আর্থিক সংকটে কাঙ্খিত বেচা-কেনা হয়নি চুয়াডাঙ্গার পশুহাট গুলোতে
ছবি: ঢাকাপ্রকাশ
কোরবানী ঈদে এবার আর্থিক সংকটে কাঙ্খিত বেচা-কেনা হয়নি চুয়াডাঙ্গা জেলার পশুহাট গুলোতে। ক্রেতা বিক্রেতার পদচারণায় চুয়াডাঙ্গা জেলার পশু হাট গুলো মুখরিত ছিল। প্রত্যেকটি হাটে যথেষ্ট ক্রেতা-বিক্রেতা সমাগম দেখা গেছে। তবে বিক্রির জন্য কোরবানী পশু আনা হলেও সেগুলো সব বিক্রি হয়নি। অতিরিক্ত দাম চাওয়ার কারনে আর্থিক সঙ্কটে থাকা ক্রেতারা পশু কিনতে না পেরে ফিরে গেছেন অনেকেই।
তাছাড়া অসহ্য তাপমাত্রা ও ভ্যাপসা গরমে হাটে যাওয়া থেকে বিরত ছিল অনেক ক্রেতা। তারা ছোট ছোট গ্রাম্য খামারীদের কাছ থেকে তাদের পছন্দের পশু কিনতে বেশী আগ্রহী ছিল। এখনও শহরের পথে পথে বিক্রি হচ্ছে খাসী ছাগল। সেখান থেকে দরদাম করে অনেকে খাসী ছাগল কিনছে।
চুয়াডাঙ্গার ঐতিহ্যবাহী পশুহাট দামুড়হুদা উপজেলার ডুগডুগী, জীবননগর উপজেলার শিয়ালমারী, আলমডাঙ্গা উপজেলার পৌর পশুহাট (এটি ঢাকার গাবতলী পশুহাটের পরের স্থানে) ও সদর উপজেলার ভুলটিয়া পশুহাটে বিক্রির জন্য গরু, ছাগল, মোষ ও ভেড়া পালনকারীরা সেগুলো নিয়ে গেলেও অতিরিক্ত দাম চাওয়ায় অনেক পশু বিক্রি হচ্ছেনা। সবচেয়ে বেশী বিপাকে পড়েছে গরু মোটাতাজাকরণ খামারীরা। মোটা গরুর চাহিদা থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে ক্রেতারা। সে কারনে এবার অধিক লোকসানের সম্মোখীন হতে হবে ওই সকল খামারীদের। এছাড়া পশু বিক্রেতারা খেয়ালখুশি মত তাদের পালিত পশুর দাম চাওয়ায় ক্রেতারা বিরক্ত হয়ে পশু না কিনে হাট থেকে ফিরে যাচ্ছে।অপরিকল্পিতভাবে বে-হিসেবী খরচ করে নিজেদের খেয়ালখুশি মত দাম চাওয়ায় মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে ক্রেতারা।
হাট ঘুরে দেখা গেছে দেশের বিভিন্ন জায়গা থেকে পাইকারী ও খুচরা ক্রেতারা ট্রাক বোঝায় করে পশু কিনে নিয়ে যাচ্ছে। তীব্র গরমের মধ্যে বিক্রেতারা গরু নিয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ক্রেতাদের সঙ্গে দরকষাকষি করছে। স্থানীয় খামারী ও বিক্রেতারা অল্প লাভে গরু বিক্রি করে দিচ্ছে। দেশী মাঝারি গড়নের গরু গুলোর চাহিদা বেশী দেখা গেছে। গতবারের তুলনায় এবার গরুর দাম কিছুটা বেশী। ক্রেতারা বলছে, তাদের বাজেট ছাড়া ১০-২০ হাজার টাকা বেশী দিয়ে গরু কিনতে হচ্ছে। এদিকে বিক্রেতারা বলছে, গরু লালনপালন করার খরচ অনেক বেড়ে যাওয়ায় দাম কিছুটা বেশী চাওয়া হচ্ছে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী রহিম মিয়া বলেন, বিভিন্ন গ্রাম থেকে তিনি ৮টি গরু কিনেছে। ৫টি গরু ইতিমধ্যেই বিক্রি হয়েছে। সীমিত লাভে বাকী গরু গুলো বিক্রি করে দেবে।
