ফুলগাজীর বদরপুরে শত একর জমি অনাবাদি
২ বছরেই অকেজো ৬০ লাখ টাকার স্লুইস গেট
ফেনীর ফুলগাজী উপজেলার মুন্সীরহাট ইউনিয়নের বদরপুর এলাকায় কৃষকের সেচ সুবিধায় স্লুইস গেট নির্মাণ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। কিন্তু নির্মাণের দুই বছরেই ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ের প্রকল্পটির বেহাল অবস্থা হয়ে পড়েছে। ফলে শুষ্ক মৌসুমে সেচের অভাবে শত একর জমি অনাবাদী পড়ে থাকায় কৃষকদের মাঝে ক্ষোভ ও দুশ্চিন্তা বিরাজ করছে। এ প্রকল্পের ঠিকাদার স্বয়ং স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) চেয়ারম্যান নুরুল আমিন।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ভারত থেকে নেমে আসা পানি দিয়েই বদরপুর ও আশপাশের এলাকায় কৃষি নির্ভরতা। প্রতিবছর শত শত একর জমি আবাদ হয় এ এলাকায়। কৃষকদের সুবিধার্থে ২০১৯-২০২০ অর্থ বছরে বদরপুর মৌজার তৈতোয়াছড়া খালের ওপর বড় আকারের হাইড্রোলিক স্ট্রাকচার (স্লুইচগেইট) নির্মাণ করে বিএডিসি। ক্ষুদ্রসেচ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় প্রায় ৬০ লাখ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মাণ করে চেয়ারম্যান নুরুল আমিনের মালিকীয় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স রিয়া এন্টারপ্রাইজ।
শনিবার (২৯ জানুয়ারি) সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, স্লুইস গেটের উভয়পাশে মাটি সরে যাওয়ায় গার্ডওয়াল দেবে গেছে। বোরো আবাদ মৌসুমে গেট বন্ধ থাকার কথা থাকলেও খোলা রয়েছে। বিভিন্ন জায়গায় মাটিভর্তি বস্তা দেয়ায় খালের পানিতে ভেসে গেছে। ফলে আশপাশের শত শত একর জমি অনাবাদি পড়ে আছে। বীজতলা তৈরি করলেও সেটি জমিতেই নষ্ট হওয়ার উপক্রম হয়েছে। ইতোমধ্যে অনেক জমিতে বীজতলা লালচে হতে দেখা গেছে। তৎসংলগ্ন স্থানে ভারত সীমান্তের কাছেই পাম্প বসিয়ে জমিতে সেচের ব্যবস্থা করেছেন এক কৃষক। আরেক কৃষক মনির আহম্মদ সবজি ক্ষেতের পরিচর্যা করছেন।
মনির আহম্মদ জানান, ৩ থেকে ৪ হাজার টাকার বিভিন্ন ধরনের সবজির চারা রোপন করেছেন। শুধু তাই নয়, প্রতি মৌসুমে বর্গা চাষ করে ধান রোপন করলেও এবার তা করতে পারছি না।
দিদার হোসেন নামের এক প্রবাসী জানান, নিম্নমানের কাজ করায় স্লুইস গেটটি কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। ফলে প্রায় ৩২০ শতক জমিতে চাষাবাদ হয়নি।
স্থানীয় ইউপি সদস্য আবুল কাশেম বলেন, ‘বদরপুর এলাকায় চলতি বোরো মৌসুমে প্রায় ১০০ একর জমি অনাবাদি রয়েছে। পানি না পাওয়ায় আমি নিজেও ২৪০ শতক জায়গায় বোরো আবাদ করতে পারিনি।
স্থানীয় বাসিন্দা উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক একরাম পাটোয়ারী বলেন, 'সরকার স্লুইস গেট নির্মাণ করলেও কৃষকদের কোনো কাজে আসছে না। স্থানীয় এলাকাবাসী কৃষি নির্ভরশীল হওয়ায় গত তিনবছর ধরে দারুণ ক্ষতির শিকার হচ্ছেন। একইভাবে আমার পরিবারের ২০০ শতকের বেশি জমিতে চাষাবাদ হচ্ছে না।’
মুন্সীরহাট ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল আমিন বদরপুর এলাকায় কৃষি জমি অনাবাদি ও স্লুইস গেট নির্মাণে অনিয়ম প্রসঙ্গে জানতে চাইলে তিনি এড়িয়ে যান।
ফুলগাজী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান আবদুল আলিম মজুমদার বলেন, ‘গত তিনবছর আগেও কৃষকরা ভালোভাবেই কৃষি কাজ করতে পারতেন। তাদের সুবিধার জন্য বিএডিসি স্লুইস গেট করে দিলেও অসুবিধা বেশি হয়েছে। এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে বিএডিসি এমনকি পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।
ফেনীস্থ বিএডিসির সহকারী প্রকৌশলী কামরুল হাসান বলেন, ‘বিষয়টি নজরে আসায় পরিদর্শন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। তারা দ্রুত স্লুইস গেট এলাকা পরিদর্শন করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।’
এএম/এমএসপি