হাসপাতাল তো নয় যেন ফুলের বাগিচা!
নওগাঁ জেলার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সগুলোতে চিকিৎসাসেবা ও রক্ষণাবেক্ষণের দিক দিয়ে যেখানে বেহাল অবস্থা। সেখানে সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স চোখে পড়ার মতো ব্যতিক্রম। দেখে মনে হয়, হাসপাতাল তো নয়, যেন ফুলের বাগিচা।
এলাকাবাসীর স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে ১৯৮২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় সাপাহার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। ১৯৮৮ সালে ৩১ শয্যা বিশিষ্ট ভবন নির্মিত হয়। পরবর্তীতে ৫০ শয্যা বিশিষ্ট শিশুবান্ধব হাসপাতাল নামে পরিচিতি লাভ করে। ধারাবাহিকতায় বিভিন্ন উন্নয়নের মাঝে স্থান পেয়েছে হাসপাতালের এ ফুল বাগিচা।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সাপাহার স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশেই দেখা মেলে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাস্তা। দুই পাশে নানা প্রকার ফুলের গাছ। মূল ভবনের মাঝে বিস্তৃত এলাকাজুড়ে সুসজ্জিত বাগিচা। গাছে গাছে ফুটে আছে লাল, নীল, হলুদ রঙ-বেরঙের ফুল। এমন দৃশ্য যেকারো মন কাড়বে।
একটু সামনে এগিয়ে গেলে চোখে পড়ে বনজ ও ওষুধি গাছের একটি বাগান। পাশেই শান বাঁধানো দৃষ্টিনন্দন পুকুর ঘাট। পুকুরের পানিতে ভাসছে জাতীয় ফুল শাপলা। পুকুরের অপর প্রান্তে দৃষ্টি দিতেই চোখে পড়বে কয়েকটি দোলনা। যেখানে শিশুরা মনের আনন্দে দোল খাচ্ছে।
একদিকে টবে সাজানো পাতাবাহার। একই টবে বপন করা হয়েছে নানা রকম শাক-পাতার গাছ।
একদিকে যেমন সৌন্দর্য ছড়াচ্ছে অপরদিকে স্বাস্থ্যসম্মত শাক-পাতাও পাওয়া যাচ্ছে। এ যেন এক ব্যতিক্রমী উদ্যোগ।
স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের দুইতলায় আছে শিশু কর্নার। চিকিৎসা নিতে আসা রোগীর সঙ্গে থাকা শিশুদের বিনোদনের জন্য নানান খেলনা দিয়ে সাজানো হয়েছে শিশু কর্নারটি।
হাসপাতালের ভেতরে আগতদের জন্য গাড়ি রাখার সুবিধার্থে আছে সাদৃশ্যপূর্ণ একটি গ্যারেজ। এখানে নিরাপদে গাড়ি রেখে চিকিৎসা নিতে পারে সাধারণ রোগীরা।
এ উপজেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে চিকিৎসা নিতে আসেন রোগীরা। নিরাপদ চিকিৎসাসেবা পাওয়ায় অনেকে ফুলবাগিচার সঙ্গে মেতে ওঠেন সেলফিতে।
শুধু তাই নয়, নেট দুনিয়ায় হাসপাতালের ছবিগুলো ছড়িয়ে পড়ায় বিভিন্ন এলাকা থেকে দর্শনার্থীরাও ছুটে আসেন ফুল বাগিচার সান্নিধ্য পেতে।
হাসপাতালের আউটডোরে চিকিৎসা নিতে আসা রোগী শরিফুল ইসলাম বলেন, 'এ হাসপাতালে প্রবেশ করলেই রোগ অর্ধেক সেরে যায়। হাসপাতালের পরিবেশ ও ফুল-ফলের গাছ দেখে সত্যিই খুব মুগ্ধ হই। এরকম পরিবেশ দেশের প্রতিটি হাসপাতালে থাকা দরকার।'
ছেলের চিকিৎসা নিতে আসা আসাদুল ইসলাম বলেন, 'মফস্বল এলাকায় হাসপাতালের দৃশ্য যে এতো সুন্দর হতে পারে তা অকল্পনীয়। আমি আমার ছেলের চিকিৎসা নেওয়ার পরে তাকে পুরো হাসপাতাল ঘুরে দেখালাম। সুন্দর পরিবেশে সময় কাটানোর পর তার অসুস্থতা অনেকটাই কমে গেছে।'
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এতসব ব্যতিক্রমী উদ্যোগ নিয়েছেন উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ রুহুল আমিন ও তার টিম। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের ফল আজকের এ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মুহাম্মদ রুহুল আমিন ঢাকাপ্রকাশকে বলেন, ‘হাসপাতালে আসার পর থেকে দেখি অনেক জিনিসের অভাব। কিছু জায়গা অব্যবহৃত হয়ে পড়ে আছে। আমি সেই জায়গাগুলো লোক লাগিয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে ফুলের গাছ লাগানোসহ একটা সুন্দর পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করেছি। বর্তমানে হাসপাতালের চিকিৎসাসেবা থেকে শুরু করে বাইরের সব দৃশ্য সর্বস্তরের মানুষের নজর কেড়েছে। আমাদের দেখে অনেক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এ ধরনের উদ্যোগ নিয়েছে।’ এ উদ্যোগের পেছনে তিনি তার টিমকেও ধন্যবাদ জানান।
এসআর/এমএসপি