গরু ব্যবসায়ী আলী ব্যাপারী বলেন, ৫টি গরু নিয়ে সকাল থেকে তিনি শিয়ালমারী হাটে দাঁড়িয়ে রয়েছে। সুবিধামত দাম না পাওয়ার কারনে একটি গরুও তিনি বিক্রি করতে পারেনি। বড় ব্যাপারীরা গরু কিনে নিয়ে আগেই ঢাকায় চলে গেছে, যার কারনে হাটে বড় ক্রেতা কিছুটা কম।
কোরবানীর গরু কিনতে আসা জোবায়ের আলম বলেন, গরু কিনে রাখার জায়গা নেই। যার কারনে আগেভাগে গরু কিনতে এসেছি। গরু পছন্দ হয়েছে দামদর করে একটি গরু নিয়ে নেবো।
পাইকারী ক্রেতা ইউনুস ব্যাপারী বলেন, দুইটি ট্রাকে আনুমানিক ২০টি গরু কিনে ঢাকাতে নিয়ে যাবো। ১২টি গরু কিনতে পেরেছি। আর ৮টি গরু কেনার চেষ্টা করছি।
চুয়াডাঙ্গা শহরের মুসলিমপাড়ার বন্ধন সমাজ উন্নয়ন সংস্থার সদস্য সাইফুল ইসলাম কনক জানান, এ প্রতিষ্ঠানে তারা ৪০টি গরু পালন করেছে। এ পর্যন্ত ১৫টি গরু বিক্রি করা গেছে। চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার ভুলটিয়ায় শনিবার (১৫ জুন) সর্বশেষ হাট বসবে। ওই হাটে গরু গুলো বিক্রি না করতে পারলে তাদের ১০ লাখ টাকা লোকসান হবে।
চুয়াডাঙ্গার আলমডাঙ্গা উপজেলার জেহালা গ্রামের চৌধুরী এগ্রো খামারের স্বত্ত্বাধিকারী রাকিব চৌধুরী বলেন, তাদের খামারে ২৫০টি গরু কোরবানীর জন্য তৈরী করা হয়েছে। এরই মধ্যে ১০০টি গরু বিক্রি হয়ে গেছে বাকী ১৫০টি গরু বিক্রির অপেক্ষায় আছে। এ গরু গুলো বিক্রি না হলে মোটা অংকের লোকসান হবে বলে তিনি জানান।
চুয়াডাঙ্গা জেলা ভারপ্রাপ্ত প্রাণীসম্পদ কর্মকর্তা ডা.মোস্তাফিজুর রহমান জানান, চুয়াডাঙ্গা জেলায় ছোট-বড় মিলিয়ে ১০ হাজার ৯১৭ টি খামার রয়েছে। এর মধ্যে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলায় ২ হাজার ৬৭৬ টি, আলমডাঙ্গা উপজেলায় ৩ হাজার ৫৯৯ টি, দামুড়হুদা উপজেলায় ১ হাজার ৯২৮ টি এবং জীবননগর উপজেলায় ২ হাজার ৭১৪ টি। এসব খামারে কোরবানী উপলক্ষে ২ লাখ ১১ হাজার ৮৭৯ টি পশু রয়েছে। এর মধ্যে গরু ৫৪ হাজার ৮৯১টি, মোষ ১৬০টি, ছাগল ১ লাখ ৫২ হাজার ৮৯৬টি, ভেড়া ৩ হাজার ৯২৫টি এবং অন্যান্য ৭টি। এবার জেলায় কোরবানীর পশুর চাহিদা রয়েছে ১ লাখ ৫৮ হাজার ৮৫৬ টি। সে হিসাবে স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ৫৩ হাজার ২৩টি কোরবানীযোগ্য পশু উদ্বৃত্ত থাকবে।