তার একক দায় নির্বাচন কমিশন নেবে না।
প্রসঙ্গত, রংপুরের মিঠাপুকুর উপজেলার ১৭টি ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন আগামী ৭ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত হবে।
জিএমএ/এমএসপি